ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারছেন না ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের শীর্ষ ৪ নেতা

দীর্ঘ ২৯ বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিয় ছাত্র সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আগামী ১১ মার্চ এই নির্বাচন হবে বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে। এই নির্বাচন নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ সারাদেশের রাজনীতি সচেতন মানুষের আগ্রহ রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলো এরই মধ্যে নির্বাচন নিয়ে তাদের হোমওয়ার্ক শুরু করে দিয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বিএনপি সমর্থিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়নসহ বেশির ভাগ সংগঠনই নির্বাচনে অংশ নিবে বলে জানা গেছে। এছাড়া কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতারাও ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিবেন বলে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ফলে একটি প্রতিদ্বন্দিতামূলক নির্বাচনের প্রত্যাশা করছেন সবাই।

ডাকসু নির্বাচনে অংশ নেয়া ছাত্র সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের বেশির ভাগই নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। তাদের বয়স ও ছাত্রত্ব না থাকায় তারা আইনের মারপ্যাচে প্রার্থী হতে পারছেন না।

ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধন ও পরিমার্জন কমিটির কাছে ছাত্র সংগঠনের নেতাদের চাওয়া ছিল প্রার্থীতার ক্ষেত্রে ছাত্রত্বের বিষয়টি শিথিল করা হোক। ছাত্রনেতাদের এমন প্রত্যাশার কারণে সবার চোখ ছিল ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধন ও পরিমার্জন কমিটির চূড়ান্ত সুপারিশের ওপর। কিন্তু গত সোমবার পরিবেশ পরিষদের বৈঠকে কমিটির দেয়া সুপারিশে ছাত্রনেতাদের প্রত্যাশা প্রতিফলিত হয়নি। কমিটির সুপারিশ সিন্ডিকেটে অনুমোদন পেলে অধরাই থেকে যাবে শীর্ষ নেতাদের ডাকসু নির্বাচনে অংশ নেয়ার স্বপ্ন।

গত সোমবার ডাকসু ও হল সংসদের বিদ্যমান গঠনতন্ত্র সংশোধন ও পরিমার্জনে জন্য গঠিত পাঁচ সদস্যের কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে তাদের চূড়ান্ত সুপারিশ দিয়েছেন। ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের প্রাধ্যক্ষ ও আইন বিভাগের অধ্যাপক মিজানুর রহমানকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের কমিটি করা হয়েছিল।

কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্য সেন হলের প্রাধ্যক্ষ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল, কবি জসীমউদ্‌দীন হলের প্রাধ্যক্ষ ও আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহ, রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জিনাত হুদা এবং শামসুন নাহার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সুপ্রিয়া সাহা।

এই কমিটি ছাত্র সংগঠনের দাবি সত্ত্বেও গঠনতন্ত্রে প্রার্থী ও ভোটার হওয়ার যোগ্যতার ধারা কোনো পরিবর্তনের সুপারিশ না করায় কেবল নিয়মিত শিক্ষার্থীরাই প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।

কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মিজানুর রহমান জানান, শুধু নিয়মিত শিক্ষার্থীরাই ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থীতা করতে পারবেন। ছাত্রত্ব শেষ হয়ে গেছে এমন শিক্ষার্থী, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ও সান্ধ্যকালীন কোর্সের শিক্ষার্থীরা ডাকসুর সদস্য ও প্রার্থী হতে পারবেন না। এমন সিদ্ধান্তের ফলে ছাত্রসংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতাদের বেশিরভাগই আসন্ন ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।

ডাকসু নির্বাচন নিয়ে বেশ সরব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ ছাত্র সংগঠনগুলো। সাধারণ শিক্ষার্থীরাও বেশ রোমাঞ্চিত।

তবে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ অংশ নেয়ার কথা জানাজানি হওয়ার পর পরিবেশ হয়তো দ্রুত পাল্টে যাবে। কারণ সাধারণ ছাত্রদের অধিকারের জন্য এই অরাজনৈতিক সংগঠনটি ইতোমধ্যেই শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষের কাছে বেশ গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। ওই ব্যানারে তারা সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলন করেছে, প্রশ্নফাঁস নিয়ে আন্দোলন করছে। এছাড়া অসহায় ও গরিব শিক্ষার্থীদেরকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছে। ফলে তারা নির্বাচনে অংশ নিলে নির্বাচনের পরিবেশ অন্যরকমও হতে পারে।

নিয়মিত ছাত্রত্ব না থাকায় বহুল প্রতীক্ষিত এই নির্বাচনে প্রার্থীতাই করতে পারছেন না প্রধান ছাত্র সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারা।

ডাকসুর গঠনতন্ত্রে নিয়মিত ছাত্রের শর্ত পূরণ করতে না পারায় ছাত্রলীগ, ছাত্রদল ও বাম-সংগঠনগুলোর অনেক পরিচিত নেতাই প্রর্থীতার সুযোগ পাবেন না। তথ্যমতে, ছাত্রলীগের চার শীর্ষ নেতার তিনজন, ছাত্রদলের চারজন, প্রগতিশীল ছাত্রজোটভুক্ত ৪টি বামপন্থী ছাত্রসংগঠন ও ছাত্রসংগ্রাম পরিষদভুক্ত ৩টি ছাত্রসংগঠনের ১০ জন- সব মিলিয়ে ৯ টি সংগঠনের ১৭ জন কেন্দ্রীয় নেতা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের তিন শীর্ষ নেতাই ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষ ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তারা দুজনেই আইন বিভাগের শিক্ষার্থী।

আর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি সনজিৎ চন্দ্র দাস ভর্তি হন ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষে। সে হিসাবে এ তিনজন নেতা নিয়মিত ছাত্রের তালিকায় পড়েন না।

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। শিক্ষাবিরতি থাকায় তার ছাত্রত্ব এখনো শেষ হয়নি।

অন্যদিকে ছাত্রত্ব না থাকায় বেশ বেকায়দায় পড়েছে ছাত্রদলও। ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার ২০০২-০৩ শিক্ষাবর্ষে, সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার ২০০৩-০৪ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিব আহসান ১৯৯৫-৯৬ শিক্ষাবর্ষে, সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান ১৯৯৭-৯৮ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সে হিসেবে তাদের ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে আরো প্রায় এক যুগ আগেই। ফলে তারা আসন্ন ডাকসু নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না।

ছাত্রত্ব নেই ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দীরও। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। আবার অধিকাংশ বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতাদেরও নিয়মিত ছাত্রত্ব নেই।

তবে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী নুরুল হক নুরু, রাশেদ খান (ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের এমবিএর ছাত্র) এবং ফারুক হাসান (ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের মাস্টার্সের ছাত্র) এই তিনজনের নেতৃত্বে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতারা নির্বাচনে অংশ নিবেন বলে জানা গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদেরকে নিয়ে বেশ উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে। তবে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে নাকি আবারো ৩০ ডিসেম্বরের মতো আরেকটি প্রহসনের নির্বাচন হবে তা নিয়ে সবাই চিন্তিত।

উল্লেখ্য, ১৯৯০ সালে ডাকসুর সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেবার জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ব্যানারে আমান উল্লাহ আমান ও খায়রুল কবীর খোকন প্যানেল বিজয়ী হয়েছিল।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top