রোহিত-ধাওয়ানের সেঞ্চুরিতে পাকিস্তানকে উড়িয়ে ফাইনালে ভারত

দুই দেশের রাজনৈতিক বৈরিতার কারণে এখন ভারত-পাকিস্তান লড়াই দেখা যায় কালেভদ্রে। তবে এশিয়া কাপের বদৌলতে পাঁচদিনের ব্যবধানে দুইবার দেখা গেল দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর ‘যুদ্ধ’। বহুল প্রতীক্ষিত প্রথম ম্যাচে লড়াইয়ের ছিটেফোঁটাও খুজে পাওয়া যায়নি। একপেশে ম্যাচে পাকিস্তানকে ৮ উইকেটে হারিয়েছিল ভারত।

আশা করা হয়েছিল দ্বিতীয় সাক্ষাতে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা যাবে। তবে আশায় গুড়েবালি। পরের দেখাতেও স্রেফ উড়ে গেল পাকিস্তান। সরফরাজ বাহিনীকে ৯ উইকেটে হারিয়েছে রোহিত ব্রিগেড। এ নিয়ে সবার আগে এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ের ১৪তম আসরের ফাইনালে উঠল টিম ইন্ডিয়া।

লক্ষ্যটা ছিল ছোট, ২৩৮। সেই লক্ষ্যে দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন রোহিত শর্মা ও শিখর ধাওয়ান। এতেই ক্ষ্যান্ত হননি তারা। শুরুতে কিছুটা সমস্যা হলেও পরে নিজেদের মধ্যে দারুণ বোঝাপড়া গড়ে তোলেন দুই ওপেনার। ধীরে ধীরে ভয়ংকর হয়ে উঠেন এ জুটি। ব্যাটতে তলোয়ার বানিয়ে পাকিস্তান বোলারদের কচুকাটা করেন তারা। বাজে বল পেলেই তা সীমানাছাড়া করেন। তাতে দুরন্ত গতিতে ছুটে ভারত। দুজনই এগিয়ে যান সেঞ্চুরির পথে।

৯৫ বলে ক্যারিয়ারের ১৫তম সেঞ্চুরি তুলে নেন ধাওয়ান। এতে জয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছে যায় টিম ইন্ডিয়া। তবে হঠাৎই পথ হারান গাব্বার সিং। ভুল বোঝাবুঝির শিকার হয়ে রানআউটে কাটা পড়েন তিনি। হাসান আলি ও শোয়েব মালিকের যুগলবন্দিতে রানআউট হওয়ার আগে ১০০ বলে ১৬ চার ও ২ ছক্কায় ১১৬ রানের নান্দনিক ইনিংস খেলে ফেরেন ধাওয়ান।

এ বাঁহাতি ওপেনার ফিরলেও থেকে যান রোহিত। পরক্ষণে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করেন তিনিও। ক্যারিয়ারের ১৯তম সেঞ্চুরি তুলে নেন হিটম্যান। শেষ পর্যন্ত জয় নিয়ে বিজয়ীর বেশে মাঠ ছাড়েন ভারতীয় অধিনায়ক। ১১১ রানে অপরাজিত থাকেন রোহিত। ১১৯ বলে ৭ চার ও ৪ ছক্কায় এ মহাকাব্যিক ইনিংস খেলেন তিনি। অপরপ্রান্তে ১২ রানে অপরাজিত থাকেন আম্বাতি রাইডু।

অবশ্য পাকিস্তানের ৯ উইকেটের বড় ব্যবধানে পরাজয়ের নেপথ্যে ফিল্ডারদেরও অবদান আছে। দুই দুইবার রোহিতকে ও একবার ধাওয়ানকে লাইফ উপহার দেন তারা। শুরুতে মোহাম্মদ আমির, শাহীন আফ্রিদির বলে ভারতীয় অধিনায়কের ক্যাচ ছাড়েন শাদাব খান ও ইমাম-উল হক। ধাওয়ানকে রানআউটের সুযোগ মিস করেন ফখর জামান। এছাড়া যাচ্ছেতাই বোলিং করেন পাক স্ট্রাইক বোলাররা। মোহাম্মদ আমির, হাসান আলি, শাহীন আফ্রিদি, শাদাব খানদের কেউই তুণ থেকে আউট করার মতো বল ছুড়তে পারেননি।

জিতলে ফাইনালের টিকিট, ব্যত্যয় ঘটলে অপেক্ষা বাড়বে। এমন সমীকরণ নিয়ে এশিয়া কাপের সুপার ফোর পর্বের ম্যাচে মুখোমুখি হয় ভারত-পাকিস্তান। রোববার দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাটিং নেন পাকিস্তান অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ। তবে শুরুটা ভালো হয়নি তাদের। সূচনালগ্নে যুজবেন্দ্র চাহালের এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে ফেরেন ইমাম-উল-হক। অবশ্য চাহালের দুর্দান্ত গুগলি ইমামের প্যাডে লাগলেও আউট দেননি আম্পায়ার। পরে ভারত রিভিউ নিলে আউট দিতে বাধ্য হন তিনি।

এরপর বাবর আজমকে নিয়ে প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করেন ফখর জামান। তারা এগুচ্ছিলেনও বেশ। তবে হঠাৎই ছন্দপতন। দলীয় ৫৫ রানে মায়াবী স্পিনার কুলদ্বীপ যাদবের বলে এলবিডব্লিউর শিকার হয়ে ফেরেন সাম্প্রতিক সময়ে ফর্মের তুঙ্গে থাকা ফখর (৩১)। স্কোর বোর্ডে আর ৩ রান যোগ হতেই ফেরেন বাবর। ভুল বোঝাবুঝির খেসারত গুনে রানআউটে কাটা পড়েন তিনি। চাহাল-জাদেজার যুগলবন্দিতে ফেরেন এ ইনফর্ম ব্যাটসম্যান। এতে বিপাকে পড়ে পাকিস্তান।

সেখান থেকে শোয়েব মালিককে নিয়ে দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন সরফরাজ আহমেদ। তাকে যোগ্য সহযোদ্ধার সমর্থন দেন মালিক। এক পর্যায়ে জমে উঠে তাদের জুটি। ভারতীয় বোলারদের চোখ রাঙাতে থাকেন তারা। দুর্দান্ত বোঝাপড়ায় স্কোর বোর্ডে রানের পর রান যোগ করতে থাকেন বর্তমান ও সাবেক অধিনায়ক। তাতে দুরন্ত গতিতে ছুটতে থাকে পাকিস্তান। কিন্তু হঠাৎই থেমে যান সরফরাজ। দলীয় ১৬৫ রানে অল্পের জন্য ফিফটি বঞ্চিত হয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। কুলদ্বীপ যাদবের বলে রোহিত শর্মার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে ৬৬ বলে ২ চারে ৪৪ রান করেন পাক অধিনায়ক। এতে মালিকের সঙ্গে তার ১০৭ রানের জুটি ভাঙে।

সরফরাজ ফিরলেও একপ্রান্ত আগলে রাখেন শোয়েব মালিক। আর ক্রিজে এসেই ঝড় তোলেন আসিফ আলি। এতে বড় স্কোরের স্বপ্ন দেখতে থাকে পাকিস্তান। কিন্তু ২০৩ রানে জাসপ্রীত বুমরাহর বলে উইকেটের পেছনে মহেন্দ্র সিং ধোনির তালুবন্দি হয়ে মালিক ফিরলে সেই স্বপ্ন ভেস্তে যায়। ফেরার আগে ক্যারিয়ারের ৪৩তম ফিফটি তুলে নেন এ মাস্টার ব্যাটার। শেষ পর্যন্ত ৯০ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৭৮ রানের লড়াকু ইনিংস খেলেন তিনি।

আসিফের ঝড়ও বেশিক্ষণ চলেনি। মালিকের পরপরই তার টর্নেডোও থামে। যুজবেন্দ্র চাহালের দুর্দান্ত গুগলিতে বোল্ড হয়ে ফেরেন তিনি। ফেরার আগে ২১ বলে ১ চার ও ২ ছক্কায় ৩০ রানের ক্যামিও খেলেন এ তরুণ। শেষ পর্যন্ত ৭ উইকেটে ২৩৭ রান তুলতে সক্ষম হয় পাকিস্তান। মোহাম্মদ নওয়াজ ১৫ ও হাসান আলি ২ রানে অপরাজিত থাকেন। খানিক আগে বুমরাহর শিকার হয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন শাদাব খান। ভারতের হয়ে বুমরাহ, চাহাল ও কুলদ্বীপ প্রত্যেকে নেন ২টি করে উইকেট।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top