প্রেমিকা ২ সন্তানের মা, জানার পর ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে প্রেমিকের আত্মহত্যা

প্রেমিকা দুই সন্তানের মা। এতদিন সমস্ত কিছু গোপন করে প্রেম করলেও এখন আর বিয়ে করতে চাইছে না। মঙ্গলবার এই তথ্য জানার পরই ভ্যালেন্টাইন্স ডে’র ভোরে গলায় দড়ি নিয়ে আত্মহত্যা করলেন প্রেমিক। ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে।

মৃতের নাম বিশ্বজিৎ ওঝা(২৫)। তাঁর বাড়ি পাঁশকুড়া থানার দক্ষিণ জিঞাদা গ্রামে। বৃহস্পতিবার এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়ায়। মৃত যুবকের পরিবারের অভিযোগ, ওই যুবতীর বিশ্বাসভঙ্গ কোনোমতেই মেনে নিতে পারেনি বিশ্বজিৎ। সেই কারণেই মানসিক অবসাদে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ডি অ্যাক্টিভেট করে আত্মঘাতী হয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।

মহকুমা পুলিশ কর্মকর্তা সব্যসাচী সেনগুপ্ত বলেন, পাঁশকুড়ায় যুবকের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। পরিবারের তরফে এখনো কারো নামে লিখিত কোনো অভিযোগ হয়নি।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় আড়াই বছর ধরে বিশ্বজিৎ আরবের ওমানে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করতেন। ওমানে থাকার সময় ফেসবুকের মাধ্যমে কলকাতার বেলঘরিয়া এলাকার এক যুবতীর সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়। এরপর বন্ধুত্ব থেকেই তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। কিন্তু পরিবারের অভিযোগ, ওই মহিলা যে দুই সন্তানের মা, তা গোপন করেছিল। এমনকী, বিবাহিত বলেও জানায়নি। ফেসবুক অ্যাকাউন্টেও ওই বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। সমস্ত কিছু গোপন করে সে বিশ্বজিতের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক চালিয়ে যায়। তাদের মধ্যে একাধিকবার বিয়ের বিষয়েও কথাবার্তাও হয়। ফোনে ওই যুবতীকে বিয়ে করার কথা বাড়িতে জানান বিশ্বজিৎ।

গত মঙ্গলবার তিনি ওমান থেকে পাঁশকুড়ার বাড়িতে ফিরেছিলেন। এবারই পাকা কথা বলে প্রেমিকাকে বিয়ে করার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। কিন্তু, পাকা দেখার পাশাপাশি পরিবারের সঙ্গে বিয়ের বিষয়ে আলোচনার জন্য তিনি জেদাজেদি করতেই প্রেমিকা বেঁকে বসে। শেষপর্যন্ত সে অবস্থা সামাল দিতে না পেরে স্বামী সংসারের কথা জানায়। তার পক্ষে বর্তমান স্বামী ও দুই ছেলেকে ছেড়ে নতুন করে বিয়ে করা সম্ভব নয় বলেও জানিয়ে দেয়। সব শুনে বিশ্বজিৎ আকাশ থেকে পড়েন। পরিবারের দাবি, মঙ্গলবার এই ঘটনা জানার পর তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। দিনভর তিনি মনমরা ছিলেন। রাতে পরিবারের লোকেরা তাকে এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার পরামর্শ দেন। এরপর সকলের সঙ্গে বসে খাবারও খান বিশ্বজিৎ। কিন্তু বৃহস্পতিবার ভোররাতে মায়ের কাপড় দিয়ে ফাঁস তৈরি করে সিলিং ফ্যানে ঝুলে তিনি আত্মঘাতী হন।
সকালে তার বাবা রঞ্জিত ওঝা কাজে যাওয়ার আগে ছেলের সঙ্গে কথা বলার জন্য ডাকাডাকি শুরু করেন। দরজায় বারবার ধাক্কা দিলেও ছেলের সাড়া পাননি। এরপর জানালা দিয়ে ছেলের ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান। দরজা ভেঙে বিশ্বজিৎবাবুর দেহ উদ্ধারের পর স্থানীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন। পাঁশকুড়া থানার পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য লাশ তমলুক জেলা হাসপাতালে পাঠায়।

মৃত যুবকের ভাই অভিজিৎ ওঝা বলেন, বেলঘরিয়ার এক যুবতীর সঙ্গে ভাইয়ের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। কিন্তু, সে যে বিবাহিতা ও দুই ছেলের মা তা দাদা জানত না। ওই মহিলা সবকিছু গোপন করেছিল। ভাই ওই যুবতীকে বিয়ে করার পরিকল্পনা নিয়েছিল। বাড়িতেও সমস্ত কিছু জানায়। কিন্তু আচমকা ওই যুবতী স্বামী ও সন্তানের কথা জানিয়ে বিয়ে করা সম্ভব নয় বলে জানায়। এই ঘটনায় ভাই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। সেই কারণে বৃহস্পতিবার ভোরে ভাই আত্মঘাতী হয়েছে। মৃত্যুর আগে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টও ডি অ্যাক্টিভেট করে দিয়েছে। আমরা এই ঘটনার সঠিক তদন্ত চাই।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top