সিলেটে বাসের চাকায় ছাত্র পিষ্ট হবার আগের মুহুর্তে ঠিক কী হয়েছিল?

বাসের চালক ও চালকের সহযোগীর কটুক্তির প্রতিবাদ জানাতে গেলে একপর্যায়ে হেলপারের ধাক্কায় বাসের চাকার নিচে পিষ্ট হন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ওয়াসিম, আহত হন রাকিব হাসান নামের আরেক ছাত্র।

আহত হওয়া রাকিব হাসান জানান, এক বন্ধুর আত্মীয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে শনিবার বিকেলে ময়মনসিংহ-সরিষাবাড়ী-সিলেট রুটের একটি বাসে মৌলভীবাজারের শেরপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১জন শিক্ষার্থী।

রাকিব হাসান জানান, “যাত্রার শুরুতেই বাসের হেলপারের সাথে ভাড়া নিয়ে কিছুটা দ্বন্দ্ব তৈরি হয় আমাদের।”

ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছাত্রদের একজন নয়ন রঞ্জন ঘোষ জানান, “শুরুতে আমরা সিলেট পর্যন্ত যাওয়ার জন্য তাকে (হেলপারকে) যত টাকা ভাড়া দিয়েছিলাম, তাতে সে রাজি হয়নি। পরে মৌলভীবাজারের শেরপুরে আমাদের নামিয়ে দিতে রাজী হয় তারা।”

তবে বাসভাড়াকে কেন্দ্র করে বাসের হেলপার বা চালকের সাথে ছাত্রদের কেউই কথা কাটাকাটি বা বেশি বাক-বিতণ্ডায় জড়াননি বলে দাবি করেন নয়ন রঞ্জন ঘোষ ও রাকিব হাসান।

এরপর মৌলভীবাজারের শেরপুরে পৌঁছানোর পর তারা ১১ জনই বাস থেকে নেমে পড়েন।

রাকিব হাসান বলেন, বাস থেকে নামার পর হেলপার ও সুপারভাইজার তাদের উদ্দেশ্য করে কটুক্তি করে।

“বাস থেকে নামার পর আমরা শুনি হেলপার ও সুপারভাইজাররা বিভিন্ন বাজে মন্তব্য করছে আমাদের বিষয়ে। বাসে ওঠার যোগ্যতা নেই, কম ভাড়া দেয় – এরকম মন্তব্য শোনার পর প্রতিবাদ করতে আবারো বাসে উঠতে যাই আমি ও ওয়াসিম।”

সেসময় বাসটি থেমে ছিল বলে নিশ্চিত করেন নয়ন রঞ্জন ঘোষ।

রাকিব হাসান বলেন, “প্রতিবাদ করতে বাসের গেটে ওঠার পরই চালক বলে ‘এদেরকে বাঁধ’, এবং বলার পর বাসের গতিও আস্তে আস্তে বাড়াতে থাকে। এরপর ভেতর থেকে আমাদের ধাক্কা দেয়া হয়। দু’জনকে আলাদাভাবে ধাক্কা দেয়া হয়েছে, নাকি একসাথে ধাক্কা দেয়া হয়েছে তা দেখতে পাইনি।”

তিনি জানান, “আমি পড়ে যাওয়ার পর এক-দেড়হাত সামনেই ওয়াসিমকে গাড়ির চাকার নিচে চাপা পড়তে দেখি।”

বাসের বাইরে থাকা নয়ন রঞ্জন ঘোষ বলেন, দু’জন পড়ে যাওয়ার সাথে সাথে বাস হঠাৎ গতি বাড়িয়ে দেয়।

“তাও ছেলেটা (ওয়াসিম) বাঁচতো, কিন্তু বাস ওয়াসিমকে নিয়ে স্পিড বাড়িয়ে টার্ন নেয়ায় বাসের পেছনের চাকার নিচে পড়ে সে।”

এরপর আহতদের সিলেট ওসমানী মেডিকেলে পাঠানোর ব্যবস্থা করে আরেকটি গাড়িতে করে বাসের পেছনে যান তারা। রাস্তায় এক জায়গায় বাসটিকে পড়ে থাকতে দেখেন।

মৌলভীবাজার সদর থানার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম জানান বাসের চালক ও সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বা ভুক্তভোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা না হলে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে বলে জানিয়েছেন রাশেদুল ইসলাম।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top