জারদারি কি নওয়াজের পথে?

পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি ও তার ছেলে বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি গ্রেফতার হচ্ছেন কি না তা নিয়ে তাদের দল পাকিস্তান পিপলস পার্টিতে (পিপিপি) জল্পনা চলছে। তাদের উভয়ের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগ রয়েছে।

গত সপ্তাহে পাকিস্তান সরকার জারদারি ও তার ছেলের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। খবরটি ছড়িয়ে পড়লে জারদারির সমর্থক ও দলের কর্মীরা উত্তেজিত হয়ে ওঠে। ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার ওই তালিকায় জারদারি ছাড়াও সিন্ধু প্রদেশের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী, প্রাদেশিক সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী, আমলা ও ব্যাংকারদের নাম রয়েছে।
তদন্ত
গত সেপ্টেম্বরে জারদারি ও তার বোন ফারিয়াল তালপুরের অর্থ পাচার ও ভুয়া অ্যাকাউন্টের মামলা তদন্তে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট ছয় সদস্যের একটি যৌথ তদন্ত দল (জেআইটি) গঠন করে। এরপর সুপ্রিম কোর্ট তাদের মালিকানাধীন জারদারি গ্রুপ, বাহরিয়া টাউন ও ওমনি গ্রুপের সব লেনদেন ও সম্পত্তি হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

ইসলামাবাদে কেন্দ্রীয় তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, জেআইটির রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার গত সপ্তাহেই তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত ছিল। তিনি বলেন, জারদারি ভুয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও কোম্পানির মাধ্যমে কিভাবে অর্থ পাচার করছিলেন জেআইট কমিটি সে ব্যাপারে প্রমাণ হাতে পেয়েছে।

রাষ্ট্রের অর্থলুণ্ঠন ও আত্মসাৎকারীদের ছাড়বে না সরকার। তবে আল আরাবিয়ার পক্ষ থেকে প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জারদারি ও তার ছেলের গ্রেফতার হওয়া বা না হওয়ার বিষয়ে কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানান। সাবেক বিরোধীদলীয় নেতা ও জারদারির দল পিপিপির কেন্দ্রীয় নেতা খুরশিদ শাহ লাহোরে সাংবাদিকদের বলেন, দলের কো-চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টোকে গ্রেফতার করা হলে দেশ একটি বিশৃঙ্খলার দিকে অগ্রসর হবে।

রাজনৈতিক মেরুকরণ
পাকিস্তানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ভাষ্যকার রেজা রুমি বলেন, জারদারির ওপর আরোপিত ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তার রাজনৈতিক সঙ্কটের সূচনামাত্র। পাকিস্তানের রাজনীতি এখন মেরুকরণের দিকে চলছে। গণতান্ত্রিক রাজনীতির জন্য এটি ভালো কোনো লক্ষণ নয়। বিরোধী দলকে কখনোই নিশ্চিহ্ন করা যায়নি। এমনকি জবাবদিহিতামূলক কোনো পদক্ষেপের মাধ্যমেও তা সম্ভব হয়নি। এ ক্ষেত্রে তারা বিষয়টিকে রাজনৈতিক হয়রানি বলে অভিহিত করে এবং এটি দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য কোনো ভালো নিদর্শন নয়। রুমি বলেন, পাকিস্তানের অর্থনীতির স্বার্থেই দেশটিতে এখন অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে রাজনৈকি স্থিতিশীলতাই বেশি প্রয়োজন। যদি তা না থাকে তাহলে কোনোভাবেই অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জিত হবে না।

২০০৮ থেকে ২০১৩ মেয়াদে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করা জারদারির বিরুদ্ধে আগে থেকেই দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগ ছিল। এমনকি তাকে পাকিস্তানে ‘মিস্টার টেন পার্সেন্ট’ বলে চেনেন অনেকে। তবে জারদারি তার বিরুদ্ধে আনীত সাম্প্রতিক অভিযোগগুলো অস্বীকার করে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় বর্তমান সরকারকে দেশের প্রভাবশালী সামরিক বাহিনীর পরিচালিত যন্ত্র বলে অভিহিত করেন। স্ত্রী বেনজির ভুট্টোর একাদশ মৃত্যুবার্ষিকীতে দেয়া এক ভাষণে জারদারি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে সেনাবাহিনীর ‘নয়নমণি’ বলে উপাধি দিয়েছিলেন।

ইমরান খান নির্বাচনে জয়লাভ করার পর পাকিস্তান থেকে দুর্নীতি নির্মূল ও শত শত কোটি রুপি উদ্ধারের অঙ্গীকার করেছেন। তার সরকার বর্তমানে পাকিস্তানের অবনতিশীল অর্থব্যবস্থা এবং দ্রুত নিম্নগামী বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সাথে লড়াই করছে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top