দেশে দেশে নিষিদ্ধ বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স, বিপদে যুক্তরাষ্ট্র

সিঙ্গাপুর, চীন, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার পর এখন ব্রিটেনও যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স বিমান ওঠা-নামা নিষিদ্ধ করেছে।

রোববার ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ১৫৭ জন আরোহীর সবাই মারা যাওয়ার পর বোয়িংয়ের এই মডেলের বিমানের নিরাপত্তা নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

বেশ কয়েকটি দেশ তাদের আকাশ সীমায় এই বিমানের উড়াল বা তাদের বিমান বন্দরে ওঠা-নামা সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করেছে।

সিঙ্গাপুর, চীন, মালয়েশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার পর সর্বশেষ এই সিদ্ধান্ত এসেছে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির কাছ থেকে।

ব্রিটেনের বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষ (সিএএ) এক বিবৃতিতে বলেছে, বিধ্বস্ত ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার থেকে এখনো কোনো তথ্য জানা যায়নি। ফলে, আপাতত ব্রিটেনের আকাশ সীমায় বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স নিষিদ্ধ থাকবে।

ব্রিটেনের বিমান চালকরা এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।

ব্রিটেনে বোয়িং কোম্পানির এই মডেলের বিমানের সার্ভিস চালায় দুটো এয়ারলাইন্স – টুই এবং নরওয়েজিয়ান এয়ারলাইন্স।

সিএএ বলেছে, “বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স বিমানে ব্রিটেনে ফেরার কথা রয়েছে যে সব যাত্রীর, তাদের অন্য কোনো বিমানে করে ফিরতে হবে।”

অবশ্য নরওয়েজিয়ান এয়ারলাইন্স ইতিমধ্যেই তাদের ৭৩৭ ম্যাক্স বিমানগুলো আপাতত না ওড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যাত্রীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছে এই কোম্পানি।

অন্য কোন কোন দেশে নিষিদ্ধ হয়েছে
সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দর বিশ্বের ষষ্ঠ ব্যস্ত বিমানবন্দর। ইউরোপ ও আমেরিকার সাথে এশিয়ার যোগাযোগের অন্যতম কেন্দ্র এই বিমানবন্দর। এখানে বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্সের ওঠানামা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

ফলে সিঙ্গাপুরের সিল্ক এয়ার, চায়না সাদার্ন এয়ারলাইন্স, গারুদা ইন্দোনেশিয়া, শ্যাংডং এয়ারলাইন্স এবং থাই লায়ন এয়ারের অনেক ফ্লাইট সিঙ্গাপুরে যেতে পারবে না।

অস্ট্রেলিয়ার কোনো এয়ারলাইন্স বোয়িংয়ের এই মডেল ব্যবহার করেনা। তবে দুটো বিদেশী এয়ারলাইন্সের – সিল্ক এয়ার এবং ফিজি এয়ারওয়েজ – এই বিমান অস্ট্রেলিয়ায় যায়। তারা এখন আর যেতে পারবে না।

দক্ষিণ কোরিয়ার ইস্টার জেট এয়ারলাইন্স বোয়িংয়ের এই মডেল ব্যবহার করে। বুধবার থেকে তাদের এটি না চালাতে বলা হয়েছে।

মালয়েশিয়া জানিয়েছে, বোয়িংয়ের এই মডেলের বিমান তাদের আকাশ সীমায় আপাতত নিষিদ্ধ থাকবে।

এসব দেশ বলছে, বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্সের নিরাপত্তা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য না পাওয়া পর্যন্ত তাদের সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে।

বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স সম্পর্কে কী জানা যাচ্ছে
বোয়িংয়ের সফল ৭৩৭ বিমানের সর্বশেষ মডেলটি হচ্ছে ম্যাক্স (৭, ৮,৯ এবং ১০)।

এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত বোয়িং বিভিন্ন ধরণের ৫,০১১ টি ম্যাক্স বিমানের অর্ডার পেয়েছে। এখন পর্যন্ত সরবরাহ করেছে ৩৫০টি।

রোববার ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের যে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে সেটি ৭৩৭ ম্যাক্স ৮ মডেল। বোয়িংয়ের কাছ থেকে এরকম ৩০টি বিমান কেনার চুক্তি করেছে ইথিওপিয়ার এই বিমান সংস্থা।

গত বছর অক্টোবরে ইন্দোনেশিয়ার লায়ন এয়ারের যে বিমানটি সাগরে বিধ্বস্ত হয়েছিল সেটিও ছিল ৭৩৭ ম্যাক্স। পাঁচ মাসের মধ্যে এই মডেলের আরো একটি বিমান বিধ্বস্ত হওয়ায় বিশ্বজুড়ে এর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ অবশ্য বলছে, বোয়িংয়ের এই মডেল নিরাপদ নয় – এই সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এখনো আসেনি।
সূত্র : বিবিসি

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top