অগ্নিগর্ভ ত্রিপুরায় সেনাবাহিনী মোতায়েন, গুয়াহাটিতে কারফিউ

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রতিবাদে বিক্ষোভের আগুনে জ্বলছে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলো। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বুধবার সন্ধ্যায় ত্রিপুরায় ইতোমধ্যে দুই কলাম সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি আসামে এক কলাম জওয়ানকে মোতায়েনের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া আসামের বিভিন্ন এলাকায় ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় আধা-সেনাবাহিনী টহল দিচ্ছে। আসামের একাধিক জেলায় মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। গুয়াহাটিতে জারি হয়েছে কারফিউ।

বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রতিবাদে গত কয়েকদিন থেকে আসামে সহিংস বিক্ষোভ চলছে। এই উত্তপ্ত আবহাওয়ার মধ্যে এদিন রাজ্যের আরো বেশ কিছু এলাকা থেকে সহিংসতার ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। দিসপুরে জনতা ভবনের কাছে বাসে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। যার জেরে পরিস্থিতি আরো অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে।

রাজধানী গুয়াহাটি থেকেও ব্যাপক বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে। রাস্তায় রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে চলে বিক্ষোভ। বিক্ষোভকারীদের ঠেকাতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। করা হয় লাঠিচার্জ। এই পরিস্থিতিতে আর কোনো ঝুঁকি নিতে চায় না প্রশাসন। সন্ধ্যা নামার পরে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে শহরে ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে । পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে বলে জানানো হয়েছে।

এদিন সকালে জোড়হাট, গোলাঘাট, নগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। সেই সময় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে আটকে পড়ায় মৃত্যু হয় দু’মাসের এক শিশুর। যার জেরে সন্ধ্যা ৭টা থেকে টানা ২৪ ঘণ্টা তিনসুকিয়া, ধীমাজি, ডিব্রুগড়, চড়াইদেউ, শিবসাগর, জোরহাট, গোলাঘাট, কামরুপ (মেট্রো) এবং কামরুপ এবংলখিমপুর জেলায় মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রেখেছে প্রশাসন। এ ছাড়া ডিব্রুগড়ে সমস্ত মদের দোকান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে।

মঙ্গলবার বিক্ষোভকারীদের রোষের মুখে পড়েন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোওয়াল। গুয়াহাটির বিজেপি সাংসদ কুইন ওঝার বাড়িতেও ভাঙচুর চালিয়ে বাড়ির উঠোনেই তার কুশপুতুল পোড়ায় জনতা। বহু মানুষ উলঙ্গ হয়েও রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছে মানুষ।

শুধু অসম নয়, ত্রিপুরা, মণিপুর ও অরুণাচলেও চলছে বিক্ষোভ, মিছিল। ছাত্রদের নেতৃত্বে মিছিলে হাঁটেন বহু মানুষ। বিক্ষোভের জেরে অসমে আগামী ৪৮ ঘণ্টা মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা ও এসএমএস পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে বিপ্লব দেব সরকার। বুধবার রাজ্যে নেমেছে দুই কলাম সেনাবাহিনী।

ত্রিপুরা সরকারের পক্ষ থেকে এক চিঠিতে বলা হয়েছে, পরিস্থিতির নিরিখে মঙ্গলবার দুপুর দুটো থেকে এসএমএস ও মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করা হচ্ছে। প্রেস মেসেজের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম লাগু হবে। যদিও মুখে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব দাবি করেছেন, রাজ্যে বনধের কোনো প্রভাবই পড়েনি। রাজ্যের মানুষের উদ্দেশে তার বার্তা, ত্রিপুরার আদিবাসীরা ভারতীয় নাগরিকত্ব পাবেন এবং এই বিলের ফলে তাদের কোনো ক্ষতি হবে না। তবে পরিস্থিতি যে মোটেই সরকারের জন্য নিশ্চিন্ত হওয়ার নয়, তা সরকারের নির্দেশেই স্পষ্ট।

সূত্র : এই সময়

Share this post

scroll to top