সরকার দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে: রিজভী

সরকার তথাকথিত হিংসা ও মহাজালিয়াতির নির্বাচনের বিনিময়ে দেশের মানুষের নাগরিক স্বাধীনতা খর্ব করেছে। এখন দমননীতির উত্থান প্রবল থেকে প্রবলতর করছে বলে মন্তব্য করেছেন
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

তিনি আরো বলেন, সারাদেশে বিএনপির অনেক নেতাকর্মীর বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে। মনে হচ্ছে সরকার দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

আজ শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, সরকার তথাকথিত হিংসা ও মহাজালিয়াতির নির্বাচনের বিনিময়ে দেশের মানুষের নাগরিক স্বাধীনতা খর্বের পর বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে নিজ বাড়িতে যাওয়ার পথে শারীরিকভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে। তাদের দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি কেড়ে নেয়া হচ্ছে। বিএনপি নেতার ছেলে বিদেশ থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নেয়া শেষে দেশে ফিরে এসে নিজ এলাকায় সমাজ সেবা করতে গেলেও তার ওপর আক্রমণ চালানো হচ্ছে। সারাদেশে বিরোধী দল, মত ও বিশ্বাসের মানুষরা সরকারী সন্ত্রাসবাদে আক্রান্ত। সরকার মনে হচ্ছে দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ৩০ ডিসেম্বরের আগের দিন অন্ধকার রাতে ভোট ডাকাতি ও ভোট হরিলুট সরকারের জন্য শুভবার্তা নয়। বরং এই অপকর্মটির জন্য অচিরেই বিশাল রাজনৈতিক ধাক্কা খেতে হবে বর্তমান ভোটারবিহীন সরকারকে। জোর করে ক্ষমতায় থাকাটা এই ম্যান্ডেটহীন সরকারের জন্য হবে বিবিধ অমঙ্গলের উৎস।

‘সংলাপ ও পুন:নির্বাচন প্রশ্নে ঐক্যফ্রন্টের দাবি হাস্যকর’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রিজভী বলেন, তাহলে শেখ হাসিনার অধীনে অনুষ্ঠিত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনটা কি খুবই সম্মানজনক হয়েছে? রাষ্ট্রের সব শক্তি প্রয়োগ প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের দমন করে এরকম ভোট সন্ত্রাসের একতরফা নির্বাচনের পরও কি এটা প্রমাণ করে যে, আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার? অথচ এতো বড় নজিরবিহীন ভুয়া ভোটের নির্বাচনের পরও আত্মমর্যাদাহীন আওয়ামী নেতারা নির্বাচন নিয়ে নির্লজ্জ গলাবাজি করছেন। দেশব্যাপী নারী-পুরুষ ভোটাররা ধিক্কার জানাচ্ছে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনকে, কারণ তারা কেন্দ্রে গিয়ে দেখেছে তাদের ভোট দেয়া হয়ে গেছে। আগের রাতে যেখানে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ ভোট দিয়ে দেয়া হয়েছে তাকে কি ভোট বলে? মহাভোট ডাকাতির যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ সবার কাছে আছে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, দেশ-বিদেশের গণমাধ্যম ও দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোও ইতোমধ্যে ভোট ডাকাতির তথ্য প্রমাণ তুলে ধরছে। ভোটের আগের দিন রাত ও ভোটের দিনেই ভোট লুটের দৃশ্য দেখাতে পারতেন, কিন্তু গণমাধ্যম ছিল প্রচন্ড হুমকির মুখে। তারপরও দেশ-বিদেশের বেশ কিছু গণমাধ্যমে ভোট ডাকাতির দৃশ্য দেখিয়ছে। ভোট ডাকাতির কিছু দৃশ্য দেখাতে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে যমুনা টিভির প্রচার ক্যাবল অপারেটর দিয়ে বন্ধ করা হয়েছিল। সুতরাং কেউই এই নির্বাচন মেনে নেয়নি। এজন্য ওবায়দুল কাদেররা কোনো সদুত্তর দিতে পারবেন না বলেই সংলাপে রাজী নয়। মহা ডাকাতির ভোটের জবাব তাদের কাছে নেই।

তিনি আরো বলেন, বিশ্বের দেশগুলোর গণতন্ত্রের তালিকায় নেই বাংলাদেশ। এ নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ)। বর্তমানে বাংলাদেশ পূর্ণ গণতন্ত্র বা ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্রের অবস্থানেও নেই। বাংলাদেশের অবস্থান স্বৈরতান্ত্রিক দেশগুলোর সমপর্যায়ে।

রিজভী জানান, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ঝিনাইদহ-৪ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী ও জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ গত বুধবার মিথ্যা মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে গেলে তার জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণের ঘটনায় আমি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত বানোয়াট ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।

এছাড়া একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলে কুমিল্লায় গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ নেতা ফয়েজউল্লাহ নিহত হন। এর জের ধরে কুমিল্লার লাকসাম থানার বাকৈই ইউনিয়নের অশদিয়া গ্রামের বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিনের বাড়ীঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। আওয়ামী সন্ত্রাসী কর্তৃক নাসির উদ্দিনের বাড়ীতে আগুন লাগানোর ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি করছি।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top