বিপর্যস্ত পাকিস্তানের পাশে বিশাল বরাদ্দ নিয়ে সৌদি যুবরাজ

পাকিস্তানের সাথে দুই হাজার কোটি ডলারের কয়েকটি বিনিয়োগ চুক্তিতে সই করেছে সৌদি আরব। গত রোববার মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশটির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের উদ্ধৃতি দিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত টিভি আরাবিয়া এ তথ্য জানায়।

এশিয়ায় কূটনৈতিক সফরের প্রথমেই ইসলামাবাদ গিয়ে মোহাম্মদ সাতটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকে সই করেন। এ চুক্তির ফলে মন্দা অর্থনৈতিক অবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে আশা করছে পাকিস্তান।

সৌদি যুবরাজের বিমান পাকিস্তানের আকাশসীমায় প্রবেশের পর পাকিস্তান বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান তাকে স্বাগত জানিয়ে নিয়ে আসে। পরে তাকে বিমানবন্দর থেকে অভ্যর্থনা জানিয়ে নিয়ে আসেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এবং সরকারি ও সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা। এ সময় সেখানে দেশটির মন্ত্রিসভার সদস্যরা এবং সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া উপস্থিত ছিলেন।

সেখান থেকে ইমরান খান তাকে নিজে গাড়ি চালিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে নিয়ে আসেন। সেখানে সৌদি যুবরাজকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়।

এমবিএস নামে পরিচিত সৌদি যুবরাজ দুই দিনের সফরে পাকিস্তান আসেন। প্রত্যাশা করা হয়েছিল এ সফরে তিনি এক হাজার কোটি ডলারের বিভিন্ন চুক্তিতে সই করবেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ইরানের সীমান্তে একটি তেল সংশোধনাগার স্থাপন। কিন্তু পাকিস্তানের সেই প্রত্যাশা ছাড়িয়ে সৌদি যুবরাজ শেষ পর্যন্ত দ্বিগুণ অংকের চুক্তিতে সই করেন। ফলে অর্থনীতিতে নাজুক অবস্থায় থাকা পাকিস্তানের নতুন সরকারের জন্য এটি বেশ ইতিবাচক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

পাকিস্তান সফরের পর সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ ভারত সফরে যাবেন। সেখানে পাকিস্তানের সাথে ভারতের সাম্প্রতিক সম্পর্কের ব্যাপারটি গুরুত্ব পেতে পারে। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী সিআরপিএপের গাড়ি বহরে জয়েশ-ই মোহাম্মদের এক আত্মঘাতী হামলায় ওই বাহিনীর ৪৪ জন সদস্য নিহত হয় এবং বহু আহত হয়। এ হামলায় ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করেছে। ইসলামাবাদ এ অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছে।

ভারত এ হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে বিশে^ তাকে একঘরে করে ফেলারও চেষ্টা চালিয়েছিল। কিন্তু চীনের বাধার মুখে দিল্লির সে প্রচেষ্টা সফল হয়নি। এ অবস্থায় ভারতের অন্যতম মিত্র সৌদি আরবের এ পদক্ষেপও ভালো চোখে দেখছে না দিল্লি। অবশ্য পাকিস্তানে যে দিন আসার কথা ছিল মোহাম্মদ বিন সালমানের, সেদিন না এসে একদিন পরে ইসলামাবাদ আসেন। ধারণা করা হচ্ছে, হামলার প্রেক্ষিতে উদ্ভুত পরিস্থিতির কারণেই এ বিলম্ব করা হয়েছে।

এদিকে এই সপ্তাহেই ইরানে এক হামলায় রেভ্যুলুশনারি গার্ডের ২৭ জন সদস্য নিহত হয়। ইরান দাবি করছে পাকিস্তানভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী জয়েশ-ই আদল এ হামলা চালিয়েছে। ইরান এ হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করলে ইসলামাবাদ এ অভিযোগও অস্বীকার করে। এ অবস্থায় সৌদি আরবের সাথে এ ধরনের ঘনিষ্ঠতাও ইরানের কাছে দৃষ্টিকটু লাগছে। অবশ্য পাকিস্তানের নতুন সরকার একই সাথে রিয়াদ ও তেহরানের সাথে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে চলছে।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে চলমান বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেই তিনি এ সফরে আসেন। সেখানে যুবরাজের এ বিনিয়োগ স্বস্তি বয়ে আনবে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। আন্তর্জাতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে ভারসাম্যহীনতায় ভুগছে পাকিস্তান। আশা করা হচ্ছে, এসব চুক্তি টালমাটাল অর্থনৈতিক অবস্থা থেকে পাকিস্তানকে কিছুটা হলেও নিষ্কৃতি দেবে।

সৌদি সালমান ইমরান খানকে কী কী দিলেন?
বৈদেশিক পাওনা পরিশোধে সংকট নিরসনে পাকিস্তানকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে পদক্ষেপ নিতে হবে আর সে কারণেই দেশটি আন্তর্জাতিক সহায়তা কামনা করছিল।

দুই দেশের মধ্যে যে সব চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে তার মধ্যে আছে বন্দরনগরী গোয়াদরে একটি ওয়েল রিফাইনারি স্থান করা হবে আট বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে। এর বাইরেও জ্বালানি, পেট্রোকেমিকেল ও খনিজ খাত নিয়ে দু’পক্ষ বেশ কিছু সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে।

যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বলেছেন, প্রথম ধাপের জন্য এটা বেশ বড়। তবে এটা প্রতি মাসে ও প্রতি বছর বাড়বে, যা দু’দেশের জন্যই উপকারী হবে।

পাকিস্তান নগদ অর্থের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল। নানা সমস্যায় জর্জরিত দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ আছে মাত্র আট বিলিয়ন ডলার। সে কারণে বৈদেশিক দেনা পরিশোধে দেশটিকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এজন্য একদিকে বন্ধু দেশগুলোর কাছে সহায়তা চাইছেন, আবার দেশের অভ্যন্তরে ভর্তুকির পরিমাণ কমিয়ে আনার চেষ্টা করছেন।

সূত্র : বিবিসি ও ডেইলি সাবাহ


Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top