স্ত্রীর হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দিয়েছেন এই বাংলাদেশী

নিউজিল্যান্ডের মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত বাংলাদেশী হুসনা আহমেদের স্বামী ফরিদ আহমেদ বলেছেন, তিনি হামলাকারীকে ক্ষমা করে দিয়েছেন।

ডেনস অ্যাভিনিউ মসজিদের একজন সিনিয়র নেতা ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘আমার অসংখ্য বন্ধুর সাথে আমার প্রাণপ্রিয় স্ত্রীকেও যার কারণে হারাতে হয়েছে তার প্রতি আমি কোনো ঘৃণা পোষণ করছি না। আমি তাকে ভালোবাসি। আমি আমার স্ত্রীর ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি।’

তিনি বলেন, আমার স্ত্রী সব সময় বলতেন, কারো প্রতি ঘৃণার মনোভাব দেখিও না, সবাইকে সব সময় ভালোবাসবে। তা হলেই পৃথিবীতে শান্তি আসবে।

উল্লেখ্য, ১৯৯৪ সালে স্বামীর সাথে নিউজিল্যান্ডে পাড়ি জমান সিলেটের বিশ্বনাথের হুসনা আহমেদ। ২০০৪ সালে এক সড়ক দুর্ঘটনায় দুই পা হারান স্বামী ফরিদ আহমেদ। সেই থেকে তিনি হুইল চেয়ারে চলাফেরা করেন। স্বামীকে সার্বক্ষণিক দেখাশোনা করেন হুসনা আহমেদ।

গত শুক্রবার স্বামীকে মসজিদে নিয়ে যান তিনি। পরে নিজেও নামাজের জন্য মসজিদে মহিলাদের জন্য নির্ধারিত কক্ষে চলে যান। ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘গুলির ঘটনা শুরু হতেই আমি হতভম্ব হয়ে পড়ি। সবাই চার দিকে ছোটাছুটি শুরু করেন। আমি হুইল চেয়ারে বসে মৃত্যুর জন্য প্রতীক্ষা করতে থাকি।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি ভাবছিলাম আমার স্ত্রীর কথা, ভাবছিলাম সে নিরাপদে বের হতে পারল কি না। কেননা আমার পক্ষে তো ওই অবস্থায় বের হওয়ার কোনো আশাই ছিল না। হঠাৎ দেখি আমার স্ত্রী এসে আমাকে বের করে নিয়ে যাচ্ছে। সে দ্রুত আমাকে নিরাপদ দূরত্বে নিয়ে বলল তুমি এখানে থাকো, আমি আটকে পড়া মহিলা ও শিশুদের বের করার চেষ্টা করি। এ কথা বলে সে আবার মসজিদে প্রবেশ করল। ইতোমধ্যে আবার শুরু হয়েছে বন্দুকধারীর তাণ্ডব।’

তারপরও তিনি আশায় ছিলেন, হয়তো তার স্ত্রী বেঁচে যাবে। কিন্তু তার আশা সফল হয়নি। কিছুক্ষণ পর তিনি স্ত্রীর মৃত্যু সংবাদ পান।

গতকাল রোববার নিউজিল্যান্ডবাসী বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়েছে নিহতদের প্রতি। ফরিদ আহমেদ হামলাকারী সম্পর্কে বলেন, আমি সত্যিই তাকে ক্ষমা করে দিয়েছে। আমার মনে হয় তার জীবনে কোনো কালো অধ্যায় আছে। হয়তো সে কখনো কারো ভালোবাসা পায়নি। আমি তাকে ঘৃণা করতে পারি না, সত্যিই পারি না। হুসনা যা চাইত, আমিও তা-ই চাই। আর তা হচ্ছে ক্ষমা, আমি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top