ঢাবি কর্তৃপক্ষের সাথে ছাত্রদলের রুদ্ধদ্বার বৈঠক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের তফসিল পেছানো ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সহাবস্থানের দাবিসহ কয়েকদফা দাবি জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। এ লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার সকাল এগারোটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো: আখতারুজ্জামানের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে সংগঠনটি।

ভিসির কার্যালয়ের পাশে সেমিনার রুমে প্রায় পৌনে এক ঘন্টাব্যাপী রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন ছাত্রদলের নেতারা। বৈঠকে ছাত্রদল নেতাদের মধ্যে কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজীব আহসান, সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক বাশার সিদ্দিকী, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক মো: হাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টরবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শী জানায়, ডাকসু নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য এবং নিরপেক্ষ করার লক্ষ্যে ঢাবি ভিসির কাছে ৮ দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি দিতে বেলা সাড়ে দশটার মধ্যেই ভিসি কার্যালয়ের সামনে আসেন ছাত্রদল নেতারা। পরে বেলা এগারোটার দিকে তারা ঢাবি ভিসির কার্যালয়ে যান।

সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির কাছে স্মারকলিপি তুলে দেয়া হয়। পরে স্মারকলিপির একটি কপি পাঠ করে শোনান ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান। পরে উন্মুক্ত আলোচনায় সহকারী প্রক্টর ও ছাত্রদল নেতারা বক্তব্য রাখেন। ভিসি তাদের বক্তব্যগুলো মনোযোগ দিয়ে শোনেন।

বৈঠক সূত্র জানায়, ভিসির সাথে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে রাজীব আহসান বলেন, দীর্ঘদিন পর ডাকসু নির্বাচন হতে যাচ্ছে। আমরা একটি গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। আমরা এই নির্বাচনের পক্ষে। কিন্তু তার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। কারণ আমরা প্রায় ১০ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরে। আমাদের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে নিয়মিত আসতে পারেনা নিরাপত্তার কারণে। অনেকেই আছেন যারা নিয়মিত ছাত্র এবং কেউ কেউ সদ্য ছাত্রত্ব শেষ করেছেন। সুতরাং আমরা হলে থাকলে তো আর সরকারের পতন নিশ্চিত হবেনা। অতীতেও হয়নি। এ বিষয়গুলো বিবেচনা করে নতুন সিদ্ধান্ত নিতে ভিসির কাছে আহ্বান জানান তিনি।

আকরামুল হাসান ভিসির উদ্দেশে বলেন, ডাকসু নির্বাচনে আমরা কোনো ব্যারিকেড রাখতে চাইনা। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ডাকসুর মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখতে হবে। কারণ এই নির্বাচন হচ্ছে অনেকদিন পরে। সুতরাং সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে সবার অংশগ্রহণ জরুরি। এজন্য ক্যাম্পাসে সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় ডাকসু নির্বাচন নিয়ে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা একরতফা। আমরা আবারো সিন্ডিকেটের সভায় সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার দাবি জানাচ্ছি।

আল মেহেদী বলেন, আমাদেরকে ক্যাম্পাসে আসার নিরাপত্তা দিতে হবে। প্রার্থী ও ভোটার হওয়ার জন্য ৩০ বছরের যে বয়সসীমা নির্ধারণ হয়েছে সেটা পুনর্বিবেচনা করতে হবে। আমরা আগেও এসব ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। এখন বয়সের ব্যাপারে লুকোচুরি করা হচ্ছে। কিন্তু দৃশ্যত মনে হচ্ছে ছাত্রলীগ যেসব দাবি জানাচ্ছে ভিসি সে মোতাবেক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এভাবে তো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারেনা। কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা আল মামুনকে মারধর করা হয়েছে। সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে ভিসির কাছে দাবি জানান তিনি।

ছাত্রদল নেতাদের বক্তব্য শোনার জবাবে ভিসি অধ্যাপক আখতারুজ্জামান তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমাদের এখানে কোনোকিছুই লুকোচুরি হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সভায় সব সিদ্ধান্ত হয়েছে। নিয়মিত শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থী করার কথা হয়েছে। যারা বিভিন্নভাবে ডিফল্টার হয় তাদের বিশেষভাবে ভর্তি বা পরীক্ষার অনুমতি দেয়া হয়। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে এভাবে ভর্তি ও সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা কিন্তু ৩০ বছর। এজন্য বয়স ৩০ নির্ধারণ করা হয়েছে। বরং ম্যাচিউরড নেতৃত্ব তৈরি করতেই আমরা এমফিল আর অন্য শিক্ষার্থীদের সুযোগ দিতে চাই। এটা সম্পূর্ণ ডাকসু নির্বাচনের জন্য নীতিমালা।

বিশ্ববিদ্যালয়ে সহাবস্থানের দাবির প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, সহাবস্থানের ব্যাপার সবার জন্য উন্মুক্ত। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সবার জন্য উন্মুক্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ছাত্র ও ছাত্র সংগঠনের দায়িত্ব আমাদের। কেউ বাধাপ্রাপ্ত হলে আমাদের কাছে অভিযোগ করবে। আমরা ব্যবস্থা নেব। হল প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।

অধ্যাপক আখতারুজ্জামান ছাত্রদল নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমরা বাইরের কথায় কান দেবেনা। ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সব ছাত্র সংগঠনের দায়িত্ব হবে পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ রেখে কার্যক্রম পরিচালনা করা। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো হস্তক্ষেপ থাকবেনা। যার রাজনৈতিক কাজ তারা করবে। আইন কিন্তু তার নিজের গতিতে চলবে।

তিনি আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য হবে। সবার যত্নশীল আচরণ করতে হবে। ডাকসু নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করা যাবেনা।

ছাত্রদলের দাবিগুলো হলো:
১. সব ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।
২. নূন্যতম আগামী তিন মাস বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক রাজনীতি নিশ্চিত করতে হবে। ৩. তিন মাস নির্বাচন পেছানো।
৪. হলে হলে ভোটগ্রহণের পরিবর্তে একাডেমিক ভবনে ভোটগ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে।
৫. ভোটার হওয়ার উপযুক্ত ঢাবির সকল পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীর ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
৬. নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণায় সংগঠনের সাবেক নেতাদের অংশগ্রহণে সুযোগ দিতে হবে, গ্রেফতার ও হয়রানি করা যাবে না।
৭. শান্তিপূর্ণ সাধারণ নেতাকর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৮. ডাকসু নির্বাচনের যেসব পরিচালনা কমিটি করা হয়েছে সেগুলো পুনর্গঠন করতে হবে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top