পুলিশের কিছু সদস্যের কারণে সম্মান ক্ষুণ্ন হচ্ছে পুরো বাহিনীর

পুলিশের কিছু সদস্যের কারণে সম্মান ক্ষুণ্ন হচ্ছে পুরো বাহিনীর। ওই পুলিশ সদস্যের ঘুষ গ্রহণ তো রয়েছেই; এর বাইরে ধর্ষণ, মাদক সেবন, পতিতাবৃত্তিসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। দু-চারজনের অপরাধ কর্মকাণ্ড প্রকাশ হলেও অনেক রয়েছেন যারা দিনের পর দিন এসব অপরাধ করেও পার পেয়ে যাচ্ছেন। তাদের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগও করে না, আর তাদের অপরাধ কর্মকাণ্ড প্রকাশও পাচ্ছে না। অনেক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে মাদক কেনাবেচার।

সম্প্রতি ঘুষ গ্রহণ করে ক্লোজড হয়েছেন বরিশালের বানারীপাড়া থানার এসআই মোশারেফ হোসেন। গত ২৮ জানুয়ারি তাকে ক্লোজ করা হয়। এর আগে উপজেলার বিশারকান্দি ইউনিয়নের মুড়ারবাড়ি বাজারের ক্ষুদ্র কীটনাশক ব্যবসায়ী সীমা পাণ্ডের দোকানে হানা দিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ কয়েক বোতল কীটনাশক ওষুধ পাওয়ার অজুহাতে তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে মোশারেফ। সীমা ধারদেনা করে ৩০ হাজার টাকা দেন। বাকি টাকার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন এসআই মোশারেফ। শেষ পর্যন্ত কোনো উপায় না দেখে সবার পরামর্শে স্থানীয় সংসদ সদস্য মো: শাহে আলমের বাড়িতে হাজির হয়ে বিষয়টি তাকে জানান সীমা। পরে এসআই মোশারেফ ঘুষের ওই ৩০ হাজার টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হন। পরবর্তীতে তাকে ক্লোজ করা হয়।
গাজীপুরের কালিয়াকৈর থেকে তিন যুবককে অপহরণ করে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি এবং তাদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালানোর অভিযোগে কালিয়াকৈর থানার এএসআই আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানার এএসআই মুসফিকুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

কিছু পুলিশ সদস্য আবার নারী ধর্ষণের মতো ঘটনার সাথেও জড়িত। মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় এক তরুণীকে দুই দিন আটকে রেখে ধর্ষণ করেছে দুই পুলিশ কর্মকর্তা। ওই নারী তার প্রতিবেশী এক নারীর সঙ্গে পাওনা টাকা আনার জন্য সাটুরিয়া থানার এসআই সেকেন্দারের কাছে গিয়েছিলেন। সেখানে তাদেরকে ডাকবাংলোতে আটকে রেখে ওই নারীকে সেকান্দার ও এএসআই মাজহারুল মিলে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের আগে ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা ইয়াবা সেবন করে এবং অস্ত্রের মুখে ওই তরুণীকেও ইয়াবা সেবন করতে বাধ্য করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিয়ে মানিকগঞ্জের এসপির কাছে অভিযোগ দেয়ার পরই ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে ক্লোজ করা হয়। পরবর্তীতে ধর্ষণ মামলা দায়ের হয় এবং দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেফতারের পর তাদেরকে রিমান্ডে নেয়া হয়।

শিশুদের দিয়ে পতিতাবৃত্তি করানোর মতো জঘন্য অভিযোগও পাওয়া গেছে এক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। এই অপরাধে নারীসহ গত ২৭ জানুয়ারি র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ৯ এর সদস্যরা এক এসআই ও তার কথিত স্ত্রীকে গ্রেফতার করে। তাদের বাসা থেকে ৬০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট ও দুই শিশুকে উদ্ধার করা হয়।
আটককৃতরা হলোÑ সিলেট নগরীর মেডিক্যাল রোডস্থ মুন্সিপাড়ার মরহুম আব্দুল রশিদের ছেলে মো: রোকন উদ্দিন ভূঁইয়া (৪০) ও নেত্রকোনা জেলার কালিয়াজুড়ি থানার আটগাঁও গ্রামের মৃত মফিজুল মিয়ার কন্যা রিমা বেগম (৩৫)। স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে তারা নগরীর দারিয়াপাড়াস্থ মেঘনা এ-২৬/১ বাসায় বসবাস করে আসছিলেন। আটক রোকন উদ্দিন ভূঁইয়া পুলিশের এসআই। তিনি ৭ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে কর্মরত ছিলেন।

এর বাইরেও অনেক ঘটনা রয়েছে; যা প্রকাশ না হওয়ায় পার পেয়ে যাচ্ছে অপরাধের সঙ্গে জড়িত কিছু পুলিশ সদস্য। রাজধানীর কদম ফোয়ারা এলাকায় রাতে দাঁড়ালেই দেখা যায় কিছু পুলিশ সদস্যের বেপরোয়া তোলাবাজি। রাতে ওই রাস্তা দিয়ে যেসব ট্রাক যাতায়াত করে এমন কোনো গাড়ি নেই, যে গাড়ি থেকে ওই পুলিশ সদস্যরা টাকা নিচ্ছে না।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ি এলাকার এক ভুক্তভোগী বলেছেন, পুলিশের কিছু সদস্য তার বাসায় ঢুকে টাকা লুট করেছে। ওই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এখন মামলা চলছে। কিন্তু সে ঠিকই তার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। একাধিক ভুক্তভোগী বলেছেন, কোনো ঘটনা ব্যাপকহারে আলোচনায় না এলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েও কোনো লাভ হয় না। শামীম নামের এক ভুক্তভোগী অভিযোগ করেছেন, তিনি সদর দফতরে অভিযোগ দিয়েও কোনো ফল পাননি। অথচ তার এক আত্মীয় পুলিশ কর্মকর্তা তাদের পুরো পরিবারটিকে অস্থির করে তুলেছে।

পুলিশের একাধিক সদস্য বলেছেন, কিছু পুলিশ সদস্যের কারণে তাদের সম্মান ক্ষুণœ হচ্ছে। পুলিশে চাকরি করার পরে যদি শোনেন তারই ডিপার্টমেন্টের কোনো সদস্য ধর্ষণ করেছে তখন পরিবারের কাছেও হেয় হতে হয়। মুখ দেখাতে লজ্জা লাগে।

পুলিশের শীর্ষ সারির কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার সাথে কথা বলা হলে তারা বলেন, যেসব অভিযোগ আসে প্রতিটি অভিযোগ গুরুত্বের সাথে দেখা হয়। অপরাধের সাথে জড়িত কাউকেই ছেড়ে দেয়া হয় না।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top