স্কুলে মেরে সেখানেই পুঁতে ফেলা হলো ছাত্রকে

বিস্কুট চুরির অভিযোগ উঠেছিল এক ছাত্রের বিরুদ্ধে। সে কারণে সব ছাত্রকেই ক্যাম্পাসের বাইরে যেতে নিষেধ করে দেয়া হয়। সব মিলিয়ে দোষ এতটুকুই। সে কারণে জীবন দিয়ে সংশোধনী দিতে হয়েছে ওই ছাত্রকে। পরে তাকে ওই স্কুল ক্যাম্পাসেই পুঁতে রাখা হয়। ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের দেরাদুনে গত ১০ মার্চ।

ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়া তাদের এক প্রতিবেদনে জানায়, দেরাদুনের একটি বোর্ডিং স্কুলে ক্লাস সেভেনে পড়তো ১২ বছরের বাসু যাদব। সম্প্রতি স্কুল থেকে একটি জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল শিক্ষার্থীদের। সেখানেই কয়েকজন অভিযোগ করে, বাসু তাদের বিস্কুট চুরি করেছে।

পরে কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টি জানতে পেরে নিয়ম জারি করে, তারা কেউ আর ক্যাম্পাসের সীমানার বাইরে যেতে পারবে না। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে শিক্ষার্থীরা। এ অবস্থার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয় বাসুকে। এবার ওপরের ক্লাসের শিক্ষার্থীরা শাস্তির ভার তুলে নেয় নিজেদের হাতেই।

তাদের ক্ষোভ- চুরি করেছে বাসু, আমাদেরকে কেন ক্যাম্পাসের মধ্যে আটকে থাকতে হবে। বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে ক্রিকেট ব্যাট ও উইকেট দিয়ে বেদম প্রহার করে ঠান্ডা পানিতে চুবানো হয় বাসুকে। এক পর্যায়ে প্রবল রক্তক্ষরণ শুরু হলে তাকে ক্লাস রুমে ফেলে রাখা হয়।

কয়েক ঘণ্টা পর স্কুলের ওয়ার্ডেন দেখতে পেলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে যাওয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ অবস্থায় বিষয়টি যাতে জানাজানি না হয় তাই সবার অলক্ষ্যে স্কুল কর্তৃপক্ষ ওই কিশোরের লাশ স্কুল ক্যাম্পাসের ভিতরেই পুঁতে রাখে।

বাসু যাদবের মা-বাবা থাকতেন ওই স্কুল থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরের হাপুর নামক স্থানে। তারা জানতেনই না তারা ঘটনাটির কথা। পরে উত্তরাখণ্ডের শিশুসুরক্ষা কমিশন হস্তক্ষেপ করার পর তা সামনে আসে।

দেরাদুনের পুলিশ কর্মকর্তা নিবেদিতা কুকরেতি জানান, বাসুকে মারধর করা হয়েছিল দুপুরে। আর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় সন্ধ্যের শেষ দিকে। গত মঙ্গলবার ওই জায়গা খুঁড়ে বাসুর লাশ বের করেছে পুলিশ। দেহটি পাঠানো হয়েছে ময়নাতদন্তের জন্য। আপাতত মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণের জন্যই ওই কিশোরের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

উত্তরাখণ্ডের শিশু সুরক্ষা বিষয়ক কমিশনের প্রধান উষা নেগি বলেন, গত ১০ মার্চ এ ঘটনা ঘটে। আমরা এর খবর পাই ১১ মার্চ। পরে আমরা ওই স্কুলে গেলে দেখতে পাই, লাশ পুঁতে ফেলা হয়েছে। এত বড় একটি ঘটনা, অথচ তারা কাউকে এ ব্যাপারে কোনো কিছু জানায়নি। এমনকি তার পিতা-মাতাকেও এ ব্যাপারে কোনো সংবাদ দেয়নি তারা।

এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে স্কুলের ম্যানেজার, ওয়ার্ডেন, শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক এবং দুজন ছাত্রকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করা হয়েছে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top