ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে এক দিনের নবজাতক সন্তানকে রেখে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন তানিয়া সুলতানা (২১)।
বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) সকালে তিনি ইংরেজী দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি সিজারিয়ানে এক মেয়ে শিশুর জন্ম দেন।
তানিয়া উপজেলার চর আলগী ইউনিয়নের বোরাখালী চরের সেনা সদস্য আবু সাহিদের মেয়ে এবং একই এলাকার সেনা সদস্য আরিফুল ইসলামের স্ত্রী। চলতি বছরের ফেব্ররুয়ারিতে তাদের বিয়ে হয়।
তানিয়া জানান, মঙ্গলবার ইংরেজি প্রথম পত্র পরীক্ষা চলাকালে তার প্রসব ব্যথা শুরু হয় এবং পরীক্ষা শেষে তাকে গফরগাঁও আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে নরমাল ডেলিভারির জন্য দীর্ঘ সময় চেষ্টা করে নবজাতকের কথা ভেবে চিকিৎসকেরা সিজারিয়ান অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেন। এরপর সন্ধ্যায় সিজারিয়ানের মাধ্যমে তার একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়।
এক দিনের নবজাতককে রেখে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার বিষয়ে তানিয়া বলেন, ‘এই অনুভূতির কথা কোনোদিন ভুলতে পারব না। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই গফরগাঁও আধুনিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রতি। তারা আমাকে প্রসব পরবর্তী সময়ে বিশেষ যত্ন নিয়েছেন ও হাসপাতালেই পাশের একটি কক্ষে পরবর্তী দিনের পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছেন। সন্তান জন্ম দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই পরীক্ষা দিতে পেরে আমি অনেক আনন্দিত।’
সিজারিয়ান অপারেশনের দায়িত্বরত চিকিৎসক গাইনি, প্রসূতিবিদ্যা বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডা. শারমিন আক্তার পপি বলেন, ‘আমরা প্রসূতির স্বাস্থ্যের অবস্থার ওপর নির্ভর করে তাকে পরীক্ষা দেয়ার অনুমতি দেই। সবচেয়ে বড় কথা হলো, প্রসূতি নিজেই পরীক্ষা দেয়ার জন্য মানসিকভাবে তৈরি ছিল। প্রসবকালীন জটিলতা উপেক্ষা করে মেয়েটি পরীক্ষায় অংশ নেয়ায় এটি অন্য মেয়েদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’
তানিয়ার মা লিপি বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়েও পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তবে এভাবে পরীক্ষার মধ্যে মাতৃত্বের আরেক পরীক্ষা দিতে হবে তা ভাবতে পারেননি।’
এইচএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র সচিব ও গফরগাঁও সরকারি কলেজের অধ্যাপক ড. ইমরান হোসাইন বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থীকে আমরা নিয়ম মোতাবেক বিশেষ যত্নে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছি। সার্বক্ষণিক তার শারীরিক খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। একই সাথে পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক ওই পরীক্ষার্থীর দেখভাল করছেন।’