ট্যারান্টের ‘সফল’ অভিযান

অস্ট্রেলিয়ান শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী ট্যারান্ট তার বার্তাটি বেশি স্পষ্ট করে তুলতে পেরেছেন। তিনি লুকোচুরি করে কতগুলো মানুষ মেরে পালিয়ে যেতে চাননি। আগে থেকে প্রচার করা ম্যানিফেস্টোকে তিনি জোরাল করতে চেয়েছেন এই হামলার মাধ্যমে। অস্ত্রের চেয়েও শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে চেয়েছেন হেলমেটে লাগানো ক্যামেরার মাধ্যমে। ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলাটির লাইভ সম্প্রচার তিনি করেছেন বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের সুযোগ নিয়ে। ফেসবুক ও টুইটারসহ সামাজিক মাধ্যমগুলোর সফল ব্যবহার করেছেন।

ট্যারান্টের বক্তব্য হচ্ছে, সাদারা শ্রেষ্ঠ জাতি। এর মধ্যে আবার ধর্মে যারা খ্রিষ্টান, তারা সর্বশ্রেষ্ঠ। ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের ‘উন্নত’ নাগরিক জীবনযাপন কেবল বিশেষ বর্ণের লোকদের ভোগের জন্য নিবেদিত হবে। এই সুযোগ-সুবিধায় অন্য কেউ ভাগ বসাতে পারবে না। সাদাদের পূর্বপুরুষদের আয়োজন করা সমৃদ্ধি কেবল তাদের মধ্যে সীমিত থাকবে। তিনি এসব স্পষ্ট করে বলতে পেরেছেন। এই দিক দিয়ে শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের ‘অত্যন্ত সফল একটি অভিযান’ বলা যায় এটিকে।

ট্যারান্ট নিজেকে আমেরিকার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনুসারী বলে দাবি করেছেন। তিনি আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেছেন ট্রাম্পের নীতিকে। ট্রাম্প যেভাবে উগ্র বর্ণবিদ্বেষী গোষ্ঠী ক্লু ক্ল্যাক্স ক্ল্যানের (কেকেকে) কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করেছেন, সেভাবে ট্যারান্টকে প্রকাশ্যে সমর্থন দেননি। তবে সন্ত্রাসী ঘটনার নিন্দা জানাতে গিয়ে এমন ভাব ও ভাষা প্রয়োগ করেছেন, তাতে হত্যার শিকার হয়েছে যারা, তাদের পরিবারের প্রতি কোনো সমবেদনা নেই। কারা হত্যার শিকার হয়েছেন তার উল্লেখ নেই। মুসলমানদের ওপর হামলাকে এভাবে এড়িয়ে যাওয়ায় সংবাদমাধ্যমে তার সমালোচনা হয়েছে।

২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার শার্লটসভিলে এলাকায় শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের বিক্ষোভে অংশ নেয়া লোকজনকে ট্রাম্প ‘খুব ভালো লোক’ বলে অভিহিত করেছিলেন। কেকেকে সাধারণত এ ধরনের সাম্প্রদায়িক অনুষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকে। এটি একটি গুপ্ত সংগঠন। সাদা জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা এই সংগঠনের মূল মন্ত্র। অভিবাসনের বিরুদ্ধে তাদের কট্টর অবস্থান। খ্রিষ্টানদের মধ্যে কট্টর গোষ্ঠীর এ লোকেরা নিজেরাই আমেরিকায় অভিবাসী। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে তারা এসেছে। এরাই আদিবাসী রেড ইন্ডিয়ানদের খুন-নির্যাতন করে আমেরিকায় নিজেদের অন্যায় রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। আমেরিকায় গৃহযুদ্ধের অবসানের পর ১৮৬০-এর দশকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কেকেকের আবির্ভাব ঘটে। নিজেদের লক্ষ্য অর্জনে তারা গুপ্তহত্যাসহ যেকোনো ধরনের সন্ত্রাসের আশ্রয় নিতে দ্বিধা করে না।

কেকেকের সাবেক প্রধান ডেভিড ডিউক এক সময় সরাসরি ট্রাম্পকে সমর্থন করেছিলেন। হিংসাবিদ্বেষ ছড়িয়ে দেয়ার জন্য দায়ী সংগঠন, কেকেকের সাবেক প্রধানের সমর্থন অস্বীকার না করায় ট্রাম্প তখন আমেরিকার সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হন। কোনো হবু আমেরিকান প্রেসিডেন্ট এ ধরনের গুপ্ত সংগঠনের প্রধানের সমর্থন গ্রহণ করবেন, এটা চিন্তাও করা যেত না। গণতন্ত্রের বিকাশের একপর্যায়ে নিজেদের কুখ্যাতির জন্য কেকেকে আমেরিকায় নিন্দিত ও ধিকৃত হয়। মূল ধারার রাজনীতিকেরা কেউ প্রকাশ্যে তাদের সমর্থন দেয়া বা নেয়ার সাহস দেখতেন না। ট্রাম্পের সাথে কেকেকের গভীর সম্পর্কের ব্যাপারটি সবাই এখন জানে। ট্যারান্ট এমন সময় ময়দানে নামলেন যখন গণতন্ত্রের সবচেয়ে ‘বড় রক্ষক’ আমেরিকার জিম্মাদার প্রেসিডেন্ট নিজেই কার্যত উগ্র সাম্প্রদায়িক ধ্যানধারণার কাণ্ডারি, যা গণতন্ত্রের মান-মর্যাদা ও মূলনীতির সাথে কোনোভাবে খাপ খায় না। দল হিসেবে রিপাবলিকানদের এমন অতি ডান বিচ্যুতি ঘটেছে। এ দলটির অনেক নেতার সাথেও গুপ্ত সংগঠনটির গভীর সম্পর্ক রয়েছে বলে জানা যায়।

গণতন্ত্রের পৃষ্ঠপোষক আমেরিকার এমন নৈতিক অধঃপতন মূলত বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। গণতন্ত্রের এখন ব্যবহার হচ্ছে উগ্র জাতীয়তাবাদীদের কর্মসূচি বাস্তবায়নের হাতিয়ার হিসেবে। উদ্ভব ঘটছে দেশে দেশে এক নতুন স্বৈরাচারের। নিজেদের নৈতিক মানের ঘাটতির কারণে দেশে দেশে প্রতিষ্ঠিত এ ধরনের স্বৈরাচারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকা কিছুই বলতে পারছে না। এমনকি ইউরোপীয়রাও এমন নব্য স্বৈরাচারীদের মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে। এ অবস্থায় ‘গণতন্ত্র’ পরিত্যক্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ট্যারান্ট অনেক দেশ ভ্রমণ করেছেন। অস্ট্রেলিয়া থেকে তিনি প্রায়ই নিউজিল্যান্ড আসতেন। ম্যানিফেস্টোতে স্পষ্টত বোঝা গেছে, তিনি শ্বেতাঙ্গ রক্তের বিশুদ্ধতা বজায় রাখতে চান। জাতিরাষ্ট্রের ধারণা বা দেশে দেশে সীমানাকে তিনি মানতে চান না। শ্বেতাঙ্গ স্বার্থ রক্ষিত হয়, এমন বিশ্বই তার পছন্দ। সেক্ষেত্রে পুরো পৃথিবী একটি রাষ্ট্র হয়ে যাবে, যেখানে তামাটে, কালো কিংবা অন্যান্য বর্ণের লোকেরা আফ্রিকা, এশিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকার দরিদ্র ও কম সম্পদ এলাকায় বসবাস করবে। নরওয়ের আন্দ্রেস ব্রেইভিকও একই ধরনের সাম্প্রদায়িক চিন্তায় দীক্ষিত মানুষ। ২০১১ সালে একটি যুবক্যাম্প এবং সরকারি ভবনে হামলা চালিয়ে ৭৭ জনকে হত্যা করেন তিনি। তিনি উত্তর ইউরোপের নরডিক দেশগুলোতে কোনো অভিবাসী দেখতে চান না। অভিবাসীমুক্ত একটি ‘উন্নত সমৃদ্ধ ইউরোপই’ তার পছন্দ।

বিচারপ্রক্রিয়ায় ব্রেইভিকের মানসিক সমস্যাটি বড় করে দেখেছেন বিচারক। তার নানা ধরনের মানসিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়। শেষে তার জন্য লঘু শাস্তির আয়োজন করা হলো। তিনি কোনো মতাদর্শ, সংগঠন ও মানুষের দ্বারা মগজ ধোলাইয়ের শিকার হয়েছেন কি না, সেটা গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়নি। ব্রেইভিকের জীবনী ঘেঁটে দেখা যায়, তিনি ছোটবেলা থেকে সাম্প্রদায়িক কট্টর মতাদর্শ দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। নিউজিল্যান্ডের পুলিশ ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, ট্যারান্ট একজন ‘একাকী ব্যক্তি’। তার সাথে অন্য কারো সম্পর্ক নেই। বিচারপ্রক্রিয়া ব্রেইভিকের মডেলে অগ্রসর হলে ট্যারান্টেরও হয়তো লঘু শাস্তি হবে। অথচ তিনি এতগুলো মানুষ হত্যার জন্য অনুতপ্ত নন। তার কাছে এটাকে মোটেও অন্যায্য মনে হয় না। বৈধ একটি কর্মই নাকি তিনি করেছেন।

‘ইসলামি জিহাদিদের’ সাথে কট্টর দক্ষিণপন্থী খ্রিষ্টান ব্রেইভিক ও ট্যারান্টের পার্থক্য রয়েছে। জিহাদিরা এক একটি অন্যায় করে একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়কে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন। প্রতিটি জঙ্গি ঘটনার পর মুসলমানদের প্রতি ঘৃণা ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। ইউরোপ-আমেরিকায় স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মুসলমানেরা আক্রান্ত হচ্ছেন। তাদের ওপর তৈরি হচ্ছে মানসিক চাপ ও নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কা। সামান্য কিছু মানুষের কাণ্ডজ্ঞানহীন সাম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ডের জন্য বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে এর দায় শোধ করতে হচ্ছে। ট্যারান্ট ও ব্রেইভিকরা শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হলেও কাউকে কিন্তু এ জন্য দায় নিতে হচ্ছে না। এমনকি কেকেকের মতো উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধেও কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার চিন্তাভাবনা করতে দেখা যাচ্ছে না কিংবা যারা শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদের বিকৃত ইতিহাস ছড়িয়ে দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধেও কোনো ব্যবস্থা নেয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।

ব্রেইভিক ও ট্যারান্টের উত্থান মূলত বিদ্বেষে ভরা কৃসংস্কারাচ্ছন্ন মন থেকে। পশ্চিমা গণমাধ্যমও এমন কুসংস্কারাচ্ছন্ন মন তৈরিতে সহায়তা করছে। এর মধ্যে নেদারল্যান্ডের একটি শহরে এক অস্ত্রধারী ট্রামে গুলি করে তিনজনকে হত্যা করেছে। শিরোনাম হয়েছে ‘টারকিশ অরিজিন গানম্যান কিলস থ্রি’। বাংলাদেশের একটি ইংরেজি পত্রিকা রয়টার্সের সূত্রে এ শিরোনামে খবরটি ছেপেছে। হত্যাকারী বা খুনির সাথে মুসলিম বিশ্বের কোনো রকম সম্পর্ক খুঁজে পেলে সেটাকে সবার আগে আনা হচ্ছে। আমরাও ‘পশ্চিমের আয়নায়’ খবর পরিবেশন করছি। মুসলমানেরা কোনো অপরাধ করলে পশ্চিমা মিডিয়া সেটা ফলাও করে প্রকাশ করে থাকে।

একই অপরাধ মুসলমানদের বিরুদ্ধে সংঘটিত হলে সেটি আর গুরুত্ব পায় না। এক গবেষণায় দেখা গেছে, কোনো অমুসলিম সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটালে সংবাদমাধ্যম যতটা গুরুত্ব দিয়ে খবর প্রকাশ করে, সেই একই ঘটনা কোনো মুসলমান ঘটালে তা এর চেয়ে ৩৫৭ গুণ বেশি গুরুত্ব দিয়ে সামনে আনা হয়। অমুসলিমদের সহিংসতা সংক্রান্ত খবরে প্রায়ই ‘টেররিজম’ শব্দটি ব্যবহার করা হয় না। মুসলমানদের দ্বারা সংঘটিত হলে অনিবার্যভাবে শব্দটির ব্যবহার হয়। অতি দক্ষিণপন্থী খ্রিষ্টানদের পাশাপাশি, রাজনৈতিক মহল ও মিডিয়া ব্রেইভিক ও ট্যারান্টদের মনোজগৎ তৈরি করছে। এ দুই শক্তি মূলত পশ্চিমা সমাজে মুসলমান, অশ্বেতাঙ্গ, অভিবাসী এবং অন্যান্য জাতিগত সংখ্যালঘুদের নেতিবাচকভাবে তুলে ধরে।

আজকে যে লোকটি গুলি করে এতগুলো মানুষ হত্যা করেছেন, তিনি শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদ নিয়ে জন্মগ্রহণ করেননি। তাকে তার সমাজ অশ্বেতাঙ্গদের ব্যাপারে যে ধারণা দিয়েছে, সেই ধারণা থেকেই তিনি এই নৃশংস কাণ্ড ঘটিয়েছেন। এর থেকে মুক্তি পেতে সেই অশুভ শ্রেষ্ঠত্ববাদের ধারণাকে বদলাতে হবে। এ জন্য মিডিয়াকে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকা নিতে হবে; যদিও এমনটি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।

‘অসাম্প্রদায়িক’ হওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা
অস্ট্রেলিয়ান ‘এ’ লিগের এক ম্যাচে গোল করার পর নিউজিল্যান্ডের ফুটবলার কস্তা বারবারুসেস সিজদায় পড়ে যান। মুসলমানরা যেভাবে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সিজদা করে, ঠিক সেভাবে সিজদায় লুটিয়ে পড়েন তিনি। তিনি মূলত ক্রাইস্টচার্চের ঘটনায় মুসলমানদের প্রতি সমবেদনা জানান এর মাধ্যমে। বাংলাদেশের একটি প্রধান পত্রিকা ছবিটি একেবারে প্রথম পাতায় ছেপেছে।

বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম একটি অসাম্প্রদায়িক মনোভাব প্রদর্শন করার জন্য বেশ সচেতন। এমন অসাম্প্রদায়িকতার প্রকাশ ঘটাতে গিয়ে তারা মুসলমানদের ধর্মচর্চা লুুকিয়ে রাখেন। নিজেরা আবার একই ধর্মচর্চা করেন আড়ালে। এমন সংস্কৃতি ও ধর্মীয় রসম-রেওয়াজ তারা পিতৃপুরুষদের কাছ থেকে পেয়েছেন। পারিবারিকভাবে সেটা তারা অনুসরণ করে চলেন। অন্য দিকে, অন্যান্য ধর্মের বিভিন্ন ধর্মীয় রসম-রেওয়াজকে জোর দিয়ে প্রচার করেন নিজেদের ‘অসাম্প্রদায়িক’ প্রমাণ করতে। অমুসলিমদের বিভিন্ন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান উদারভাবে তারা তুলে ধরেন। এর মধ্যে কার্যত কোনো দোষ নেই। পাশাপাশি নিজেদের বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান প্রচার করলেও কোনো দোষ হওয়ার কথা নয়। কিন্তু সেটা করতে তারা হীনম্মন্যতায় ভোগেন অকারণে।

দেশের ক্রিকেট খেলোয়াড়রা যখন বিশেষ কোনো সাফল্যের জন্য সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন সে চিত্র তারা সাধারণত ছাপান না। এ ধরনের ঘটনায় সাধারণত তারা হাত ওপরে তুলে দোয়া করার ভঙ্গি করেন। কখনো তারা সিজদায় পড়ে গিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন, যেমনটি বারবারুসেস করলেন। এগুলো প্রচার করার পরিবর্তে কিছু মিডিয়া এমন ধর্মীয় আচরণকে নিরুৎসাহিত করে।

একইভাবে ধর্মীয় বিভিন্ন দলের খবর প্রচার করার ক্ষেত্রেও এ মিডিয়া এক ধরনের সংস্কারে ভোগে। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ‘রাজনৈতিক ইসলাম’ এবং ‘ইসলাম নিয়ে উগ্রতা’ সৃষ্টিকারীদের মধ্যে পার্থক্য করতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা ‘রাজনৈতিক’ ইসলামকে ঠেকাতে গিয়ে এদের সাথে উগ্রবাদীদের গুলিয়ে ফেলেছেন। এই সুযোগে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ উগ্রতা দমনের নামে ‘রাজনৈতিক ইসলামকে’ দমন করেছে পরিকল্পিত উপায়ে ও নির্মমভাবে। এর ফলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে সেটা কারো জন্য সুফল বয়ে আনেনি। ক্ষমতাসীন সরকার পরে ‘রাজনৈতিক ইসলাম’ দমনে সাহায্যকারী সংবাদমাধ্যমের ওপরও চড়াও হয়েছে।

এই সংবাদমাধ্যম রাজনৈতিক ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করতে গিয়ে তাদের বিরুদ্ধে উগ্রতার অভিযোগ আনলেও অন্য ধর্মের উগ্রবাদীদের খবর প্রচারে অনাগ্রহ দেখায়। এ ক্ষেত্রে সম্ভবত তারা নিজেদের অসাম্প্রদায়িক প্রমাণের চেষ্টা করেন অন্যদের কাছে। ভারতের সাম্প্রদায়িক আরএসএস নেতা সম্প্রতি এক উসকানিমূলক বক্তব্যে বলেছেন, ‘২০২৫ সালে পাকিস্তান ভারতের অংশ হবে’। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের সিনিয়র নেতা ইন্দ্রেশ কুমার বক্তব্যের একপর্যায়ে বলেন, ‘আমাদের পছন্দমতো একটি সরকার নিশ্চিত করেছি আমরা ঢাকায়’। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত এ খবরটি বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের জন্য গুরুত্ব রাখে।

আরএসএস ক্ষমতাসীন বিজেপির শাখা সংগঠন। ইন্দ্রেশ কুমার একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। তার বক্তব্যের মধ্যে চরম সাম্প্রদায়িক উসকানি রয়েছে। কিন্তু খবরটি বাংলাদেশের প্রধান সংবাদমাধ্যমে দেখা যায়নি। এ ধরনের অনেক খবর বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করা হয় না। এই সংবাদ প্রচার না করার একটি যুক্তি হতে পারে, সাম্প্রদায়িক রেষারেষি এড়িয়ে চলার জন্য বাংলাদেশী মিডিয়া তাদের পাঠকদের জন্য এ খবরগুলো ‘হত্যা’ করছে। বাস্তবে এ ধরনের খবর প্রকাশ করে সংবাদমাধ্যম স্বচ্ছতার পরিচয় দিতে পারে। ভারত বরাবর ‘বাংলাদেশের বন্ধু’ বলে পরিচয় দেয় নিজের।

একই সাথে তারা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল বলে দাবি করে। এসব সংবাদ বাংলাদেশের মিডিয়ায় প্রকাশিত হলে ভারত সরকারের ওপর একটি চাপ তৈরি হয়; যাতে করে এমন দায়িত্বহীনতা এবং অন্যের প্রতি তাচ্ছিল্য প্রদর্শনের ব্যাপারে তারা সাবধান হতে পারত। কিন্তু এসব খবর লুকিয়ে রাখার মাধ্যমে আমরা কোনোভাবে তাদের অসাম্প্রদায়িক করে তুলতে পারব না; নিজেদেরও অসাম্প্রদায়িক প্রমাণ করতে পারব না। বরং একপর্যায়ে আগ্রাসী মনোভাব পোষণ করতে তারা আরো বেশি উৎসাহিত হয়ে উঠতে পারে।
jjshim146@yahoo.com

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top