বাংলাদেশে ‘ব্রেন ডেড’ ব্যক্তিদের দেহ থেকে কিডনি প্রতিস্থাপন শুরু হচ্ছে

কিডনিসংক্রান্ত জটিলতায় ভুক্তভোগী রোগীদের ব্যাপক চাহিদার প্রেক্ষিতে দেশে ‘ব্রেন ডেড’ ব্যক্তিদের দেহ থেকে কিডনি প্রতিস্থাপনের মতো যুগান্তকারী ঘটনা প্রত্যক্ষ করতে যাচ্ছে দেশের স্বাস্থ্য খাত।
সরকার গত বছর ‘ব্রেন ডেড’ আত্মীয়দের অনুমতিসাপেক্ষে মৃত ব্যক্তির অঙ্গ প্রতিস্থাপনের বিধান রেখে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দানের আইন সংশোধন করার পর এ উদ্যোগ নেয়া হলো।
প্রথমবারের মতো ‘ব্রেন ডেড’ ব্যক্তির দেহ থেকে কিডনি প্রতিস্থাপনের বিষয়টি পরিচালনার জন্য দেশীয় চিকিৎসকরদের পাশাপাশি কোরিয়া থেকে একটি সার্জিক্যাল টিম আজ রোববার ঢাকায় এসে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। ফলে কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য অপেক্ষমাণ প্রায় পাঁচ হাজার রোগী কিছুটা স্বস্তি পাবেন।

বাংলাদেশ-কোরিয়া কিডনি প্রতিস্থাপনকারী দলের সমন্বয়কারী ডা. এ এস এম তানিম আনোয়ার বাসসকে বলেন, দক্ষিণ কোরীয় দলটি এখানে আসবেন ১০ ফেব্রুয়ারি। যদি কোনো ‘ব্রেন ডেড’ দাতা পাওয়া যায় এবং চূড়ান্তভাবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের সম্মতি পাওয়া যায়, তাহলে দেশের প্রথম মৃতদেহের দানকৃত অঙ্গ প্রতিস্থাপনের বিষয়টি তারা পরিচালনা করবেন।
এ উদ্যোগকে দেশের কিডনি প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশে কিডনি প্রতিস্থাপনের বার্ষিক চাহিদা প্রায় পাঁচ হাজার। কিন্তু গড়ে বছরে প্রায় ১২০ জন তাদের আত্মীয়দের কাছ থেকে প্রতিস্থাপনের জন্য কিডনির ব্যবস্থা করতে পারেন।’

তিনি আরো বলেন, জীবিত দাতাদের (ব্যক্তি) কাছ থেকে কিডনি প্রতিস্থাপন আমাদের জন্য নতুন কোনো বিষয় নয়, ১৯৮২ সাল থেকেই আমরা এটি করছি। এখন আমরা ‘ব্রেন ডেড’ ব্যক্তিদের কাছ থেকে তা করার প্রস্তুতি নিয়েছি, এমনকি অন্যান্য উন্নত দেশের পাশাপাশি আমাদের প্রতিবেশি ভারত, শ্রীলঙ্কায়ও তা শুরু হয়েছে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কিডনি বিশেষজ্ঞ ডা: আনোয়ার জানান, কোরীয় বিশেষজ্ঞ দলটি সফরকালে বাংলাদেশী চিকিৎসকদের এ ধরনের কিডনি প্রতিস্থাপনের বিষয়ে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেবেন।

এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির প্রতি গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের জনগণ আবেগ, মূল্যবোধ ও ধর্মীয় গোঁড়ামির কারণে তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করতে বিব্রত বোধ করেন। এটি বাংলাদেশে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দানের ক্ষেত্রে বিরাট চ্যালেঞ্জ।
ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা আবদুল্লাহ আল মারুফ এ বিষয়ে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) একটি সিদ্ধান্তের উল্লেখ করেন। ওই সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, যেকোন ব্যক্তি তার মৃত্যুর আগে বা পরে ‘মানুষের কল্যাণে’ নিজের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করতে পারেন।

তিনি বাসসকে বলেন, ‘ইসলামের মূলনীতি অনুযায়ী একজন ব্যক্তি তার নিজের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রি করতে পারেন না। এর কারণ ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অতি মূল্যবান এবং সেগুলো বাণিজ্যিকভাবে বিক্রয়যোগ্য সামগ্রী নয়।’
উল্লেখ্য, কিডনি দাতা প্রাপ্তিসাপেক্ষে রাজধানীর পাঁচটি হাসপাতালের যে কোনোটিতে কিডনি প্রতিস্থাপন করা যাবে। হাসপাতালগুলো হলোÑ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বাংলাদেশ কিডনি ফাউন্ডেশন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, বারডেম ও সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ)।

সূত্র : বাসস

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top