ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় যুবলীগ কর্মী আসাদুজ্জামান আসাদ হত্যায় জড়িত ও পরিকল্পনাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। নিহতের পরিবার ও তৃণমূল আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এতে সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, পৌরসভার মেয়র বিল্লাল হোসেন সরকার ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মাহাবুবুল আলম মনির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলা হয়।
মুক্তাগাছা উপজেলায় আওয়ামী লীগের রাজনীতি দুটি ধারায় বিভক্ত। একটি গ্রুপে নেতৃত্বদেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই আকন্দ। অপর গ্রুপে নেতৃত্ব দেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ। প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে পৌর মেয়র বিল্লাল হোসেন সরকার ও তার জামাতা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ সদস্য মাহাবুবুল আলম। মাহাবুবুল এলাকায় জামাই মনি হিসেবেই পরিচত। প্রতিমন্ত্রী ও উপজেলা চেয়ারম্যান গ্রুপের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্ধ বহু আগে থেকেই। গত অন্তত ৫ মাস ধরে প্রতিমন্ত্রী উপজেলা চেয়ারম্যান গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও মারামারির ঘটনায় থানায় একাধীক মামলা চলমান রয়েছে। অভ্যন্তরীণ বিরোধের জের ধরে গত সোমবার রাতে যুবলীগ কর্মী আসাদুজ্জামানকে হাত-পা থেঁতলে হত্যা করা হয়।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে তৃণমূল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই আকন্দসহ নেতারা ছিলেন। আবদুল হাই আকন্দ যুবলীগ কর্মী আসাদুজ্জামানকে কী ভাবে নৃংশভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয় তার বর্ণনা দিয়ে বলেন, এরকম পৈশাচিকতা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের মধ্যে দেখা যায়না। এর জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদকে দায়ী করে তিনি বলেন, মন্ত্রী হিসেবে থাকার কারণে আমরা তাকে আসামী করতে পারলাম না। তার সহযোগী মুক্তাগাছা পৌরসভার মেয়র বিল্লাল সরকার হুকুমে জামাতা মাহাবুবুল আলম মনির নেতৃত্বে ২৫-৩০ জনের মতো লোক ঘেরাও করে চায়ের দোকানে ফেলে নির্মমতা চালিয়ে হত্যা করে আসাদকে। তিনি আরও বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ ঘটনার চূড়ান্ত বিচার চাইছি। যারা সংগঠনের নেতৃত্বে থেকে এ ধরণের দুর্বৃত্তের কাজ করে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার আহবান জানান তিনি।
ওই সময় তিনি প্রতিপক্ষের ওপর জমিদখল, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ করে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতাদের অত্যাচার নির্যাতনের বর্ণনা দেন। তিনি আরও বলেন, পরিবহন চাঁদাবাজি জঘন্য পর্যায়ে গেছে মুক্তাগাছায়। গরিব অটো ও রিকশা চালকদের কাছ থেকে চাঁদা তোলে মনির ও তার নেশাখোর গ্যাং। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ভ্রাম্যমান আদালত চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে জেল দিয়েছে। তার পরেও বন্ধ হচ্ছে না।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত নিহতের স্ত্রী আছিয়া খানম বলেন, আগেও স্বামীকে একবার মেরেছিল সেই মামলার বিচার পেলে এখন হত্যার ঘটনা হতো না। আমি শুধু বিচার চাই।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে ভাঙা পা নিয়ে হাজির হন তারাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ও ভাঙা হাত নিয়ে উপজেলা তাঁতী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক নিজেদের পরিণতির জন্য যুবলীগ সভাপতি মাহাবুবুল আলমকে দায়ী করেন।
বৃহস্পতিবার যুবলীগের সভাপতি মাহাবুবুল আলম মনির ফোনে একাধীক বার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেন নি। তবে এর আগে এই যুবলীগ নেতা এসব ঘটনায় নিজের কোনো সম্পৃক্ততা নেই জানিয়ে প্রকৃত ঘটনা বের করে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছিলেন তিনি। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদও গণমাধ্যমকে বলছেন, কোনো হত্যাকান্ডই কাম্য নয়। জড়িত প্রত্যেককেই আইনের আওতায় আনতে বলা হয়েছে।
হত্যার ঘটনার পরপর পুলিশ নাহিদ হাসান রাজিব, শহীদুল ইসলাম ওরফে শহীদ এবং সামিউল ইসলাম খোকনকে গ্রেপ্তার করে গত বুধবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। তারা তিনজনই যুবলীগের সভাপতি মাহাবুবুল আলমের কর্মী বলে এলাকায় পরিচিত। পুলিশ হত্যায় ব্যবহৃত ১০টি দেশীয় অস্ত্র ইতোমধ্যে উদ্ধার করেছে।
ময়মনসিংহ পুলিশ সুপার (এসপি) মাছুম আহাম্মদ ভূঞা বলেন, হত্যায় জড়িত সকলকে আইনের আওতায় আনা হবে। ইতোমধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। স্থানীয় রাজনৈতিক আধিপত্য ও চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে হত্যার ঘটনাটি ঘটেছে। এলাকায় আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে।