ভাড়া করে চক্রান্ত শুরু হয়েছে : নাসিম

কোনো দলের ঠিকানা নেই এমন পরানের দোস্তদের ভাড়া করে চক্রান্ত শুরু হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম।

শনিবার বিকালে রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে মহানগর ১৪ দলের বিশাল কর্মিসভায় এ মন্তব্য করেন তিনি।

ঢাকা মহানগর কেন্দ্রীয় ১৪ দলের কর্মিসভা হলেও তা রূপ নেয় বিশাল সমাবেশে। ঢাকার আসনগুলোতে মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা বিশাল শোডাউন করেছেন।

সভাপতির বক্তব্যে ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আবার চক্রান্ত শুরু হয়ে গেছে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে চক্রান্ত শুরু হয়ে গেছে। এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে এটা ২০১৪ না, এটা ২০১৮ সাল। কোনো দলের ঠিকানা নেই এমন পরানের দোস্তদের ভাড়া করে চক্রান্ত শুরু করেছে।

তিনি বলেন, নেতাকর্মীদের সাবধানে থাকতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে। আপনারা ডাক দিলেই ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ডাক দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘর থেকে বেরিয়ে আসার প্রস্তুতি নিয়ে থাকুন।

দেশবাসীর উদ্দেশে নাসিম বলেন, আমাদের ছোটখাটো ভুল থাকতে পারে, আমরা সেই ভুলগুলো সমাধানের চেষ্টা করছি, আমাদের দলের এমপি জেলে, মন্ত্রীরা কোর্টে হাজিরা দিচ্ছে। আপনারা যদি ভুল করেন তাহলে দেশে সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য হবে। আবার ২০১৪ সালের মতো চক্রান্ত করলে কোনো ধরনের ছাড় দেয়া হবে না বলেও মন্তব্য করেন নাসিম।

এদিকে অক্টোবরজুড়ে সমাবেশের ডাক দিয়েছে ১৪ দলীয় জোট। আগামী ৯ অক্টোবর রাজশাহী, ১০ অক্টোবর নাটোর এবং ১৩ অক্টোবর খুলনায় সমাবেশ করবে ১৪ দল। অক্টোবরের শেষের দিকে ঢাকায় মহাসমাবেশ করার কথাও জানান ১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম।

নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতিহত করতে সারা দেশে ১৪ দলের নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়ে জোটের মুখপাত্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, প্রস্তুতি নিন সবাইকে ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

এ ছাড়া সমাবেশ থেকে অক্টোবরজুড়ে রাজনীতির মাঠ দখলে রাখতে অন্যান্য নেতারা জোটের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন।

সমাবেশে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, নির্বাচন আসছে, সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া যখন পানির মধ্যে ডুবে যাচ্ছে তখন তাকে টেনে তোলার জন্য যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়েছে।

তিনি বলেন, সারা দেশের সব নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নিয়ে থাকতে হবে। যাতে করে আবার রেললাইন উপড়ে ফেলতে না পারে, আবার যেন পেট্রলবোমা না মারতে পারে। সবাইকে প্রস্তুতি নিয়ে থাকতে হবে।

২০ দলীয় জোটের নিরপেক্ষ সরকারের দাবিকে ‘ভূতের মুখে রাম রাম’ দাবি করে আমু বলেন, ৯১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকার সংবিধান পরিবর্তন করেছে। সেই সংবিধানের আলোকে ৯৬-এ বিনা ভোটে নির্বাচন দিয়েছে। আর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সেই অবৈধ সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে দিয়েছিলাম আমরা। আর সেই বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের মুখে যখন শুনি নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা তখন এটা ‘ভূতের মুখে রাম রাম’ ছাড়া আর কিছু না।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, নির্বাচন বানচাল করতে ১/১১ এর সরকারের সহযোগীরাই আবার ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য মাঠে নেমেছে একটি মহল। আজকে আমরা সমবেত হয়েছি এই মহানগর নাট্যমঞ্চে কয়েক দিন আগে যারা হাতে হাত মিলিয়েছে তাদের জবাব দিতে।

তিনি বলেন, এরা কারা? এরাই ১/১১ এর সেনাশাসিত সরকারের পরামর্শদাতা। বিভিন্ন দল থেকে বাদপড়া, বহিষ্কার হওয়া নেতারা আজকে ঐক্যে যুক্ত হয়েছেন। তারাই ১/১১ এর সরকারে কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছেন, আবার তারা ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন যদি কিছু পায়।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, তারা ঐক্য করেছে, কীসের ঐক্য। তারা বাঘ মারার ডর দেখাচ্ছে। আজম খানের গানে আছে, ‘বাঘ মারতে যামু, আমি আর মামু’। বাগ মারতে যাওয়ার ডর আমাদের দেখিয়ে লাভ হবে না।

জাতীয় পার্টি জেপির চেয়ারম্যান ও পানিসম্পদমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, সামনে নির্বাচন আসছে, যথাসময়েই নির্বাচন হবে। নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচনের বিকল্প কিছু হতে পারে না। নির্বাচনের বিকল্প যা হয়, তাতে মানুষের কল্যাণ হয় না। যা ১/১১ সময়ে প্রমাণিত হয়েছে। ষড়যন্ত্রের ডাল ভেদ করে সঠিক সময়েই নির্বাচন হবে।

জাসদ একাংশের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যারিস্টাররা এক হয়ে রাজনীতিতে ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত শুরু করেছেন। ড. কামাল হোসেন, বি চৌধুরী, মান্না সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করছেন। ১৪ দলের নেতাকর্মীরা যে কোনো ষড়যন্ত্র চক্রান্ত প্রতিহত করবে।

জাসদের অপর অংশের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আকতার বলেন, দেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতার ওপর যখনই আঘাত এসেছে, তখনই ১৪ দল লড়াই করে তা রক্ষা করেছে। আগামীতেও জাতীয় ঐক্যের নামে যারা ষড়যন্ত্রের চেষ্টা করছে তাদের প্রতিহত করবে ১৪ দল।

তিনি বলেন, বি চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেন হচ্ছেন ষড়যন্ত্রকারী চক্র। নির্বাচন বানচালের চক্রান্ত করা হলে তাদের প্রতিহত করা হবে।

জাতীয় ঐক্যের নেতাদের সমালোচনা করে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, জাতীয় ঐক্যের নেতারা বসন্তের কোকিলের মতো। যখনই বসন্ত ভাব দেখেন, তখনই তারা কুহু কুহু ডাক দেন। ড. কামাল হোসেন, বি চৌধুরীরা হচ্ছেন ১/১১ মাইনাস টু ফর্মুলার নায়ক। সে সময়ে ব্যর্থ হয়ে তারা আবার জোট গঠন করে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, জাতীয় ঐক্যের সঙ্গে ঐক্য আছে জাতি নেই। রাজনীতিতে প্রত্যাখ্যাত কিছু নেতারা জোট গঠন করে দেশের বিরুদ্ধে, সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। ওরা নির্বাচন বন্ধের ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু ১৪ দলের নেতাকর্মীরা তাদের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করবেই।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, রাজনীতিতে হতাশাগ্রস্ত রাজনীতিতে নিক্ষিপ্ত, জনবিচ্ছন্নরা একত্র হয়ে জোট গঠন করে দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া এবং পলাতক তারেক রহমানকে রক্ষা করতে চাইছেন। দেশে কোনো সহায়ক সরকার, তত্ত্বাবধায়ক সরকার হবে না। স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন হবে। সেই সরকারের প্রধান থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কারো দাবি মেনে নেয়া হবে না।

এ ছাড়া সমাবেশে তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, জেপি মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম, ন্যাপের ইসমাইল হোসেন, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাৎ হোসেন, বাসদের আহ্বায়ক রেজাউর রশীদ খান, গণআজাদী লীগের এসকে সিকদার, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওছার, পেশাজীবীদের মধ্যে নিম চন্দ্র ভৌমিক বক্তব্য রাখেন।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top