৩৯ বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কিন্তু পদবঞ্চিত ৮৩৬০ চিকিৎসকের ৬৪ জেলা ভ্রমণকাহিনী (পর্ব ৩)

এদিকে এক দল যখন বরিশাল ঘুরে ক্লান্ত ঐদিকে আরেকটি দল রংপুরের জেলায় জেলায় ঘুরপাক খাচ্ছে। অলরেডি কাজ করা শুরু করে দিয়েছেন পদ সৃজনের জন্য! এবং আমাদের মুভমেন্ট কন্টিনিউ করার ব্যাপারে উতসাহ ও প্রদান করেন!!

দিনাজপুরে আমরা গেছি শুনে স্যার কাল বিলম্ব না করে আমাদের ডেকে নেন।।স্যার আমাদেরকে জানান তিনি এই নোটিশ বিষয়ে অবগত।।এবং তিনি সব উপজেলায় ইতিমধ্যে চিঠি পাঠিয়েছেন যার ফিরতি উত্তর তিনি কালকের মাঝে পাবেন।।তিনি নিজে অর্গানোগ্রাম একে আমাদের দেখান যে কোন পদ এ উনি কত জন চেয়েছেন। নতুন অনেক পদ এর কথা উনি উল্লেখ করেছেন।।।উনি বলেছেন ৫০ সিট এর উপজেলায় উনি ২০ জন এবং ৩১ সিটের ক্ষেত্রে ১৫ জন ডাক্তার এর পদ উনি উল্লেখ করেছেন নিজের চিঠিতে।।সাথে সদর এবং সিভিলসার্জন অফিসেও নতুন পদ এর কথাও উল্লেখ আছে।উনি বলেন উনার চাকুরী চলাকালীন ১০ টা পদ ও যদি উনি তৈরী করতে পারেন,তবে এটাই হবে উনার চাকুরী জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য!

৩৯ বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কিন্তু পদবঞ্চিত ৮৩৬০ চিকিৎসকের ৬৪ জেলা ভ্রমণকাহিনী


৩৯ বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কিন্তু পদবঞ্চিত ৮৩৬০ চিকিৎসকের ৬৪ জেলা ভ্রমণকাহিনী

ঠাকুরগাঁও ও গাইবান্ধাতে গিয়ে জানা গেল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ১০০০০ চিকিৎসক একত্রে নিয়োগ দিলেও শূণ্য পদ পূরণ হবেনা সমগ্র দেশের হিসাবে সংকট এতটাই প্রকট!। বলেন যে এখনো অনেক পদ খালি, পদ খালি না এটা কে বলছে। তারা আরেকটা বিষয় সম্পর্কে জানান পদ সৃজন করা অনেক সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। পদ সৃজন করার জন্য প্রথম ডকুমেন্টের যে তথ্যগুলো চাওয়া হয়েছে। এটা পূরণ করে জমা দেওয়া অনেক কঠিন একটা কাজ , প্রতিটা তথ্যের জন্য অনেক কাগজ সংগ্রহ করতে হয় । সেটার জন্য অনেকদিন সময় দরকার। সরকারের পক্ষ থেকে যদি অনেক সহজ করে দেওয়া হতো অপশন গুলো তাহলে তারা সহজে পূরণ করে পাঠাতে পারতেন। বিএমএ র সহযোগিতা কামনা করেন তারা। মন্ত্রনালয়ের সর্বশেষ নোটিস সম্পর্কে অবগত আছেন! বলেন আমাদের কে নিলে স্বাস্থ্য ব্যাবস্থার ভাল বৈ মন্দ হবেনা।

৩৯ বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কিন্তু পদবঞ্চিত ৮৩৬০ চিকিৎসকের ৬৪ জেলা ভ্রমণকাহিনী


৩৯ বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কিন্তু পদবঞ্চিত ৮৩৬০ চিকিৎসকের ৬৪ জেলা ভ্রমণকাহিনী

লালমনিরহাট গিয়ে সৌভাগযক্রমে সব কনসালটেন্টকে একত্রে পেয়ে যাই আমরা। তারা নতুন পদ সৃজনে খুব আন্তরিক বুঝতে পারি।

পণ্চগড় গেলে বললেন যে তিনি কাজ করবেন পদ সৃজনের বিষয়ে, যদিও এটাও বললেন যে পদ সৃজনটা আসলে তাদের কাজ না এটা ডিজির কাজ!!

কুড়িগ্রামে গিয়ে ভয়াবহ চিত্র দেখা গেল।ফাঁকা পদের হাহাকার চলছে। কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল চলে মেডিকেল এসিসটেন্ট দিয়ে। ইনডোর, আউটডোর, ইমার্জেন্সি সবকিছু চালায় মেডিকেল এসিসটেন্ট। ১০৬ টি ফাঁকা পদ নিয়ে চিকিৎসকশূণ্যতায় ভুগছে এই জেলা। জানা গেল এরকম চিত্র আরো অনেক জেলায়।কাছ থেকে খোঁজ না নিলে হয়ত কেউ জানতেও পারবেনা।

যত ঘুরছি ততই নতুন নতুন অভিজ্ঞতা হচ্ছে। জানিনা আর কেউ কি আমাদের মত ভ্রমণ করেছেন কিনা! এবার গেলাম খুলনা বিভাগের পানে….

২০১৮ সালের আগস্ট মাসের একটা চিঠি দেখেছিলাম। ৪২২ টি উপজেলায় ৫ টি করে মোট ২১১০ টি ইএমও/এমও পদ তৈরি প্রসংগে। ঐ চিঠির বাস্তবায়ন এখনও হয়নি। শূণ্য পদ পূরণ হয়না, কর্মরত চিকিৎসকদের অনেককে আবার অন্যত্র পাঠানো হয় এটাচমেন্টে। শয্যাসংখ্যা বাড়ে কিন্তু জনবল বাড়ে না। নতুন নতুন হাসপাতাল/মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় অথচ নিয়োগ হয় না। ফলশ্রুতিতে ভুগতে থাকে শুধুমাত্র ৩ টি গোষ্ষ্ঠী। রোগী, মেডিকেল কলেজের ছাত্র-ছাত্রী আর চিকিৎসক।

৩৯ বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কিন্তু পদবঞ্চিত ৮৩৬০ চিকিৎসকের ৬৪ জেলা ভ্রমণকাহিনী


৩৯ বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কিন্তু পদবঞ্চিত ৮৩৬০ চিকিৎসকের ৬৪ জেলা ভ্রমণকাহিনী

নড়াইলে প্রথমবার যাই ২৭.০৮.১৯ তারিখে। তখন সিভিল সার্জন স্যার এই চিঠিটার বিষয়ে অবগত ছিলেন না। আমরা দেখানোর পর অফিস সহকারি কে জিজ্ঞাসা করলে অফিস সহকারি ফাইল খুজে বলেন নতুন চিঠিটা আসেনাই তবে আগের চিঠিটা আসছে।
তারপার সিভিল সার্জন স্যার বলেন অবশ্যই তিনি ব্যাপারটা দেখবেন এবং সেই সাথে তিনি বলেন তোমরা সব সিভিল সার্জন বরাবর স্মারকলিপি দাও।

৩৯ বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কিন্তু পদবঞ্চিত ৮৩৬০ চিকিৎসকের ৬৪ জেলা ভ্রমণকাহিনী


৩৯ বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কিন্তু পদবঞ্চিত ৮৩৬০ চিকিৎসকের ৬৪ জেলা ভ্রমণকাহিনী

এর ২/৩ দিন পর ই খবর পাই সিভিল সার্জন স্যার বদলি হয়ে গেছেন। নতুন সিভিল সার্জন স্যার আসলে ২.৯.১৯ তারিখে আমাদের একজন দেখা করে স্যারকে বিষয়টা বলে।নতুন চিঠিটা তখন ও পৌছায় ই নি। স্যার তখন বলেন আমি নতুন আসছি। খোজ খবর নিয়ে দেখবো কি করা যায়। এর মাঝেও আমরা ২/৩ বার অন্য লোক পাঠিয়েছি। এরপর সর্বশেষ ১১.০৯.১৯ তারিখে গেলাম। নতুন চিঠি তখনো পৌছায়নি। স্কান করে এক কপি রাখলেন। আর বললেন আমাদের অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী নতুন পদ সৃজনের কোনো জায়গা নেই। আর শূন্য পদ ই তো কখনো পূরণ হয়না।তারপর আলোচনার একটা পর্যায়ে উপজেলা হেলথ কম্প্লেক্স ৩১ বেড থেকে ৫০ বেড হয়েছে সেখানে ১২ জন এম ও সৃজনের সুযোগ আছে দেখা গেলো। আর ২ টা ইউনিয়ন সাবসেন্টারে এমও পদ নাই। সেখানে ও। তখন বললেন তাহলে এই ১৪ জন এর চাহিদাপত্র পাঠিয়ে দিবো।

৩৯ বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কিন্তু পদবঞ্চিত ৮৩৬০ চিকিৎসকের ৬৪ জেলা ভ্রমণকাহিনী


৩৯ বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কিন্তু পদবঞ্চিত ৮৩৬০ চিকিৎসকের ৬৪ জেলা ভ্রমণকাহিনী

কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন অফিসে দেখা গেল তারা এই চিঠির ব্যাপারে জানেন। ৫ টি উপজলায় ৪০ জন আর কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ৩০ জন মেডিকেল অফিসার আরো প্রয়োজন এমনটা জানা গেল।

চুয়াডাঙ্গাতে নতুন ৪৫ জন আর মেহেরপুরএ ৩০ জন চিকিৎসক প্রয়োজন। তারা চাহিদাপত্র দিবেন জানালেন।

খুলনায় গিয়ে জানলাম পাইপলাইনের সব চিকিৎসক নিয়োগ হলেও ২/৩ ভাগ ফাঁকা রয়ে যাবে।

সাতক্ষীরাতে গিয়ে দেখা গেল মেইলে চিঠি এসেছে ঠিকই কিন্তু তারা চেক করেননি। আমরা যাওয়ার পর জানলেন।

মাগুড়ার সিভিল সার্জন অফিস থেকে উপজেলা পর্যায়ে নতুন ৮ টি পদ (ইনডোর, আউটডোর,ইমার্জেন্সি) সৃজনের কথা ভাবছেন। মৌখিক হিসেবেও ৫০০ উপজেলায় যদি ৮ টি করে পদ সৃজন হয় এখানেই ৪০০০ নতুন পদ তৈরি হয়। ২৫০-৫০০ শয্যা হাসপাতালে সঠিকভাবে যদি পদ সৃজন হয় কমপক্ষে ১০০০০ মেডিকেল অফিসার পোস্ট সারা দেশে তৈরি হয়।

৩৯ বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কিন্তু পদবঞ্চিত ৮৩৬০ চিকিৎসকের ৬৪ জেলা ভ্রমণকাহিনী


৩৯ বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কিন্তু পদবঞ্চিত ৮৩৬০ চিকিৎসকের ৬৪ জেলা ভ্রমণকাহিনী

বাগেরহাটের জনসংখ্যা ১৭ লক্ষ। ৯ টি উপজেলায় মাত্র ৬৭ জন চিকিৎসক আছেন। থাকার কথা ২১৭ জন! ৫০ শয্যা হাসপাতালে পর্যাপ্ত জনবলই নাই।

ঝিনাইদহে একটি শিশু হাসপাতাল বন্ধ রাখা শুধুমাত্র চিকিৎসক সংকটের কারণে। তারা জানান ৩ টি উপজেলায় কমপক্ষে ২৫ জন নতুন মেডিকেল অফিসার প্রয়োজন।

SDG অর্জন করতে হলে স্বাস্থ্যখাত উন্নয়নের বিকল্প নেই। মাতৃমৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে হবে লাখে ৭২ জনে আর শিশুমৃত্যুর হার কমিয়ে আমতে হবে হাজারে ১২ জনে। বর্তমানে আছে । গ্রামীণ বিশাল জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে চিকিৎসক সংকট নিরসনের তো বিকল্প নেই। এই দুরাবস্থা চলতে থাকলে কি আদৌ SDG কাংক্ষিত সময়ের মধ্যে অর্জন কতটা কঠিন হবে ভাবছি!

[রংপুর বিভাগীয় সমন্বয়কারী :

ডা সোনিয়া জামিন প্রীতি
ডা ফারহানুল ইসলাম অয়ন

জেলা প্রতিনিধি:

ডা রেজওয়ান রেজা
ডা তানিয়া তাজরিন তন্বী
ডা সৈয়দ হাসান আলী
ডা সাজেদুর রহমান সুজন
ডা কামরুল হাসান প্রিন্স
ডা মাইনুল হাসান শিমু
ডা শারমিন আখতার
ডা াতানিয়া তাজনিন
ডা সাবেকুন নাহার
ডা কাজি মারুফ
ডা মামুনা আকতার
ডা নওয়াজেশ আহমেদ

খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী :

ডা রাজন সিনহা
ডা রিপন পোদ্দার

জেলা প্রতিনিধি:

ডা পল্লব সাহা
ডা সব্যসাচী
ডা তাজ মোহাম্মদ
ডা ফারহানা নিপা
ডা হাসিব হাসান ফয়সাল]

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top