বছরের শুরুতেই ময়মনসিংহ জেলা পুলিশের সাফল্য

মো. আব্দুল কাইয়ুম : ২০২০ সালের শুরুতেই ময়মনসিংহের জেলা পুলিশ দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা, সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষা ও শৃঙ্খলামূলক কর্মকান্ডে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলিরে সফলতা নিয়ে জেলা পুলিশ মিট দ্যা প্রেসের আয়োজন করে। নবাগত পুলিশ সুপার মোহা: আহমার উজ্জান বিপিএম মিট দ্যা প্রেসে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। মিট দ্যা প্রেসে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। নবাগত পুলিশ সুপার নতুন বছরের শুরু থেকেই দায়ীত্বশীল ভূমিকা নিয়ে জেলা পুলিশকে আরো আধুনিকায়ন ও সুশৃঙ্খল করে জেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখছেন। জানুয়ারী মাসের উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলো হলো-

“মুক্তাগাছা থানার গনধর্ষণ মামলার সাফল্য”
গত ১০/০১/২০২০ ইং তারিখ জেলা পুলিশ জানতে পারে মুক্তাগাছা থানাধীন অপ্রাপ্ত বয়স্ক আমেনা (১৮), পিতা-আলম, সাং-পোড়াবাড়ী (বটতলা), ময়মনসিংহ গনধর্ষণের স্বীকার হয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পরবর্তীতে জানা যায় ৬/৭ মাস পূর্বে ৬/৭ জন কর্তৃক ভিকটিম ধর্ষিত হয়েছে। এই সংক্রান্তে ভিকটিমের পিতা মোঃ আলম বাদী হয়ে মুক্তাগাছা থানায় অভিযোগ করলে মুক্তাগাছা থানার মামলা নং-১৬, তারিখ-১০/০১/২০২০ ইং ধারা-নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০(সংশোধনী/২০০৩) এর ৭/৯(৩)/৩০ রুজু হয়।

মামলাটি জেলা গোয়েন্দা শাখা তদন্তকালে ইতিমধ্যে ঘটনায় জড়িত অন্যতম আসামীঃ-
১। মোঃ শাকিল হোসেন @ খালেদ সাইফুল্লাহ (২০),পিতা- মৃত দেলোয়ার হোসেন, মাতা-মোছাঃ সাফিয়া খাতুন,
২। মোঃ নাঈমুল ইসলাম নাঈম (১৯), পিতা-করম আলী, উভয় সাং-বোররচর মৃধাপাড়া, থানা-কোতয়ালী,জেলাময়মনসিংহ,
৩। হোসেন @  হোসেন আলী @ মনির হোসেন (২০), পিতা-নেওয়াজ আলী, মাতা-মনোয়ারা বেগম,
৪। মোঃ আঃ হাই ওরফে হাইয়্যু (৩০), পিতা-মোঃ আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে বাক্কা, মাতা-মোছাঃ ফিরোজা বেগম, উভয় সাং-বড় গুজিয়াপাড়া, থানা-সদর, জেলা-জামালপুরদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। ৩ জন ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে। ঘটনায় জড়িত অপরাপর আসামীদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত আছে।

“কোতোয়ালী থানার চাঞ্চল্যকর জোড়া খুন”

১৬/০১/২০২০ তারিখ ময়মনসিংহ কোতোয়ালী থানাধীন খাগডহর ঘুন্টি এলাকায় নিজ বাসায় স্বামী কর্তৃক স্ত্রী মোছাঃ ফাহমিদা সুলতানা রুমা (৩৮) এবং পরবর্তীতে মেয়ে  লাবিবা আফরিন নাফিয়া (১২)কে স্কুল থেকে ডেকে এনে হত্যা করে। একইভাবে ২য় মেয়েকে স্বামীর বাড়ী থেকে ফোনে ডেকে এনে হত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে উক্ত লোমহর্ষক হত্যাকান্ডটি প্রকাশিত হয়। উক্ত ঘটনায় সাদিয়া আফরিন লাবন্য বাদী হয়ে কোতোয়ালী থানায় অভিযোগ করলে কোতোয়ালী মডেল থানার মামলা নং-৭৯, তারিখ-১৬/০১/২০২০ ইং ধারা-৩০২/৩২৫/৩০৭/২০১ পেনাল কোড রুজু হয়। জোরা খুনের ঘটনায় থানা ও ডিবি পুলিশ যৌথ অভিযান করে ঘাতক আসামী ১। শফিকুল ইসলাম শাহীন (৪২), পিতা-শাহাবুদ্দিন শাহু, মাতা-নূরজাহান বেগম শেফালী, সাং-খাগডহর ঘুন্টি ফফিরবাড়ী, থানা-কোতোয়ালী, জেলা-ময়মনসিংহকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে কিশোরগঞ্জ জেলার সদর থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। উক্ত আসামী লোমহর্ষক হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।

“স্কুলছাত্র হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন”

কোতোয়ালী থানাধীন এইচ এফ হৃদয় আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীর ছাত্র মোঃ কাউছার (১৬) গত  ইং ০৪/০২/২০২০ তারিখ দুর্বৃত্তের  ছুরিকাঘাতে নিহত হয়। উক্ত ঘটনায় ভিকটিমের পিতা মোঃ মোক্তার মিয়া বাদী হয়ে কোতোয়ালী থানায় অভিযোগ করলে কোতোয়ালী মডেল থানার মামলা নং-১৮, তারিখ-৫/২/২০২০ ইং, ধারা-৩০২/৩৪/১০৯ পেনাল কোড রুজু হয়। কোতোয়ালী থানা পুলিশ মামলাটি তদন্তকালে দ্রæততম সময়ে গত ইং ০৭/০২/২০২০ তারিখ মামলার ঘটনায় জড়িত আসামী ১। সাগর মিয়া (১৭), পিতা-সাজু মিয়া ওরফে সাজু মিস্ত্রী, সাং-চুরখাই, ২। সিয়াম (১৬), পিতা-সাইদুল ইসলাম, সাং-ভাটি বাড়েরা, ৩।নাহিদুল ইসলাম (১৭), পিতা-সিরাজুল ইসলাম, সাং-পনঘাগড়া মাদ্রাসার পিছনে, সর্ব থানা-কোতোয়ালী, জেলা-ময়মনসিংহদের গ্রেফতার সহ হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে।

“চোরাই মটর সাইকেল এবং ক্যামেরা উদ্ধার”

একটি সংঘবদ্ধ আন্তঃজেলা মোটর সাইকেল চোর ময়মনসিংহ জেলায় মটর সাইকেল চুরি করে আসছে। গত ইং ২৪/০১/২০২০ তারিখ জনাব এস এম ফয়জুর রহমানের বসত বাড়ী থেকে একটি মটর সাইকেল চুরি হয়। এই ঘটনায়  কোতোয়ালী  থানার মামলা নং-১১০, তারিখ-২৫/০১/২০১৯ ইং, ধারা-৩৭৯ পেনাল কোড রুজু হয়। মামলাটি তদন্তকালে জেলা গোয়েন্দা শাখা ঘটনার সহিত জড়িত আসামী ১। মোঃ আলমগীর হোসেন ওরফে টুলু (৩৮), পিতা-মৃত আব্বাস আলী সিকদার, মাতা-সখিনা বেগম, সাং-বানিয়াবাড়ী, থানা-মধুপর, জেলা-টাঙ্গাইল গ্রফতার করতে সক্ষম হয়। গ্রেফতারকৃত আসামীর হেফাজত থেকে বাদীর চুরি যাওয়া মোটর সাইকেল উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামী চুরির দায় স্বীকার করে বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।

গত ইং ২৩/১২/২০২০ তারিখ কোতোয়ালী থানাধীন চরঝাউগড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে থেকে একটি ক্যামেরা চুরির ঘটনা ঘটে। বাদীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে কোতোয়ালী মডেল থানার মামলা নং-৫৯, তারিখ-১০/০১/২০২০ ইং ধারা-৪২০/৩৭৯ পেনাল কোড রুজু হয়। মামলার তদন্তকালে জেলা গোয়েন্দা শাখা ঘটনায় জড়িত আসামী ১। মোঃ আরমান হোসেন ওরফে অন্ত (১৯), পিতা-সোহরাব আলী, মাতা-দোলেনা আক্তার, ২। মোঃ আকরামুল ইসলাম (১৯), পিতা-আবু তালেব, মাতা-আমিনা বেগম, উভয় সাং-উজানপাড়া চরনিলক্ষীয়া, থানা-কোতোয়ালী, জেলা-ময়মনসিংহদ্বয়কে গ্রেফতার সহ তাদের হেফাজত থেকে চোরাইকৃত ক্যামেরা উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয় চুরির দায় স্বীকার করে বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।

“জানুয়ারি/২০২০ মাসে মাদক উদ্ধার জনিত সাফল্য”

অত্র জেলায় জানুয়ারি মাসে মোট মাদক মামলা রুজু=২৬৩ টি।
মোট মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার=৩৫৮ জন।
মোট মাদক উদ্ধার=
হেরোইন=৪৯২ গ্রাম।
ইয়াবা-৭২০২ পিস।
গাঁজা=২১ কেজি ৫১৫ গ্রাম।
দেশী মদ=২০৩ লিটার।
ইনজেকশন=১০৪ পিস।
ফেন্সিডিল=২৫ বোতল।
বিদেশী মদ=৫ বোতল ।
(উদ্ধারকৃত মাদকের অনুমান মূল্য=৭,৩০,৪,৬৭৫/-সাত কোটি ত্রিশ লক্ষ চার হাজার ছয়শত পঁচাত্তর) টাকা

ডিবি দুইটি মাদক উদ্ধারের ঘটনায় প্রবাহ চিত্রের মাধ্যমে মাদকের মূল হোতা গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে।
(।) ৮০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট সহ ময়মনসিংহ ত্রিশাল হতে প্রথম পার্টি  রুবেল আহম্মদ, দ্বিতীয় পার্টি সুলতান ও সিলেট জেলার জকিগঞ্জ থানার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে তৃতীয় পার্টি তানভীর আহম্মেদ।
(।।) ৫০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলে সহ ময়মনসিংহ কোতোয়ালী হতে প্রথম পার্টি মো: রাশেদ আলম (২৩) এবং ফুলবাড়ীয় থানা এলাকা থেকে দ্বিতীয় পার্টি মোছা: হাসি আক্তার (৩৫)।
জানুয়ারি/২০২০ মাসে নিয়মিত মামলা রুজু=৫৮৯ টি।
নিয়মিত মামলায় গ্রেফতার=১১৮৪ জন।
ওয়ারেন্ট মূলে গ্রেফতার=১৮৪৭ জন।

চলতি মাসে=২টি অস্ত্র উদ্ধার হয়।
১ টি বিদেশী পিস্তল ১ রাউন্ড গুলি-জেলা গোয়েন্দা শাখা। (২/২/২০২০)
১টি রিভলবার ২ রাউন্ড গুলি-গৌরীপুর থানা।(৪/২/২০২০)

Share this post

scroll to top