চলছে মাসব্যাপী পকেট কাটার মহোৎসব!

সুনামগঞ্জ শহরের ঐতিহ্যবাহী ষোলঘর মাঠে মাসব্যাপী শুরু হওয়া শিল্প ও পণ্য মেলায় দর্শনার্থীদের পকেট কেটে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে পকেটমার চক্র। মেলার মাঠের ভেতরে শিশুদের বিনোদনের নামে চলছে অতিরিক্ত অর্থ আদায় বাণিজ্য। এতে সর্বস্বান্ত হচ্ছে দশৃনার্থীরা।

জানা যায়, ২০১৯ সালে জানুয়ারী মাসের প্রথমদিকে জেলা শহরের ষোলঘর ষ্টেডিয়ামে জেলা ক্রীড়া সংস্থার আয়োজনে এবং বাংলাদেশ বেনারসী মসলিন এন্ড জামদানী সোসাইটির ব্যবস্থাপনায় মাসব্যাপী শুরু হয়েছে শিল্পও পণ্য মেলা। এই মেলা বাহির থেকে শিল্প ও পণ্য মেলা মনে হলেও ভিতরের দৃশ্য ব্যতিক্রম ও উল্টো।

মেলার আড়ালে এক ধরনের জোয়া খেলার আখড়ায় পরিণত হয়েছে মেলার ভিতরের চারপাশ। আর মাইকের বিকট আওয়াজ আশপাশের পাড়া মহল্লার এস এস সি পরিক্ষাথীদের্র পড়াশোনার বিঘ্ন দেখা দিয়েছে।

১০ টাকা দিয়ে টিকেট কিনে মেলায় প্রবেশ করছেন ছোট ছোট কোমলমতি শিশুদের নিয়ে তাদের অভিভাবক দর্শনার্থীরা। মেলার ভেতরের চারপাশ ঘুরে দেখা যায় শিল্প ও পণ্য সামগ্রী তেমনটা না থাকলেও অধিকাংশই বাচ্চাদের মন কাড়ানো বিনোদন ব্যবস্থা রয়েছে এই মেলায়। যা সুনামগঞ্জ বাসীর জন্য এক বেদনাদায়ক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অতিরিক্ত টাকায় টিকেট নিয়ে প্রতিদিন বিনোদন উপভোগ করতে হিমশিম খাচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষজন। নুন আনতে যাদের পান্তা ফুরায় তার মধ্যে আবার বসেছে এই মেলা। মেলায় ৭০টিরও বেশি স্টল বসেছে বিভিন্ন নিন্মমানের পণ্য সামগ্রী নিয়ে।

পাশাপাশি বাচ্চাদের অতিরিক্ত বিনোদনে ঘিরে রয়েছে পুরো মেলার আঙ্গিনা। যেখানে অন্যান্য বছরের বাণিজ্য তুলনায় তিনগুণ বাড়তি বিনোদনের ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছে। এই শিল্পও পণ্য মেলা দেখতে আসা দর্শনার্থীদের পকেট কেটে পকেটমার চক্র হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা।
প্রবেশ টিকেটের নামে চলছে লটারি ব্যবসা। এক টিকেটের জায়গা একেকজন ৪০/৫০টিরও বেশি টিকেট সংগ্রহ করছেন মোটর সাইকেল আর গাড়ি পাওয়ার লোভে। এদের মধ্যে রয়েছে দিন মজুর যারা সারাদিনের রোজগারের টাকা দিয়ে এই টিকেট ও মেলার বিনোদন উপভোগ করছেন।

সরেজমিনে ঘুরে মেলায় আসা দর্শনাথীদের সাথে আলাপকালে তারা জানান, অতিরিক্ত টাকা দিয়ে বাচ্চাদের বিনোদন উপভোগ করাতে গিয়ে আমাদের পকেট খালি হয়ে যাচ্ছে। বিনোদনের নামে মেলায় বসেছে স্লিপার যমুনা পার্ক যা শিশুদের সবচেয়ে বেশি আকর্ষনীয় খেলা।

তারা আরো জানান, যাদের টাকা আছে তাদের সন্তানরাই এই পণ্য মেলায় এসে বাচ্চাদের বিনোদন হিসেবে খ্যাত স্লিপার বিনোদন উপভোগ করতে পারবেন। বাচ্চাদের স্লিপার বিনোদনের টিকেট ১৫ মিনিটের জন্য কিনতে হয় ৩০০ টাকায়।

আবার অনেকে বলছেন, এটা নামে শিল্পও পণ্য মেলা হলেও আড়ালে আয়োজকরা হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। বিনোদনের মধ্যে রয়েছে নাগরদোলা যার টিকেট মূল্য ৩০ টাকা, নৌকা দোলনা টিকেট ৫০ টাকা, রেলগাড়ি ৩০ টাকা, হেলিকপ্টার বিনোদন ৩০ টাকা, মোটর সাইকেল ও গাড়ির জেন্ডার গেইম টিকেট মূল্য ৩০ টাকা, হাতিঘোড়া চড়কী টিকেট ৩০ টাকা।

এছাড়াও রয়েছে বড়দের জন্য সবচেয়ে বেশি সময়ের বিনোদন দিবরুল সার্কাস যার টিকেট মূল্য ৫০ টাকা, ৭০ টাকা, ৯০ টাকা। এত বেশি টাকার কারণেই আড়াই ঘন্টার এই বিনোদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন শতশত দর্শক। শুধুমাত্র যমুনা পার্কে বেবি বিনোদনের ব্যবসার নামে তারা প্রতিনিয়ত হাতিয়ে নিচ্ছেন অতিরিক্ত লাখ লাখ টাকা।

মেলা দেখতে আসা বেশ কয়েকজন জানান, তাদের পকেট কেটে মানিবেগসহ সব টাকা নিয়ে গেছে পকেটমার চক্র। শিল্প ও পণ্য মেলার নামে এই বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ করে মেলায় সাধারন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের শিশুদের জন্য সহনীয় পর্যায়ের টিকেট বিনোদন রাখার জন্য জেলা প্রশাসকের নিকট দাবী জানাচ্ছেন। এবিষয়ে আয়োজনকারী ও কতৃপক্ষ নজর দিবেন এমনটাই আশা করছেন ভূক্তভোগী সুনামগঞ্জ বাসী।

এব্যাপারে মেলার মালিক বাবলু মিয়ার কাছে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা ব্যবসা করতে এসেছি আপনারা পত্রিকায় নিউজ না করে আমাদেরকে সাহায্য সহযোগিতা করুন। সাংবাদিকদের ম্যানেজ করার জন্য একজন সাংবাদিককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান (ওই সাংবাদিক সিলেটের একটি পত্রিকায় কাজ করেন)। তারপরেও আপনাদের কিছু জানার থাকলে ওই সাংবাদিকের কাছ থেকে জেনে নিবেন।

এব্যাপারে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান ইমদাদ রাজা চৌধুরী বলেন, মেলা চলবে সরকারের নীতিমালার আলোকে। কেউ যদি এখানে অতিরিক্ত টাকা আদায় করেন এবং মেলার সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট করতে মেলায় অশ্লীল নৃত্য চালানোর চেষ্টা করেন তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপরে জেলা প্রশাসক মোঃ আব্দুল আহাদ বলেন, এই বিষয়গুলো তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ শরিফুর ইসলামকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top