শেষ পর্যন্ত জরুরি অবস্থা ঘোষণা ট্র্রাম্পের

দেয়াল নির্মাণে অর্থ বরাদ্দের পথে কংগ্রেসকে এড়াতে অবশেষে জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুক্রবার সকালে হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে ট্রাম্প সাংবাদিকদের জানান, মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর তৈরি বাবদ প্রয়োজনীয় অর্থ আদায় করতে জরুরি অবস্থা জারি করছেন তিনি। আগের দিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষ থেকে মিচ ম্যাকনেল জানিয়েছিলেন, ‘জরুরি অবস্থা জারি করতে পারেন ট্রাম্প।’

সাংবাদিকদের উদ্দেশে ট্রাম্প বলেন, ‘জরুরি অবস্থার ঘোষণাপত্রে সই করতে যাচ্ছি। এর আগেও এমন হয়েছে। ১৯৭৭ সালের পর থেকে অন্য প্রেসিডেন্টরাও এমন সই করেছেন। কোনো সমস্যা হয়নি। কেউ মাথাও ঘামায়নি। মনে হয়, সে বারের ঘটনাগুলো তেমন উত্তেজক ছিল না!’

ঠিক ছিল ওই রফায় মার্কিন কংগ্রেসের সম্মতি মিললে চুক্তিতে সই করবেন প্রেসিডেন্ট। সেই মতো গত বৃহস্পতিবার ভোট হয়। কংগ্রেসের দু’কক্ষেই বিরাট ব্যবধানে (৮৩-১৬) সীমান্ত নিরাপত্তা বিলটি পাস হয়। কিন্তু এর মিনিট খানেকের মধ্যে খুবই তাড়াহুড়ো করে সিনেটে প্রবেশ করেন সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা মিচ ম্যাকনেল। তিনি জানান, বিলটিকে সমর্থন করেছেন ট্রাম্প। অবশ্য এরপরও প্রাচীর তৈরি বাবদ দাবি মতো বাকি অর্থ আদায় করতে জরুরি অবস্থা জারি করতে পারেন তিনি।

এর ফলে কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়াই, দেয়ালের জন্য রফা হওয়া অর্থের পাশাপাশি ট্রাম্প তার নিজস্ব ক্ষমতাবলে প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ ৩৬০ কোটি ডলারও দেয়াল তৈরিতে ব্যবহার করতে পারবেন। এছাড়া অন্য খাতের অর্থও নিতে পারবেন তিনি।

এর আগে মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের জন্য কংগ্রেসের কাছে ৫৭০ কোটি ডলার চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু দর কষাকষি করে শেষমেশ ১৪০ কোটি ডলারে রফা হয়েছিল কংগ্রেস। প্রেসিডেন্ট তাতে রাজি হয়ে যাওয়ায় ধারণা করা হয়েছিল, দ্বিতীয় দফার শাটডাউন হয়তো এড়ানো যাবে।

মেক্সিকো হয়ে আসা অভিবাসীদের অনুপ্রবেশ রুখতে এ প্রাচীর তোলা নিয়েই ট্রাম্পের সঙ্গে ডেমোক্র্যাটদের মতানৈক্য এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে গত বছরের শেষে টানা ৩৫ দিন ধরে সরকারি শাটডাউন চলে।

নতুন করে সেই অচলাবস্থা তৈরি হতে বসেছিল। রফার সময়ে বলা হয়েছিল, ৮৮ কিলোমিটার জুড়ে এখনকার নকশামতো ধাতব পাতের বেড়া তৈরিতে কংগ্রেসের সায় রয়েছে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চাওয়া ছিল ৩৪৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকায় কংক্রিটের দেয়াল। এতে যে ট্রাম্প ঠিক খুশি হননি, সে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। টেক্সাসের এক সভায় তিনি বলেও ছিলেন যে, ‘যে করে হোক, দেয়ালটা বানাবোই।’

এদিকে ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পের পদক্ষেপকে ‘ক্ষমতার চূড়ান্ত অপব্যবহার’ ও ‘বেআইনি কার্যক্রম’ বলে কড়া সমালোচনা করেন। হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ও ডেমোক্র্যাট নেতা চার্লস শুমার যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ‘নিজের প্রতিশ্রুতি ভাঙার মরিয়া চেষ্টায় ট্রাম্প। দেয়াল তৈরির অর্থ মেক্সিকোর কাছ থেকে আদায় করার কথা বলেছিলেন। কিন্তু ওদের রাজি করাতে পারেননি। এখন করদাতাদের অর্থে এই সব করবেন।’

পেলোসি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট হতাশায় ভুগছেন। আইনের পথে যা পারেননি, এখন সেটাই গায়ের জোরে করছেন।’ কিন্তু ট্রাম্প তার বক্তব্য থেকে একচুলও নড়তে নারাজ। বরং উল্টো তিনি অভিযোগ করেন, ‘ডেমোক্র্যাটরা মিথ্যে বলছেন। ওরা বলছে, এ দেয়াল কোনো কাজের নয়। এ কথা সত্য নয়, কারণ দেয়ালটি ১০০ শতাংশ কাজের। এতে অনুপ্রবেশ, চোরাচালান সবই প্রতিরোধ করা যাবে।’

সূত্র : বিবিসি, ডেইলি সাবাহ

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top