দালালের খপ্পরে পড়ে লিবিয়ায় গিয়ে এক বছর তিন মাস ধরে নিখোঁজ রয়েছেন নেত্রকোনার ১৩ যুবক। প্রত্যেকে সাড়ে ৭ লাখ টাকা দিয়ে লিবিয়া পাড়ি জমান। এ ঘটনায় নেত্রকোনা মানবপাচার ট্রাইব্যুনালে গত মঙ্গলবার নিখোঁজ মো. আলমগীরের মা রহিমা আক্তার ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আদালত গত বৃহস্পতিবার মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন।
মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- জেলার কলমাকান্দা উপজেলার ফাপিয়ালী গ্রামের মৃত আব্দুল হামিদের ছেলে মো. ছাদেক (৩৬) ও মো. আব্দুল মালেক, একই এলাকার পাঁচকাটা গ্রামের মৃত টুক্কু ফকিরের ছেলে ইব্রাহিম হোসেন (৫০) ও একই গ্রামের ইটু মিয়ার ছেলে মো. জামাল মিয়া (৩৫), নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার চরমান্দাইয়া মাস্টার বাড়ি গ্রামের আব্দুস ছুবাহানের ছেলে হারুন মিয়া (৪৫), সুরুজ মিয়ার ছেলে বিল্লাল হোসেন (৪২) ও তার স্ত্রী হোসনে আরা (৩০), সুরুজ মিয়ার মেয়ে সাহিদা খাতুন (২৭), হিরুন মিয়া (৩৭), লাকি খাতুন (৩৭) ও রাফেজা খাতুন (৩১)।
নিখোঁজের স্বজনরা জানান, এক বছর তিন মাস ধরে সন্তানদের খোঁজখবর জানার চেষ্টা করেছেন তারা। কিন্তু তাদের কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। এক বছর আগে দালালরা নতুন করে প্রতিজনের জন্য ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে তাদের বিক্রি করে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়। নিখোঁজের পর থেকে দালালের সঙ্গেও যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। তাদের পরিবারের সদস্যরাও কিছু বলছেন না।
পুলিশ, এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্র জানায়, গত বছরের ২০ মার্চ দালালের মাধ্যমে লিবিয়ায় পাড়ি জমান ওই ১৩ যুবক। বিদেশ যাওয়ার সময় প্রত্যেকের খরচ হয় প্রায় সাড়ে ৭ লাখ টাকা। জমি বাড়ি বিক্রি করে দালালের টাকা পরিশোধ করলেও এক বছর তিন মাস ধরে নিখোঁজ রয়েছেন তারা।
নিখোঁজরা হলেন- ওই উপজেলার ফকির-চান্দুয়াইল গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে মো. আলমগীর, হাসিম মিয়ার ছেলে সালমান মিয়া, মিরাজ আলীর ছেলে আবুল কাশেম, আব্দুল জলিলের ছেলে শাহীন মিয়া, আওয়াল মিয়ার ছেলে কালাম মিয়া, আব্দুর রশিদের ছেলে রাকিব মিয়া, আবু তাহেরের ছেলে নজরুল ইসলাম, মহর আলীর ছেলে মাসুম মিয়া, খলিল মিয়ার ছেলে আলমগীর হোসেন, আব্দুল খালেকের ছেলে সোহাগ মিয়া, আব্দুল হামিদের ছেলে ফিরোজ মিয়া, কাছম আলীর ছেলে সেলিম মিয়া ও আশ্রফ আলীর ছেলে মান্নান মিয়া।
নিখোঁজ যুবক মো. আলমগীরের মা রহিমা, সালমান মিয়ার বাবা হাসিম মিয়া জানান, ‘একই এলাকার পাঁচকাটা গ্রামের আদম ব্যবসায়ী ও লিবিয়া প্রবাসী ইব্রাহিম হোসেন এবং স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ী জামাল মিয়ার মাধ্যমে লিবিয়া নেওয়ার জন্য সাত লাখ পঁয়ত্রিশ হাজার করে টাকা দেন। পরে আবার সেখান থেকে ইতালি পাঠানোর প্রস্তাব দিয়ে আবারও টাকা আদায় করে ভুক্তভোগীর পরিবারের লোকজনের কাছ থেকে। কেউ কেউ টাকা না দেওয়ায় ওই যুবকদের হাত-পা বেঁধে মারধরের ভিডিও পাঠানো হয় স্বজনদের কাছে।
এরপর গত বছরের ২১ এপ্রিল ঈদুল ফিতরের দিন থেকে তাদের আর হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা আমাদের সন্তানদের ফিরে চাই, দালালদের বিচার চাই।
এদিকে এই মামলার অত্যতম আসামি লিবিয়া প্রবাসী ইব্রাহিম হোসেনের বাড়িতে গেলে স্বজনরা জানান, দীর্ঘদিন কারও সঙ্গে তার যোগাযোগ নেই। তবে স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ী অভিযুক্ত জামাল মিয়া টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ইব্রাহিম হোসেন আমার বন্ধু। সে লিবিয়া থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে তার অ্যাকাউন্টে কয়েকজনের টাকা পাঠাতে বলে। আমি পাটাকা পাঠিয়েছি। কিন্তু ওই গ্রামের যুবকরা বর্তমানে নিখোঁজ আছে জেনে খুব খারাপ লাগছে।
এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট মোহাম্মাদ ওয়াদুদ মিয়া বলেন, মঙ্গলবার আদালতে একটি মামলা হয়েছে। মামলাটি আদালত আমলে নিয়েছেন।
জেলার কলমাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম বলেন, আমি ঘটনাটি শুনেছি। এ ঘটনায় থানায় কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক শাহেদ পারভেজ বলেন, আমি আজকেই যোগদান করেছি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করবো।