পঞ্চম শ্রেণীতেই টেস্ট পেপারস সংস্কৃতি

পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের সর্বশেষ সমাপনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে। পরীক্ষা শেষ হওয়ার সাথে সাথে রেহানা নামে এক অভিভাবক হাজির হন তার এক আত্মীয়ের বাসায় টেস্ট পেপারস সংগ্রহের জন্য। তার আত্মীয়ের ছেলে সমাপনী পরীক্ষা শেষ করেছে মাত্র। আর রেহানার মেয়ে তখন চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী।
রেহানা জানান, তার মেয়ে চলতি বছরের শেষের দিকে সমাপনী পরীক্ষায় বসবে। সে কারণে তখনই তিনি টেস্ট পেপারস সংগ্রহ করেছেন। নতুন টেস্ট পেপারস বের হবে অনেক দেরিতে। তাই পুরনো টেস্ট পেপারস থেকে তিনি এখনই পরীক্ষার প্রশ্ন সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে চান। নতুন টেস্ট পেপারস বের হলে তখন আরেকটি কিনবেন।
রাজধানীর বাসিন্দা রেহানার মত সারা দেশে অনেক অভিভাবকই সমাপনী পরীক্ষা শেষ হওয়ার সাথে সাথে পরিচিত লোকজনের কাছ থেকে পুরনো টেস্ট পেপারস এবং নোটগাইড সংগ্রহ করেছেন। যারা সংগ্রহ করতে পারেননি তারা গত বছরের টেস্ট পেপারস লাইব্রেরি থেকে কেনার চেষ্টা করছেন। এখনো অনেকে টেস্ট পেপারস সংগ্রহের চেষ্টা করছেন। তবে পুরনো টেস্ট পেপারস পাওয়া যাচ্ছে না অনেক লাইব্রেরিতে। তাই তাদের অপেক্ষা করতে হবে নতুন টেস্ট পেপারস বের হওয়ার আগ পর্যন্ত। নতুন টেস্ট পেপারস বের হবে বিভিন্ন স্কুলে পঞ্চম শ্রেণীতে টেস্ট পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর এবং তা অক্টোবরের আগে নয়।
রাজধানীর শাহজাহানপুরের অভিভাবক হায়দার হোসেন বলেন, আমার ছেলে এ বছর পঞ্চম শ্রেণীতে উঠেছে। আমার স্ত্রী আমাকে বলল একটি টেস্ট পেপারস কেনার জন্য। টেস্ট পেপারসের কথা শুনে আমি খুবই অবাক হলাম। কারণ পঞ্চম শ্রেণীতে যে টেস্ট পেপারস আছে তাই আমার জানা ছিল না। আর পরীক্ষা হবে সেই বছরের শেষে। এখনই তার জন্য আমার স্ত্রীর এত তোড়জোড় দেখেও আমি অবাক না হয়ে পারলাম না। শুধু টেস্ট পেপারস নয় অনেক গাইড কেনার কথাও বলা হয়েছে আমাকে।
হায়দার হোসেন বলেন, আমরা এসএসসি পরীক্ষার আগ পর্যন্ত টেস্ট পেপারসের নাম শুনিনি। এখন দেখা যায় পঞ্চম শ্রেণীতেই টেস্ট পেপারস সংস্কৃতি শুরু হয়েছে। প্রতিটি পাঠ্যবইয়ের সাথে একাধিক গাইড, বাংলা ও ইংরেজি গ্রামার বই কিনতে হচ্ছে। স্কুল থেকে আবার দেয়া হচ্ছে শিট। তারওপর বিশাল টেস্ট পেপারস। এত কম সময়ে এত বই পড়বে কখন ছোট ছোট শিশুরা বুঝতে পারছি না। এটাতো শিশুদের ওপর পড়ার নামে রীতিমতো নির্যাতন।
নিয়াজ নামে পঞ্চম শ্রেণীর আরেক অভিভাবক জানান, তিনি এত ছোট শিশুর জন্য টেস্ট পেপারস কেনার পক্ষে নন। কিন্তু তার স্ত্রী তাকে ক্রমাগত চাপ দিয়ে যাচ্ছেন টেস্ট পেপারস সংগ্রহের জন্য। টেস্ট পেপারস না হলে পড়ায় পিছিয়ে পড়তে হবে। শেষ পর্যন্ত তিনি রাজি হয়েছেন নতুন টেস্ট পেপারস বের হলে তিনি তা কিনবেন। কিন্তু তার স্ত্রী তাকে জানিয়েছেন নতুন টেস্ট পেপারস তেমন কাজে আসবে না। কারণ পরীক্ষা তখন খুব নিকটে থাকবে এবং সেটা দেখার সময় পাওয়া যাবে না। তাই আগে থেকেই নিয়মিত টেস্ট পেপারস থেকে প্র্যাকটিস করতে হবে।
নিয়াজ বলেন, আমার স্ত্রীর পরিচিত অনেকে তার বাচ্চার জন্য এখনই টেস্ট পেপারস থেকে পড়া শুরু করেছে। এটা দেখে আমার স্ত্রীর মাথা খারাপ হওয়ার অবস্থা।
অনেক অভিভাবক জানিয়েছেন, পঞ্চম শ্রেণীতে সমাপনী পরীক্ষা না থাকলে এত নোট গাইড আর টেস্ট পেপারসেরও দরকার ছিল না পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য। সমাপনী পরীক্ষা আর সৃজনশীল পদ্ধতির কারণেই কোচিং প্রাইভেটসহ নোট গাইড ঘিরে রমরমা বাণিজ্য চলছে সারা দেশে অনেক দিন ধরে। আর সমাপনী, জেএসসি/জেডিসি পরীক্ষা ঘিরে অভিভাবকদের মধ্যে বিরাজ মানসিক অস্থিরতা। নানা ধরনের বিড়ম্বনারও শিকার তারা।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top