প্রাক্তন স্ত্রীকে হত্যার পর অন্যের ওপর দায় চাপাতে থানায় অভিযোগ দেন আব্দুল মজিদ। পুলিশ বিষয়টা আঁচ করতে পেরে মজিদকে থানায় বসিয়ে রেখে লাশ উদ্ধারে যায়। এরপর ঘটনা বিশ্লেষণ করে আব্দুল মজিদকে আটক করে পুলিশ।
নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার লেংগুরা ইউনিয়নের গৌরিপুর গ্রামে শনিবার দিবাগত রাতে এ ঘটনা ঘটে। পরে রোববার (২৩ জুলাই) সকালে লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায় পুলিশ। হত্যার শিকার আম্বিয়া খাতুন (৪০) উপজেলার একই ইউনিয়নের উত্তর গোঁড়াগাও গ্রামের মো. নূরুল ইসলামের মেয়ে।
হত্যার অভিযোগে আটক আব্দুল মজিদ (৪৫) লেংগুরা ইউনিয়নের গৌরিপুর গ্রামের আবুল কাসেম ওরফে খোকা মিয়ার ছেলে।
এলাকাবাসী জানায়, আম্বিয়া খাতুনের প্রথম বিয়ে হয়েছিল আব্দুল মজিদের বড় ভাই হাবিবুর রহমানের সাথে। তাদের সংসারে তিন ছেলে রয়েছে। তিন বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় হাবিবুর রহমানের মৃত্যু হয়। পরে দেবর আব্দুল মজিদের সাথে বিয়ে হয় আম্বিয়ার। এরপর আগের স্বামী হাবিবুর রহমানের ঘরে ৩ ছেলেসহ বসবাস করতে থাকে আম্বিয়া। এদিকে আব্দুল মজিদ বখাটে ও নেশাগ্রস্ত থাকায় প্রায়ই স্ত্রীকে নানা ধরনের অত্যাচার ও মারধর করতো। পরে ঢাকা গিয়ে মানুষের বাসা বাড়িতে কাজ নেন আম্বিয়া। দুই ছেলে তার সাথে ঢাকা গিয়ে কাজ শুরু করে। ছোট ছেলে ময়মনসিংহে একটি মাদরাসায় ভর্তি হয়ে পড়াশোনা শুরু করে। মজিদের অত্যাচার বেড়ে যাওয়ায় এক পর্যায়ে অত্যাচার থেকে মুক্তি পেতে কয়েক মাস আগে আব্দুল মজিদকে ডিভোর্স দেন আম্বিয়া। এতে ক্ষিপ্ত হয়েছিল মজিদ।
এলাকাবাসী আরও জানায়, গত শুক্রবার বাড়ি ফিরে আম্বিয়া। সুযোগ বুঝে রাতে বাসায় গিয়ে কুপিয়ে ও মাথায় আঘাত করে আম্বিয়াকে হত্যা করে মজিদ। হত্যার দায় অন্যর ওপর চাপাতে ভোরে থানায় গিয়ে জানায়, তার প্রাক্তন স্ত্রীকে হত্যা করেছে প্রতিবেশী এক ব্যক্তি। পুলিশ মজিদের কৌশল বুঝতে পেরে তাকে থানায় বসিয়ে রেখে লাশ উদ্ধারে যায়। এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হয়ে পরে মজিদকে আটক করে।
আম্বিয়া খাতুনের বড়ভাই সাইফুল ইসলাম জানান, আব্দুল মজিদ নেশাগ্রস্ত ও বখাটে ছিলো । সড়ক দুর্ঘটনায় আগের স্বামী নিহত হওয়ার মজিদের কাছে বিয়ে বসতে তাকে না করেছি । এমনকি আমার বোন মজিদকে বিয়ে করতে চায় নাই। প্রাণনাশের হুমকিসহ নানান ভয়ভীতি দেখিয়ে বিয়েতে বাধ্য করে মজিদ। বিয়ের পর থেকে আম্বিয়া ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে আসছিল।
এনিয়ে সামাজিকভাবে স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গরা শালিস করে দেন। একপর্যায়ে আম্বিয়া বাঁচার জন্য তিন মাস আগে সামজিক শালিসে উপস্থিত স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সামনে আব্দুল মজিদকে তালাক দেন। এর জন্য আমাকে প্রাণে মারার হুমকি দিয়েছিলো মজিদ। এখন আমার বোনটাকে নির্মমভাবে খুন করেছে মজিদসহ তার পরিবারের লোকজন । আমরা এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।
নেত্রকোনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) মো. লুৎফুর রহমান রোববার সাড়ে তিনটায় এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, আম্বিয়ার লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় তার প্রাক্তন স্বামী আব্দুল মজিদকে আটক করা হয়েছে। এখনো থানায় মামলা হয়নি। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।