সৌহার্দ্য আর সালাম-সম্প্রীতিতে ভাসছে পুরো নিউজিল্যান্ড

মাত্র এক সপ্তাহ আগে যেখানে মুসলিমবিদ্বেষের শিকার হয়ে মারা গিয়েছিলেন ৫০ জন মুসল্লি। পুরো নিউজিল্যান্ডে ছড়িয়ে পড়েছিল আতঙ্ক, মুসলমানরা ঘর থেকে বের হতে সাহস পাচ্ছিলেন না; আজ সপ্তাহ ঘুরে আসতেই পাল্টে গেছে পুরো পরিস্থিতি।

অন্য মসজিদের পাশাপাশি হামলার শিকার মসজিদ দুটিতেও জুমা আদায় হয়েছে। মুসলমানরা ভিতরে নামায পড়েছেন, আর বাইরে সংহতি জানাতে অবস্থান নিয়েছিল হাজারো অমুসলিম। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ও বেতারে জুমার আযান প্রচারিত হয়েছে। সরাসরি সম্প্রচারিত হয়েছে জুমার নামাজও।

নিউজিল্যান্ডের অমুসলিম নারীরাও আজ স্কার্ফ বা হিজাব পরে সংহতি প্রকাশ করেছেন মুসলিমদের সাথে। নিহতদের স্মরণে পালন করা হয়েছে দুই মিনিটের নিরবতা। এক কথায় অভূতপূর্ব এক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে পুরো নিউজিল্যান্ড জুড়ে।

আজ শুক্রবার তাই পত্রিকা গুলোও বড় করে ছেপেছে শান্তির বাণী ‘আস-সালাম’। আরবি হরফেই বড় করে উল্লেখ করা হয়েছে সৌহার্দ্য আর সহমর্মিতার সেই বাণী। সাধারণ মানুষও বসে থাকেনি। বিভিন্ন দেয়ালে, ব্যানারে তারাও জানিয়েছে সহমর্মিতার বার্তা। আরবি, ইংরেজি ও স্থানীয় ভাষায় প্রচার করছে মুসলিমদের সেই শ্বাশত বাণী।

গত শুক্রবার জুমার নামাজের সময় আল নুর ও লিনউড মসজিদে হামলা চালায় ২৮ বছর বয়সী অস্ট্রেলিয় নাগরিক ব্রেন্টন ট্যারেন্ট। অভিবাসী ও মুসলিমদের প্রতি ঘৃণা থেকেই তিনি ভয়াবহ ওই হামলা চালিয়েছেন। হামলার পরপরই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে, তাকে সর্বোচ্চ শাস্তিই প্রদান করা হবে।

ব্রেন্টনের ওই হামলার পর দেশের মানুষ মুসলিমদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। নিউজিল্যান্ডের সরকার কোনোপ্রকার রাখঢাক ছাড়াই মুসলমানদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছে। সেই সাথে এক সপ্তাহের মধ্যেই হামলায় ব্যবহার করা সব ধরনের অস্ত্র নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছে।

বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন যেভাবে বারবার করে হামলার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, মুসলমানদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন, মুসলিম নারীদের সাহস জুগিয়েছেন তা এক কথায় অনন্য। তিনি নিজে মুসলমানদের মতো করে হিজাব পরেছেন, পার্লামেন্টের অধিবেশন শুরু করেছেন পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে, পার্লামেন্টে নামাযের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন, তা অনেক পুরুষ রাষ্ট্রপ্রধানের পক্ষেও করা কঠিন মনে করা হচ্ছিল।

তার এই দৃঢ় পদক্ষেপের কারণে সাধারণও মানুষও সব ভেদাভেদ ভুলে মুসলমানদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। ফলে এ হামলায় মুসলমানরা যতটুকু হারিয়েছিল, তার চেয়ে অনেক বেশি পেয়েছে বলেই মনে করছেন স্থানীয় মুসলমানরা। আর সে কারণেই তারা কারো বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার কথা বলছেন না, বরং রাষ্ট্রের প্রতি আস্থা রেখেছেন পুরোপুরি।

নিউজিল্যান্ডের ফেডারেশন অব ইসলামিক অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান মুস্তফা ফারুক আজকের দিনটির ব্যাপারে বলেন, আমরা সত্যিই খুব আনন্দিত, আমাদের জুমার নামাজ বিশ্বজুড়ে সরাসরি সম্প্রচার হচ্ছে। ফলে সবাই এতে অংশ নিতে পারছেন।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top