মেহেরপুরে বিলুপ্ত জার্ডন হরবোলা পাখি

মেহেরপুর পৌর কলেজ কাননে একটি গাছ থেকে ঘুঘুর ডাক আসছে কিন্তু দেখা মিলছে না ঘুঘু‘র। থেমে থেমে কোকিল, শালিকসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখিরও ডাক শোনা যাচ্ছে। কিন্তু যে গাছ থেকে যে পাখির ডাক সেই পাখিটির দেখা মিলছে না। এ কাননে পাখি দেখতে আসা এক পাখি বিশেষজ্ঞ জানালেন, যে ডাকগুলো শোনা যাচ্ছে তা হরবোলা পাখির কন্ঠ থেকে। অনুকূল পরিবেশ হবার কারণে এখানে স্থায়ী হয়েছে একজোড়া হরবোলা পাখি। পাখি বিশেষজ্ঞ এম এ মুহিত প্রতিবছর বসন্ত মৌসুমে মেহেরপুর পৌর কলেজ কাননে পাখি দেখতে আসেন। রোববার সরেজমিনে পৌর কলেজে পাখি দেখতে গিয়ে এ পাখিটির সন্ধানের খবর জানান।

বাংলাদেশে তিন প্রজাতির হরবোলা রয়েছে, এদের নাম সোনাকপালি-হরবোলা, নীলডানা-হরবোলা এবং কমলাপেট-হরবোলা। (ঔবৎফড়হ’ং ষবধভনরৎফ) -এর বাংলা নাম নেই। পাখি বিশেষজ্ঞ এম এ মুহিত নতুন এ পাখিটির নামকরণ করেছেন ঔবৎফড়হ’ং ষবধভনরৎফ -এর বাংলা নাম জার্ডনের-হরবোলা।
মুহিত জানান- বাংলাদেশে তিন প্রজাতির হরবোলার বসবাস থাকলেও মেহেরপুর পৌর কলেজ কাননে কয়েক বছর আগে এ একজোড়া পাখি আসে। অনুকূল পরিবেশের কারণেই এখানে স্থায়ী হয়েছে বলেই তিনি মনে করছেন। পাখিটি দেখতে এখন সকাল বিকেল মানুষের ভিড় বাড়ছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা প্রফেসর ড. মনিরুল খান গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মেহেরপুর পৌর কলেজ কাননে এ পাখিজোড়া দেখতে আসেন। তিনি এ প্রতিনিধিকে বলেন- এখানে কলেজের বাগানে স্থায়ী নিবাস গড়া পাখিজোড়া দুর্লভ। মনিরুল খানের মতে এ ক্যাম্পাসের পাখি দুটি অদ্যবধি বাংলাদেশে প্রথম ও একমাত্র। উপযুক্ত পরিবেশের কারণেই পাখি এ ক্যাম্পাসকে বেছে নিয়েছে। মেহেরপুর জেলা বার্ড ক্লাবের সভাপতি এম এ মুহিত ২০১৫ সালে প্রথম পাখি দুটিকে সনাক্ত করে এবং পাখির নামকরণ করেছেন জার্ডনের হরবোলা নামে।

মনিরুল খান জানান- সাধারণত চিরসবুজ ও পাতাঝরা বনে এদের বিচরণ জোড়ায় জোড়ায়। এরা নিজস্ব মিষ্টি সুরে গান করে। অন্য পাখির কণ্ঠস্বর হুবহু নকল করতে পারে বলেই এদের নামের শেষে যোগ হয়েছে ‘হরবোলা’ শব্দটি। সারাদিন বন বাদাড়ে ঘুরে বেড়ালেও পাখি পর্যবেক্ষকরা এদের দেখা পান না সহজে, তবে কণ্ঠস্বর শুনতে পান। ওদের দৈহিক বর্ণটাই এমন যে, খুব সহজে পাতার আড়ালে নিজকে লুকিয়ে রাখতে পারে। বিচরণ ক্ষেত্র যত্রতত্র নয়। গ্রামাঞ্চলে খুব কমই দেখা মিলে। বৃক্ষচারী পাখি, পারতপক্ষে জমিনে পা রাখে না। খাবার সংগ্রহ করে গাছে গাছে উড়ে উড়ে।

পাখি প্রেমিক মুহিত জানান, এ পাখি দৈর্ঘ্য ১৫-১৭ সেন্টিমিটার। স্ত্রী ও পুরুষ পাখির চেহারায় খুব বেশি পার্থক্য নেই। পুরুষ পাখির ডানার বাঁকের ওপর উজ্জ্বল সবুজাভ নীল। অপরদিকে স্ত্রী পাখির চিবুকে কালোদাগ নেই। বাকি একই রকম। উভয়ের ঠোঁট ও চোখ কালো। নাবালক পাখিদের চেহারা স্ত্রী পাখিদের মতো। শিমুল পলাশ ফুলের মধু এদের খুব প্রিয়।

মেহেরপুর পৌর কলেজের সহকারি অধ্যাপক ভুগোলের শিক্ষক মাসুদ রেজা। তিনি কলেজে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগিয়ে পাখিদের আবাস গড়ে তুলেছেন। বিভিন্ন গাছে মাটির কলস দিয়েছেন বাসা করে ডিম পাড়ার জন্য। এ কাননে এখন বিভিন্ন প্রজাতির পাখি আবাস গড়েছেন।
সূত্র : বাসস

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top