ভারতের পরীক্ষার পর মহাকাশে সংঘাতের আশঙ্কা বেড়েছে ৪৪ শতাংশ

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কয়েকদিন আগে হঠাৎ করে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে দাবি করেন, ভারত এখন মহাকাশেও নিজেদের শক্তিশালী জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়েছে। এখন তারা অ্যান্টি স্যাটেলাইট মিসাইলের কার্যকরী প্রয়োগ করতে পারছেন। ফলে বিশ্বে এখন এ ক্ষেত্রে তারা চতুর্থ অবস্থানে রয়েছেন।

এর কৃতিত্ব নিয়ে ভারতের নির্বাচনপূর্ব রাজনীতিতে বেশ কয়েকদফা বাগযুদ্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু সম্প্রতি মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা জানিয়েছে, ভারতের এ পদক্ষেপে মহাকাশে ভয়াবহ একটি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ পরীক্ষার পর মহাকাশের উপাদানগুলোর মধ্যে সংঘাতের আশঙ্কা বেড়েছে ৪৪ শতাংশ।

নাসা দাবি করছে, ভারতের ওই অ্যান্টি স্যাটেলাইট পরীক্ষায় মহাকাশে শ’চারেক ধ্বংসাবশেষ তৈরি হয়েছে। নাসার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ওই পরীক্ষার ফলে মহাকাশে যেসব ধ্বংসাবশেষ তৈরি হয়েছে। তার ফল হতে পারে মারাত্মক।

নাসার কর্মকর্তা জিম বার্ডেস্টাইন জানান, ভারতের চালানো ওই পরীক্ষার পর মহাকাশের এদিকে সেদিকে যে সব ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে তার সবকটিকে না হলেও কয়েকটিকে সন্ধান করা সম্ভব। ১০ সেন্টিমিটার বা তার চেয়ে বড় এমন ৬০টি ধ্বংসাবশেষের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে।

জিম বলেন, পরীক্ষাটি চালানো হয়েছিল নিম্ন অক্ষপথে। তাই এসব ধ্বংসাবশেষ অন্যান্য কর্মরত উপগ্রহের কাছাকাছি পৌঁছে যাবে এমন সম্ভাবনা কম থাকলে ২৪টি ধ্বংসাবশেষ উপরের দিকে যাচ্ছে। জিমের মতে, এভাবে ধ্বংসাবশেষ উপরের দিকে উঠে যাওয়া একটি ভয়াবহ বিষয়। আগামী সময়ের মহাকাশ চর্চার জন্য এটি ভাল উদাহরণও নয়। আমাদের পক্ষেও এটা মেনে নেয়ার কোনো সুযোগ নেই।

এর আগে ২০০৭ সালে চীন এ স্যাট বা অ্যান্টি স্যাটেলাইট টেস্ট করেছিল। সে সময় তিন হাজার ধ্বংসাবশেষ তৈরি হয়েছিল। স্বাভাবিকভাবে মহাকাশে নজরদারি চালায় মার্কিন সামরিক বাহিনী। দুটি বা ততোধিক বস্তুর মধ্যে সংঘাতের সম্ভবনা আছে কি না সেটাই দেখে তারা। ১০ সেন্টিমিটার বা তার থেকে বড় এমন ২৩ হাজার উপাদান নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করছে তারা। আর এর মধ্যে ১০ হাজারই হল কোনো না কোনো ধ্বংসাবশেষ।

কী এই অ্যান্টি স্যাটেলাইট মিসাইল
এ মিসাইলকে বলা হয় অ্যান্টি স্যাটেলাইট মিসাইল মিসাইল। সামরিক ও প্রতিরক্ষাগত কারণে এই অস্ত্রেই ধ্বংস করা হতে পারে শত্রুপক্ষের স্যাটেলাইট। মূলত মহাকাশে যুদ্ধ পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্যই এ অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। এখন পর্যন্ত ভারতসহ চারটি দেশের হাতে এই অস্ত্র রয়েছে। আমেরিকা, রাশিয়া, চীন ও ভারত- এই চার দেশ এখনও পর্যন্ত এই অস্ত্রের সফল পরীক্ষা করেছে।

মূলত শক্তি প্রদর্শনের জন্যই এই ধরনের পরীক্ষা করে থাকে বিভিন্ন দেশ। এ মিসাইলের সাহায্যে শত্রুপক্ষকে দুর্বল করে দেয়া যাবে সহজেই। স্যাটেলাইট পাঠানো হয় দেশের বিভিন্ন কাজে। আর সেই স্যাটেলাইট যদি ধ্বংস করে দেওয়া হয়, তাহলে সেই দেশ অনেকাংশেই দুর্বল হয়ে পড়বে। ফলে এটি শুধু একটি হাতিয়ার নয় এমন একটি শক্তি যা থাকলে শত্রুপক্ষ ভয় পেতে বাধ্য।

ভারত দাবি করছে, পরীক্ষা চালাতে গিয়ে তারা অন্য কোনো দেশের স্যাটেলাইট ধ্বংস করেনি। কোনে দেশের ক্ষতিও করেনি। নিজেদের দেশের একটি স্যাটেলাইটই ধ্বংস করা হয়েছে। এমন একটি স্যাটেলাইট ধ্বংস করা হয়েছে, যার কাজ শেষ হয়ে গেলেও সেটি এখনও মহাকাশে ছিল। সেই অকেজো স্যাটেলাইটকেই পরীক্ষামূলকভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। কিন্তু তাতেই যেসব ধ্বংসাবশেষ তৈরি হয়েছে তার ব্যাপারে সতর্কতা উচ্চারণ করেছে নাসা।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top