প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস নিচ্ছেন দপ্তরি!

এক পাশে ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষিকা, আরেক পাশে দপ্তরি। সম্প্রতি মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার চরবেহেরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র এটি। বিদ্যালয়ে শিক্ষক থাকার কথা আটজন। আছেন মাত্র দুজন। সংকটের কারণে দপ্তরি দিয়ে চলে পাঠদান। একটি কক্ষেই চলে শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সকল শিক্ষা কার্যক্রম। এমন নানা সংকটে জর্জরিত মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার চরবেহেরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, স্কুলটিতে শিশু থেকে পঞ্চম পর্যন্ত ছয়টি শ্রেণিতে ২৩৭জন শিক্ষার্থী আছে। শিক্ষক ও শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে দুই শিফটে চলে পাঠদান।

বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা জানান, ১৯৬৮ সালে চরবেহেরপাড়ায় বিদ্যালয়টির কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৭৩ সালে এটি সরকারি হয়। ১৯৮০ সালে দুটি কক্ষের পাকা ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৮৮ সালে পদ্মার ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে যায় স্কুলটি। তখন সদরের শিলই ইউনিয়নের শিলই এলাকায় টিনের ঘরে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়।

১৯৯৬ সালে আবার চরবেহেরপাড়ায় টিনের ঘরে স্কুলটি চালু করা হয়। দুই বছর পর স্কুলটি ফের নদীভাঙ্গনের শিকার হয়। এর মধ্যে শিলই ইউনিয়নের দেওয়ানকান্দিতে স্কুল চলে কিছুদিন। সর্বশেষ ২০০০ সালে চরবেহেরপাড়ায় টিনের একটি কক্ষে আবার শুরু হয় স্কুলের কার্যক্রম। টিনের ঘরটি এখন জরাজীর্ণ।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, টিনের বিদ্যালয়টির সামনের মাঠে কয়েকজন শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করছে। ঘরটি পেছনের দিকে কিছুটা হেলে পড়েছে। সামনে এগোতেই চোখে পড়ে বিদ্যালয়ের ভাঙা দরজা-জানালা। জরাজীর্ণ ওই কক্ষ তিনটি অংশে ভাগ করে তিনটি ক্লাস চলে। সেখানে দেখা যায় দুজন শিক্ষক ও স্কুলের দপ্তরি শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছেন।

স্থানীয় লোকজন বলেন, চরাঞ্চলের শিশুদের শিক্ষার সুবিধা এমনিতেই অপ্রতুল। এর মধ্যে বিদ্যালয়টি শিশুদের জন্য শিক্ষার সুযোগ নিয়ে এসেছিল। কিন্তু স্কুলটির ওপর দিয়ে নানা সময় বয়ে গেছে ঝড়ঝাপটা। এখন জরাজীর্ণ টিনের একটি ঘরে কোনোমতে টিকে আছে কার্যক্রম। এতে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে চরাঞ্চলের এই বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের পাঠদান।

শিক্ষার্থীরা জানায়, দুজনের বেঞ্চে কখনো জোর করে ও গাদাগাদি করে চারজনকে বসতে হয়। কখনো জায়গার অভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এদিকে এক কক্ষে তিনটি ক্লাস হওয়ায় চেঁচামেচিতে কী পড়ানো হয়, তা-ও ঠিকমতো বোঝা যায় না। কয়েকজন অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, জরাজীর্ণ বিদ্যালয়টি যে কোনো সময় ভেঙ্গে পড়তে পারে।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সানজিদা আক্তার বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদটি শূন্য। তাই সব দায়িত্ব তাকেই পালন করতে হচ্ছে। তিনি জানান, গত বছর এই বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় ২৪ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। সবাই ভালো ফলাফল করে।

সানজিদা আক্তার আরো বলেন, শিক্ষক ও শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। চেষ্টা থাকলেও ভালোভাবে ক্লাস নেয়া যাচ্ছে না। জরাজীর্ণ টিনের বিদ্যালয়টিও ভাঙ্গা। বৃষ্টিতে পানি পড়ে। সানজিদা আক্তার আরও বলেন, শিক্ষক সংকটের কারণে তারা দপ্তরি দিয়ে ক্লাস নিতে বাধ্য হচ্ছেন।

বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জমিদাতা বাদশা মিয়া ঢালী জানান, শিক্ষক ও শ্রেণিকক্ষ সংকটের বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বিদ্যালয়ের অবস্থা ভালো না। যেকোনো সময় ভেঙ্গে পড়তে পারে।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসিমা খানম বলেন,‘বিদ্যালয়টির অবস্থা সম্পর্কে জেনেছি। সরেজমিনেও দেখেছি। নতুন ভবন ও শিক্ষক সংকটের বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গেও কথা বলেছি। আশা করি, শিগগিরই সমস্যার সমাধান হবে।’

এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার তাপস কুমার অধিকারীর সাথে তার সেল ফোনে কথা হলে তিনি জানান, উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সাথে আলাপ করে দ্রুত শিক্ষক পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিদ্যালয়টির জন্য নতুন ভবনেরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে। দ্রুত ভবনের কাজ শুরু হবে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top