মৃত্যুর আগে কি বয়স্ক/ বিধবা ভাতার কার্ড পাবে ৮০ বছরের এ নারী?

মো. আব্দুল কাইয়ুম : নির্বাচন আসে নির্বাচন যায়। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে অনেক চেয়ারম্যান মেম্বার নির্বাচনের আগে বয়স্ক ভাতার কার্ড দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও নির্বাচনের পর খোঁজ নেয়না কেউই। বরংচ, নির্বাচনের পর কার্ড এর জন্য মেম্বার চেয়ারম্যানদের কাছে গেলে দিবে দিবে বলে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে আসছে বছরের পর বছর। এমন কি কোন কোন ইউপি মেম্বার ধুর ধুর করে তাড়িয়ে দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত স্বামী ও ছেলে সন্তানহীন এই হতভাগার খোঁজ পর্যন্ত নেয়নি প্রশাসনের কেউই।

এমনি এক হতভাগার সন্ধান পাওয়া গেছে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে। উপজেলার সরিষা ইউনিয়নের মাছিমপুর গ্রামের  শামসুন্নাহার বেগম ইউনিয়নের সবচেয়ে বয়স্ক বিধবা নারী। তার স্বামী মারা গেছে বহু বছর আগেই। নেই কোন ছেলে সন্তান। বয়স ৮০ পার হলেও এখনো মেলেনি বয়স্কভাতা বা বিধবা ভাতার কার্ড। কার্ডের জন্য এর-ওর কাছে ধর্ণা দিয়েও এখনো ভাগ্যে জোটেনি মূল্যবান বয়স্কভাতা বা বিধবা ভাতার কার্ড!

জানা যায়, প্রায় ১৫ বছর আগে শামসুন্নাহার বেগমের স্বামী মারা যান।  জায়গা জমি বলতে ভিটে মাটিও তার নেই। অন্যের দেয়া আশ্রিত জায়গায় কোনোরকম মাথা গুজে দিন পার করছেন। ভিক্ষা করে ক’বেলাই বা চলে! কখনো দিনে একবেলা কখনো দু’বেলা খেয়ে না খেয়ে কোনোরকম দিন পার করছেন তিনি। সন্তান বলতে ৩ মেয়ে ছিলো শামসুন্নাহারের। শামসুন্নাহার বেগম গরীব হওয়ার কারণে মেয়েরাও তাদের স্বামীর ঘরে নির্যাতিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তার উপর অধিকাংশ সময়ই ছোট মেয়ে ওনার কাছে থাকেন।  দরিদ্রতা যেন তার জীবনে মহা-অভিশাপ। তার বড় মেয়েও বহু বছর আগে স্বামীর ঘরে সুচিকিৎসার অভাবে মারা যায়, সেই মেয়ের রেখে যাওয়া একটি ছেলের দায়িত্বও শামসুন্নাহারের ঘাড়ে। আবার ছোট মেয়ের ঘরেও একটি মেয়ে সন্তান আছে।

গ্রামবাসীর মতে, শামসুন্নাহার বেগমের মতো এমন ভিটে-মাটিহীন হত-দরিদ্র মানুষ পুরো গ্রাম তথা ওয়ার্ড জুড়ে একজনও নেই। চোখের সামনে তার এমন কষ্ট অনেককেই ছুয়ে যায়। তাদের মতে সরকার ওনাকে একটা ব্যবস্থা করে দিলে তারা সন্তুষ্ট থাকবেন বলে অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন।

মাছিমপুর গ্রামের আব্দুস ছাত্তার অভিযোগ করে বলেন, বয়স্কভাতা বা বিধবা ভাতার কার্ড পেতে হলেতো টাকা ও ক্ষমতার প্রয়োজন হয়। শামসুন্নাহারেরতো কোনটাই নেই। শামসুন্নাহার বেগমের মতো এমন ভিটে-মাটিহীন হত-দরিদ্র মানুষ পুরো গ্রাম তথা ওয়ার্ড জুড়ে একজনও নেই। চোখের সামনে তার এমন কষ্ট অনেককেই ছুয়ে যায়। তার মতে, শামসুন্নাহারের মতো একজন অসহায় বিধবা নারীর চলার মতো একটা ব্যবস্থা না হওয়া পুরো সমাজ ব্যবস্থার জন্য লজ্জাজনক।

শামসুন্নাহার বেগম আক্ষেপ করে জানান, প্রায় ১ যুগ ধরে স্থানীয় বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিরা কার্ড করে দেবার আশ্বাস দিয়ে আসলেও তার ভাগ্যে জুটেনি এখনো একটি বিধবা বা বয়স্কভাতা কার্ড। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, একে ওকে ভোট দিয়ে দেখেছি, ভোটের আগের দিন এসে হাতে পায়ে ধরে সবাই ভোট চেয়ে কার্ড দেয়ার আশ্বাস দিয়ে যায়, কিন্তু পরে ভুলে যায়। কার্ডের জন্যে তিনি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ঘুরতে ঘুরতে আজ ক্লান্ত। “মরার আগে কি আমারে কেউ কাড লইয়্যা দিতে হারবো” বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এ হতভাগা।

এব্যাপারে সরিষা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহজাহান ভূঞার সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে কলটি কেটে দেন।

সমাজসেবা অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, বয়স্ক জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও সামাজিক নিরাপত্তা বিধান, পরিবার ও সমাজে তাদের মর্যাদা বাড়ানো ও আর্থিক অনুদানের মাধ্যমে মনোবল জোরদারকরণের লক্ষ্যে মূলত সরকারের বয়স্ক ভাতার কার্যক্রম চালাচ্ছে। কিন্তু কর্মক্ষমতাহীন, শারীরিকভাবে অক্ষম এবং সর্বোচ্চ বয়স্ক ব্যক্তিকে ভাতা দেওয়া অগ্রাধিকারের কথা নীতিমালায় থাকলেও তা তৃণমূলে মানা হচ্ছে না। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এখানে নানান অনিময় করে চলেছেন।

 

 

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top