শিশু ধর্ষণ : রিপোর্ট দেয়ায় চিকিৎসককে ওসি’র হুমকি

নাটোরের বাগাতিপাড়ায় দুই বখাটের বিরুদ্ধে প্রথম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় রিপোর্ট দেয়ায় বাগাতিপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসারকে মামলার আসামী করার হুমকি দিয়েছেন থানার ওসি। হুমকির একটি অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। মেডিকেল অফিসার আব্দুল্লাহ মোহাম্মদের সাথে বাগাতিপাড়া মডেল থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম শেখ পিপিএম এর মঙ্গলবার বিকেলের কথোপথনের ওই অডিও ক্লিপটি চিকিৎসক তার ব্যক্তিগত আইডি’তে পোস্ট করেন। এরপর তা ভাইরাল হয়ে পড়ে। ফলে দুই বিভাগের শীর্ষ ব্যক্তিরা এখন বিষয়টিতে জড়িয়ে পড়েছেন।

স্থানীয়রা জানায়, মঙ্গলবার দুপুরে বাড়ির পাশের একটি গম ক্ষেতে নিয়ে শিশুটিকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে দুই বখাটে। ডাক্তারী পরীক্ষায় প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের আলমত পেয়েছেন চিকিৎসক। অভিযুক্ত দুই ধর্ষকের নাম- সিমন ও ফাহিম।

ধর্ষণের শিকার শিশুটির চাচা জানান, এ বছর শিশুটিকে স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি করা হয়েছে। মঙ্গলবার ছুটির কারণে শিশুটি বাড়িতে ছিল। তার বাবা বাড়িতে ছিলেন না। মা বাড়ির কাজে ব্যস্ত থাকার সুযোগে মঙ্গলবার দুপুরে শিশুটিকে দুই বখাটে বাড়ির পাশের গম ক্ষেতে টেনে নিয়ে যায়। সেখানে পালাক্রমে ধর্ষণ করে আহতাবস্থায় শিশুটিকে ফেলে রেখে বখাটেরা পালিয়ে যায়। পরে আহতাবস্থায় পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়।

হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. রাসেল বলেন, পরিবারের লোকজন শিশুটিকে হাসপাতালে আনলে তাকে পরীক্ষা করা হয়। এতে প্রাথমিকভাবে শিশুটিকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। তবে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জেলা সদরের হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

এ দিকে দুপুরের দিকে ওসি সিরাজুল ইসলাম মোবাইল ফোনে মেডিকেল অফিসার আব্দুল্লাহ মোহাম্মদের কাছে জানতে চান তারা কি রিপোর্ট দিয়েছেন, ধর্ষণ নাকি ধর্ষণ চেষ্টা? ওসি উচ্চস্বরে কথা বলায় ডাক্তার আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ ওসিকে হাসপাতালের সরকারি নাম্বারে ভালো ভাবে কথা বলার জন্য বলেন। এসময় ওসি উত্তেজিত হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা দেয়ার হুমকি দেন।

পরে মেডিকেল অফিসার আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ এই কথোপকথনের রেকর্ডটি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেন। এতে ডাক্তারদের শীর্ষ সংগঠনসহ সব মহলে বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে।

এ ব্যাপারে বাগাতিপাড়া মডেল থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম পিপিএম বলেন, ডাক্তার সাহেবের সাথে আমার একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। আমিই একটু ভুল বুঝেছিলাম। তাই একটু রাগারাগি হয়েছিল। পরে আমরা দুই ভাই বসে সব ঠিক করে নিয়েছি।

অপরদিকে বাগাতিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার আব্দুল্লাহ বলেছেন, বিষয়টি আর আমাদের দুজনের মধ্যে নেই। দুটি কমিউনিটির বিষয় হয়ে গেছে। উনি উপজেলার সব কর্মকর্তা ও নেতৃবৃন্দের সামনে বসে একজন ডাক্তারকে বিনা দোষে অপমান করবেন হুমকি দিবেন আর গোপনে মিমাংসা হয়ে যাবে এটা ঠিক নয়। বিষয়টি আর আমাদের দুজনের মধ্যে নেই। দেশের সব ডাক্তারকেই অপমান করা হয়েছে। ফলে ডাক্তারদের শীর্ষ সংগঠন বিষয়টিতে জড়িয়ে পড়েছে। আমার একা আপোষ করার পর্যায়ে আর বিষয়টি নেই।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top