৩০ ডিসেম্বর যা হল তা শহীদদের সাথে বেইমানী : ড. কামাল

গণফোরাম সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষনেতা ড. কামাল হোসেন সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, যা হওয়ার হয়েছে এ বছরের মধ্যেই প্রকৃতপক্ষে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিন। তিনি বলেন, আমরা অতীত নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে চাই না। দ্রুত একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিন, এটাই মঙ্গল হবে জাতির।

জাতীয় প্রেসক্লাবের ৩য় তলায় আবদুস সালাম হলে বুধবার মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। এতে আরো বক্তব্য রাখেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিনসহ অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, অধ্যাপক আবু সাইয়্যেদ,রেজা কিবরিয়া, মেজর জেনারেল (অব.) আমসা আমিন, মোকাব্বির খান, অ্যাডভোকেট আলতাফ হোসেন, মহসিন রশীদ, অ্যাডভোকেট জগলুল হায়দার আফ্রিক, অধ্যাপিকা বিলকিস বানু, মোশতাক আহমেদ, আজমেরী বেগম ছন্দা, মোহাম্মদ রওশন ইয়াজদানী, খান সিদ্দিকুর রহমান, কাজী হাবিব প্রমুখ।

ড. কামাল হোসেন আরো বলেন, বলেন, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়নি। আমরা সরকারকে অনুরোধ জানাই দ্রুত একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। আমরা ৩০ ডিসেম্বরকে ভুলে যেতে চাই, এ নিয়ে বিতর্ক করতে চাই না। চাই না কোন হিংসা, সঙ্ঘাত-হানাহানি। সুষ্ঠু রাজনীতির ধারা ফিরিয়ে আনতে তিনি এ বছরের মধ্যেই নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি জানান। তিনি বলেন, এই সরকারের কয়েক মাস হয়েছে। এখন আর দেরি করে লাভ নেই। তাড়াতাড়ি একটা প্রকৃতঅর্থে অংশগ্রহণমুলক নির্বাচন দিন।

ড. কামাল বলেন, ‘আমরা সংঘাত ও সংঘর্ষ চাই না। এতে দেশের অর্থনৈতিক শাসন ব্যবস্থা ও দেশের অনেক ক্ষতি হয়। কাল্পনিকভাবে নির্বাচনের আগের রাতে ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় গিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করা প্রতারণার শামিল। এটা শুধু জনগণের সঙ্গেই প্রতারণা নয় বরং স্বাধীনতার শহিদদের সঙ্গেও প্রতারণা করা হয়। নির্বাচনের আগের রাতে ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতা নেয়ার জবাব জনগণ আদায় করবেই। তিনি বলেন, ৩০ ডিসেম্বর যা হল তা শহীদদের সাথে বেইমানী। তাদের রক্তের সাথে এটা বিশ্বাসঘাতকতা। কারণ তারাতো জীবন দিয়েছে এদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য।

জনগণ ভোট দিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচন করবে আর তারাই দেশ চালাবে-এমনটাইতো শহীদের আশা ছিল। কিন্তু এ সরকার শহীদদের সাথে প্রতারণা করেছে। তবে ৩০ ডিসেম্বরে যা করা হল তা-তো নজীরবিহীন প্রতারণা। এব্যাপারে দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া আর কি আছে।

তিনি বলেন, ৩০ ডিসেম্বর কে ভোট দিয়েছেন আমি তাকে খুজছি। তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত জনগনের কাছে জানতে চান তারা ঐদিন ভোট দিয়েছেন কি-না? তিনি বলেন, ৩০ ডিসেম্বরে ভোটদান কারী ভাগ্যবান ব্যক্তিটিকে আমি খুঁজে বেরাচ্ছি,কিন্তু কোথাও পাচ্ছি না।

সরকারের উদ্দেশে ড. কামাল বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে অপমান করবেন না। দেশের জনগণ ক্ষমতার মালিক। রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। সংবিধানে এই কথা উল্লেখ রয়েছে। আর এই সংবিধানে এক নম্বর স্বাক্ষর হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর। তিনি আরও বলেন, আজ দেশের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। হাজার হাজার সম্পদ দেশের বাইরে পাচার হয়ে যাচ্ছে। অনেকে ভয়ে মুখ খুলছেন না গুম, হত্যা ও অপহরণের ভয়ে। দেশ আজ মহাসংকটের শিকার।

অধ্যাপক আবু সাইয়েদ বলেন,  সমাজের রন্ধে রন্ধে এখন দুর্নীতি। দুর্নীতি শাসনব্যবস্থাকে গ্রাস করেছে।

অপরদিকে রেজা কিবরিয়া বলেন, স্বাধীনতার সুফল পায়নি যারা বলছে তারাতো ভুল বলছে। কারণ এখন কষ্ট করে নিজের ভোট নিজে দিতে হয় না। শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা না করে ঘরে বসে থাকলেই চলবে, ঘরে প্রশ্ন চলে আসবে। এছাড়া লাইসেন্স লাগে না গাড়ী চালাতে। তিনি বলেন, এভাবে একটি দেশ চলতে পারে না। তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা একটি দেশ দিয়ে গেছে রক্তের বিনিময়ে। সে দেশটির ঠিকভাবে আমরা চালাতে ব্যর্থ হচ্ছি। তবে তরুণ প্রজন্ম ঠিকই স্বাধীনতার সুফল ঘরে পৌছে দেবে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top