যেখানে ভোট না দিলে জরিমানা

গত ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে অনেকেই দাবি করছে তারা ভোট দিতে পারেনি। আবার অনেকে ভোট দিতে যায়নি। একই অবস্থা হয়েছে ডিএসসিসির মেয়র নির্বাচনে। আর এই মাসে কয়েক ধাপে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোর অবস্থা তো আরো খারাপ। শতকরা হারে পাস মার্কের ভোটার পাওয়া যাচ্ছে না অনেক কেন্দ্রে। তিন ঘণ্টায় একটি ভোট পড়লে যা হয় আর কি। ভোটারদের আগ্রহই নেই ভোট দেয়াতে।

অথচ পুরো বিশ্বেই নির্বাচন ব্যবস্থাটি রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। একটি ভোটের যেমন গুরুত্ব রয়েছে, রয়েছে ভোটারেরও গুরুত্ব, রয়েছে তাদের মতামতের গুরুত্ব। এমনই একটি দেশ বেলজিয়াম। সেখানে ভোট না দিলে ভোটারের বাড়িতে চলে যাবে জরিমানার চিঠি।

বেলজিয়ামে ফেডারেল বা কেন্দ্রীয় নির্বাচন হবে ২৬ মে। গত ডিসেম্বরে অনাস্থা ভোটে হেরে প্রধানমন্ত্রী চার্লস মিশেল পদত্যাগ করেছেন। ফলে বেলজিয়ামের জনগণ এ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচিত করবেন।

দেশটিতে আঠারো বছরের বেশি বয়সী নাগরিকের ভোট দেয়া বাধ্যতামূলক। কোনো নাগরিক দেশের বাইরে থাকলে অনলাইনে ভোট দিতে পারেন, অথবা অন্য কাউকে লিখিতভাবে দায়িত্ব দিয়ে যেতে পারেন নিজের ভোটটা দিতে। এর অন্যথা হলেই ভোটারের পরিচয়পত্র ‘ট্র্যাক’ করে বাড়িতে জরিমানার চিঠি পাঠানো হয়।

ভোটপর্বে নিরাপত্তাবাহিনী ও পুলিশের ব্যবস্থা বেলজিয়ামেও আছে। তবে সাধারণত সেখানে ভোটের দিন কোনো গ-গোল হয় না। অনেক সময়ে সরকারি কর্মীদের সাহায্য করতে প্রার্থীরা নিজেরাই ভোটের কাজকর্মে এগিয়ে আসেন। গোপন ব্যালটে ভোট দেয়া হয় সেখানেও। ভোটাররা ভোট দিতে গেলে সেখানে অবশ্য আঙুলে কালির ব্যবহার হয় না। বরং ভোটারদের একটি ম্যাগনেটিক কার্ড দেয়া হয়, যেটি অ্যাক্টিভেট করে ভোট দিলে প্রিসাইডিং অফিসার নিশ্চিত হবেন যে ভোটদান হয়েছে।

বেলজিয়ামের পার্লামেন্ট বা কেন্দ্রীয় সরকারের মাথার ওপরের অবস্থান দেশটির রাজার। বর্তমান রাজার নাম ফিলিপ। প্রধানমন্ত্রী পদে কে জয়ী হলেন, ঘোষণা করবেন তিনিই। প্রধানমন্ত্রীকে শপথবাক্যও তিনি পাঠ করাবেন। এ ছাড়া, সেখানে পনের জনের মতো কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থাকেন। নির্বাচন কেন্দ্র ব্রাসেলসসহ মোট এগারোটি। একটি কেন্দ্রে একই দলের একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন পেতে পারেন। ভোটাররা চাইলে এক জন প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন অথবা একাধিক প্রার্থী মিলিয়ে একটি দলকে ভোট দিতে পারেন, অথবা প্রার্থীদের কাউকেই পছন্দ না হলে ‘নোটা ভোট’ও দিতে পারেন।

এর বাইরে বেলজিয়ামে আঞ্চলিক পার্লামেন্টের নির্বাচনও রয়েছে। সেখানে মোট ছ’টি সংসদ আছে- ফেডারেল বা কেন্দ্রীয় পার্লামেন্ট, ফ্লেমিশ পার্লামেন্ট (ডাচ-ভাষী এলাকার জন্য), ফ্রেঞ্চ পার্লামেন্ট (ফরাসি-ভাষী এলাকার জন্য), জার্মান পার্লামেন্ট (জার্মান-ভাষী এলাকার জন্য), ওয়ালোন পার্লামেন্ট (ওয়ালোনিয়া এলাকার জন্য) এবং ব্রাসেলস ক্যাপিটাল রিজিয়নের (রাজধানী) জন্য আলাদা পার্লামেন্ট।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top