ভারতের উত্তরপ্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী জানিয়েছেন, জনগণের ইচ্ছায় ও জনস্বার্থেই ২৬০০ কোটি টাকা খরচ করে বসানো হয়েছিল বিভিন্ন মূর্তি। এক মামলার শুনানিতে আজ মঙ্গলবার বিচারপতির বেঞ্চে হলফনামা দিয়ে এ তথ্য জানান সাবেক এ মুখ্যমন্ত্রী।
২০০৭ থেকে ২০১২ সালে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়ে লাখনৌ নয়ডাসহ রাজ্যের বহু পার্ক-উদ্যানে বসানো হয় বিশাল বিশাল দামি মূর্তি। সেগুলোর মধ্যে মায়াবতীর নিজের, দলের প্রতিষ্ঠাতা কাঁসিরামের, বহুজন সমাজ পার্টির প্রতীক হাতির এবং বিভিন্ন দলিত নেতাদের মূর্তি ছিল। এগুলোর কোনোটি ছিল ব্রোঞ্জের, কোনোটি সিমেন্টের, ছিল মার্বেল পাথরের মূর্তিও।
এ জন্য রাজ্যের ব্যয় হয়েছিল প্রায় ২৬০০ কোটি টাকা। মূর্তি স্থাপনের সময়ই প্রশ্ন ওঠে, জনগণের করের টাকা খরচ করে কেন এগুলো স্থাপন করা হচ্ছে। ওঠে দুর্নীতির অভিযোগও। শেষ পর্যন্ত ২০০৯ সালে মামলা দায়ের হয় মায়াবতীর বিরুদ্ধে।
এ মামলার ধারাবাহিকতায় ১০ বছর পর গত ফেব্রুয়ারি মাসে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের বেঞ্চ জানিয়েছিলেন, প্রয়োজনে মূর্তি তৈরিতে খরচ হওয়া ওই টাকা ফেরত দিতে হবে মায়াবতীকে। তবে তার আগে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতীর কী বক্তব্য রয়েছে এ ব্যাপারে, সেটাও জানতে চেয়েছিল শীর্ষ আদালত। সেই নির্দেশনা মোতাবেক মায়াবতী মঙ্গলবার লিখিত বক্তব্য জানান আদালতে।
হলফনামায় স্পষ্টভাষায় মায়াবতী জানান, ওই মূর্তি বসানো হয়েছিল ‘জনস্বার্থে’ এবং ‘জনগণের ইচ্ছায়’। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ কি হাসপাতাল, শিক্ষা বা অন্য কোনো জনকল্যাণের কাজে ব্যবহার করা যেত না? আদালতের এমন প্রশ্নের জবাবে মায়াবতী বলেন, সেটা ‘বিতর্কিত বিষয়’। তবে এক্ষেত্রে দলিত ভাবাবেগ উস্কে দিয়ে বিএসপি নেত্রীর প্রশ্ন, অন্য কারো মূর্তিতে প্রশ্ন ওঠে না, শুধু দলিতদের মূর্তিতেই যত দোষ?
হলফনামায় মায়াবতী এর জন্য নিজেকে বিতর্কের উর্ধ্বে রাখতে চেয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, রাজ্য বিধানসভা দলিত নেত্রীকে সম্মান জানাতে চেয়েছিল। কীভাবে আমি তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধাচরণ করতে পারি? আর ওই মূর্তিগুলোর জন্য সঠিক পদ্ধতিতে বাজেট পাসও হয়েছিল বিধানসভায়। মায়াবতী দাবি করেন, সাধারণ মানুষ যাতে এ মূর্তিগুলো থেকে অনুপ্রেরণা পান, সে জন্যই ওই মূর্তিগুলো তৈরি হয়েছিল।
মূলত দলিত সম্প্রদায়ের দাবিদাওয়া আদায় করতেই কাঁসিরামের নেতৃত্বে উত্তরপ্রদেশে তৈরি হয়েছিল বহুজন সমাজ পার্টি। সেই দলিত সম্প্রদায়ের ভোটব্যাঙ্কে ভর করেই তিনবার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন মায়াবতী। এখনো রাজনীতিতে তার অন্যতম হাতিয়ার দলিতরা।
শীর্ষ আদালতের হলফনামাতেও এ হাতিয়ার ব্যবহার করেন বিএসপি নেত্রী। সর্দার বল্লভভাই পটেল, রাজীব গান্ধি, ইন্দিরা গান্ধি, এন টি রামারাও, জয়ললিতার মতো নেতা-নেত্রীদের উদাহরণ তুলে ধরে মায়াবতী প্রশ্ন করেন, শুধু দলিত নেতা-নেত্রীদের মূর্তি বসালেই কেন প্রশ্ন ওঠে? অন্যদিকে বিএসপির প্রতীক হাতি হওয়া সত্ত্বেও হাতির মূর্তির প্রাচুর্যের ব্যাপারে তিনি বলেন, ওই মূর্তিগুলি বিএসপি-র প্রতীক নয়। ‘শুধুই স্থাপত্যকলা’র নিদর্শন হিসেবে হাতির এতগুলো মূর্তি বসানো হয়েছিল।