অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত শুরু

jhinaigatite addokher birodde ovijuggerশেরপুরের ঝিনাইগাতী মহিলা আদর্শ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মুহাম্মদ খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়ম, নিয়োগ ও সনদ বাণিজ্য, ম্যানেজিং কমিটি গঠনে স্বজনপ্রীতিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবেল মাহমুদ এ তদন্ত কাজ শুরু করেন।

সম্প্রতি স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক, দুদক ও ময়মনসিংহের মাধ্যমিক উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালকের কাছে ওই প্রতিষ্ঠানটিরই দুই শিক্ষক অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুবের নির্দেশে ইউএনও রুবেল মাহমুদ এ তদন্ত কাজ শুরু করেছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, সকালে ইউএনও রুবেল মাহমুদ কলেজের শিক্ষক মিলানায়তনে কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সাবেক ও বর্তমান সভাপতি, সদস্য, অধ্যক্ষ, শিক্ষক, কর্মচারীদের সঙ্গে অভিযোগের বিষয়ে কথা বলেন। এসময় কলেজে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজ, প্রতিষ্ঠানটির প্রাক্তন ও বর্তমান অল্পসংখ্যক শিক্ষার্থী, সাংবাদিকসহ অধ্যক্ষের আত্মীয় স্বজন উপস্থিত ছিলেন।

অভিযেগকারী কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক পি আর মুহম্মদ রাহুল বলেন, তিনি ২০১২ সালে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করে কলেজের ডিগ্রি শাখায় ইংরেজির প্রভাষক হিসেবে যোগ দিয়েছেন। গত আট বছর ধরে কোনো বেতন ছাড়াই শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছেন তিনি। তাছাড়া কলেজের পরিচালনা পর্ষদে শিক্ষক প্রতিনিধি এবং জাতীয় নির্বাচনে প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্বও পালন করেছেন। গত ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে এমপিও হওয়ার পর তাকে অধ্যক্ষ নিজের বাড়িতে ডেকে নিয়ে যান। এমপিওর তালিকায় নাম তুলতে চাইলে উপরের অফিসে ১৫ লাখ টাকা দিতে হবে বলে জানান তিনি। কিন্তু অধ্যক্ষের এ প্রস্তাব তিনি নাকচ করায় টাকার বিনিময়ে অন্যজনকে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে।

দর্শন বিভাগের প্রভাষক যমুনা খাতুন বলেন, গত মার্চ মাস থেকে তিনি মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছেন। এরই মধ্যে তিনি জানতে পেরেছেন, ফুলপুর উপজেলার কাতুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে অধ্যক্ষ দর্শন বিভাগে চাকরি দিয়েছেন। তিনি ২০১৫ সাল থেকে কলেজে পড়াচ্ছেন। অথচ অন্য একজন এখন কলেজের শিক্ষক! এ ব্যাপারে তিনি তদন্ত করে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম বাদশা সাংবাদিকদের বলেন, এ কলেজের অধ্যক্ষ খলিলুর রহমান একজন নিয়োগ বাণিজ্যকারী, জালজালিয়াতিকারী, তার স্ত্রী এইচএসসি পাশ অথচ তাকে প্রভাষক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। শিক্ষক রাহুল ও যমুনা নিয়োগ পরীক্ষায় পাশ করার পরে তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্ত তাদের নাম এমপিওভুক্ত না করে টাকার বিনিময়ে অন্য দুইজনের নাম অন্তভুক্ত করা হয়েছে। তিনি ওই অধ্যক্ষের অনিয়মের জন্য দ্রæত শাস্তির দাবি জানান।

তদন্তকারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবেল মাহমুদ বলেন, জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশে তদন্ত কাজ শুরু করেছি। অভিযোগকারী দুই শিক্ষক ও অধ্যক্ষের ব্যাপারে আজ কলেজের অন্য শিক্ষকদের কাছে লিখিত বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। পরিচালনা পর্ষদের সাবেক ও বর্তমান সভাপতিদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের লিখিত বক্তব্য চাওয়া হয়েছে। লিখিত বক্তব্য পেলেই জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে সমস্ত কাগজপত্রসহ প্রাপ্ত তথ্য পাঠানো হবে। পরে জেলা প্রশাসক মহোদয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম আব্দুলাহেল ওয়ারেজ নাইম বলেন, অভিযাগ প্রমাণিত হলে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে তদন্ত সাপেক্ষে অধ্যক্ষের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন শেরপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য প্রকৌশলী ফজলুল হক চাঁন।

Share this post

scroll to top