শ্রীপুরে বাবা-মায়ের বিরোধে প্রাণ দিতে হলো শিশুকন্যাকে

গাজীপুরের শ্রীপুরে স্ত্রীর পরকীয়ার জেরে পাঁচ বছরের শিশু কন্যাকে তার বাবা রোববার গলাটিপে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাতে পুলিশ ওই দম্পতির ঘরের খাটের নীচে লুকিয়ে রাখা অ্যালুমিনিয়ামের পাতিলের ভিতর থেকে নিহত শিশুটির লাশ উদ্ধার করে। নিহতের নাম মনিরা খাতুন (৫)। সে গাজীপুরের কাপাসিয়া থানার চাপাত এলাকার রফিকুল ইসলামের মেয়ে।

শ্রীপুর থানার ওসি জাবেদুল ইসলাম জানান, ২০১২ সালে গাজীপুরের শ্রীপুর থানার গোসিঙ্গা এলাকার গোলাপ হোসেনের মেয়ে নাসরিন আক্তরের সাথে পারিবারিকভাবে কাপাসিয়া থানার চাপাত এলাকার মাঈন উদ্দিনের ছেলে রফিকুল ইসলামের বিয়ে হয়। বিয়ের পর এ দম্পতি গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সালনা এলাকায় ভাড়া বাসায় থেকে স্থানীয় পোশাক কারখানায় চাকরি নেয়। তাদের সংসারে এক কন্যাসন্তানের (মনিরা খাতুন) জন্ম হয়।

পরবর্তীতে নাসরিন পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়লে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিরোধ দেখা দেয়। বিরোধের এক পর্যায়ে ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে নাসরিন তার স্বামীকে ডিভোর্স দেয়।

স্ত্রী-সন্তানের টানে রফিকুল গত প্রায় ছয়মাস আগে স্ত্রীর কাছে ফিরে এসে পুনরায় এক সাথে সংসার শুরু করে।

তারা দুই মাস আগে (গত ১ ডিসেম্বর) শ্রীপুরের ডেনিমেক পোশাক কারখানায় চাকরি নিয়ে স্থানীয় কেওয়া পশ্চিম খন্ড (মাষ্টারবাড়ী) এলাকার ইয়াছিন হাজীর বাড়ির ভাড়া বাসায় বসবাস করতে থাকে।

কিন্তু বাসা বদলের পরও স্ত্রীর পরকীয়া অব্যহত রয়েছে এমন ধারণা থেকে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ঝগড়া বিবাদ চলে আসছিল।

এরই মাঝে নাসরিন তার মায়ের জমি বিক্রির ৯৩ হাজার টাকা পায়। এ টাকা নিয়ে শনিবার রাতে তাদের মাঝে ঝগড়া ও হাতাহাতি হয়।

পরদিন রোববার সকালে স্ত্রী কারখানায় চলে গেলেও অসুস্থতার কথা বলে রফিকুল কারখানার কাজে যায়নি। মধ্যাহ্ন বিরতিতে দুপুরে বাসায় নাসরিন তার শিশু কন্যা ও স্বামীর সাথে একত্রে খাওয়া-দাওয়া করে আবার কারখানায় চলে যায়।

পরে বিকেল ৫টায় কারখানা ছুটির পর নাসরিন বাসায় ফিরে মেয়েকে না দেখে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজি করতে থাকে। কোথাও না পেয়ে মোবাইল ফোনে স্বামীর কাছে মেয়ের খোঁজ জানতে চায় নাসরিন। এসময় রফিকুল জানায়, আমরা অনেক দূরে চলে গেছি। আমাদেরকে আর পাবি না।

পরে নাসরিন আক্তার বিষয়টি পুলিশকে জানায়। খবর পেয়ে শ্রীপুর পুলিশ ওই বাড়িতে গিয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করে। একপর্যায়ে রাত ৯টার দিকে নাসরিনের ঘরের ভিতর খাটের নিচে লুকিয়ে রাখা অ্যালুমিনিয়ামের পাতিলের ভিতর ওই শিশুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

পুলিশ শিশুর মা নাসরিন আক্তারকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তবে ঘাতক বাবাকে আটক করতে পারেনি।

পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানান, স্ত্রীর পরকীয়ায় ক্ষুব্ধ হলেও সন্তানের টানে সংসার ছেড়ে যেতে না পেরে পথের কাটা দূর করতে রফিকুল তার সন্তানকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। এ ব্যপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। রফিকুলকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top