সিইসিকে সাবেক নৌবাহিনী প্রধানের খোলা চিঠি

নির্বাচনে কোন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী যেন সশস্ত্র বাহিনীর বীরত্বকে ব্যবহার না করে, তা নিশ্চিত করতে ভারতের প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে (সিইসি) দেশটির নৌবাহিনীর সাবেক প্রধান অ্যাডমিরাল (অব.) এল রামদাস। উল্লেখ যে, আগামী মে মাসে ভারতে লোকসভা নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সন্ত্রাসী হামলায় ৪০ জনেরও বেশি ভারতীয় আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ান নিহত হন। এ জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে ২৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের বালাকোটে বিমান হামলা চালায় ভারত। ভারতের হামলার ২৪ ঘণ্টার মাথায় পাকিস্তান তাদের অংশের নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলওসি) দুটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে। আটক করে ভারতীয় পাইলট অভিনন্দন বর্তমানকে। পরে তাঁকে ভারতে ফেরত পাঠায় পাকিস্তান।

পুলওয়ামায় সন্ত্রাসী হামলা, বালাকোটে ভারতের বিমান হামলা ও অভিনন্দন বর্তমানকে ফেরত দেওয়ার এই তিনটি ঘটনায় এখন অন্যান্য সব অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ইস্যু চাপা পড়ে গেছে। এই সুযোগে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার বিভিন্ন সভা-সমাবেশে ভারতীয় সেনা ও বিমানবাহিনীর ‘বীরত্ব’ নিয়ে বক্তব্য দিচ্ছে। ওদিকে বিরোধী রাজনীতিকেরাও এ নিয়ে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। ভোটের প্রচারে সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে রাজনৈতিক দলগুলো যেন ভোটারদের প্রভাবিত করতে না পারে, সেটি নিশ্চিত করতেই প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে খোলা চিঠি লিখেছেন নৌবাহিনীর সাবেক প্রধান এল রামদাস। দুই পৃষ্ঠার চিঠিতে বর্তমান পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি লিখেছেন, রাজনৈতিক ফায়দা নিতে যেন সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকাণ্ডকে ব্যবহার করা না হয়।

এল রামদাস লিখেছেন, ‘নির্বাচনের আর কয়েক সপ্তাহ বাকি। এ উপলক্ষে রাজনৈতিক দলগুলো সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকাণ্ডকে পুঁজি করে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করতে পারে। এ ধরনের অপব্যবহার যেন না হয়, সেটি নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ চিঠিতে তিনি লিখেছেন, সশস্ত্র বাহিনীর কাঠামো ও পরিবেশ সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ও ধর্মনিরপেক্ষ।

এল রামদাস লিখেছেন, ‘এই পরিস্থিতিতে একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে ও ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর একজন গর্বিত সদস্য হিসেবে, কিছু রাজনৈতিক দলের সশস্ত্র বাহিনীর ভাবমূর্তিকে ব্যবহার করার বিষয়ে আমি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। অনেকে নিজেদের অ্যাজেন্ডা অনুযায়ী সশস্ত্র বাহিনীর পোশাক, ছবি ও অন্যান্য উপকরণ ব্যবহার করছেন। নির্বাচনী মিছিল থেকে শুরু করে বিভিন্ন মাধ্যমে এটি করা হচ্ছে। এতে করে সশস্ত্র বাহিনী যে ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আছে, তা ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।’

প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে লেখা চিঠিতে নৌবাহিনীর সাবেক প্রধান লিখেছেন, এই কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে উপযুক্ত ব্যবস্থা না নিলে, তা ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সততা ও ধর্মনিরপেক্ষ আচরণ বিনষ্টের আশঙ্কা তৈরি করতে পারে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট অনেকে ক্ষুব্ধ হয়েছেন।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top