খেলাপি ঋণ আদায়ে টাস্কফোর্সের পরিবর্তে পর্যালোচনা কমিটি

খেলাপি ঋণ আদায়ে করণীয় নির্ধারণে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠন থেকে পিছু হটলো অর্থমন্ত্রণালয়। এখন টাস্কফোর্সের পরিবর্তে একটি কমিটি গঠন করা হবে। টাস্কফোর্স গঠনের ব্যাপারে অর্থমন্ত্রীর সম্মতি পাওয়া যায়নি। কমিটির নামকরণ করা হবে, খলাপি ঋণ পর্যালোচনা কমিটি। এই কমিটির প্রধান থাকবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নর। এ ক্ষেত্রে ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামিলকে প্রধান করা হতে পারে। কমিটিতে অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং ব্যাংকিং খাত থেকে দু’জন করে ৪ জন প্রতিনিধি থাকবেন।

কমিটির কাজ হবে কী করে খেলাপি ঋণ আদায় জোরদার করা যায় তার কৌশল নির্ধারণ করা। একই সাথে তারা খেলাপি ঋণ যাতে আর না বাড়ে তার উপায়ও অনুসন্ধান করবেন। এছাড়া কী কারণে বিগত সময়ে এত অধিক পরিমাণে ঋণ অবলোপন করা হয়েছে তাও খতিয়ে দেখবে পর্যালোচনা কমিটি। আগামী সপ্তাহের মধ্যে কমিটি গঠন করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবের পক্ষ থেকে টাস্কফোর্স গঠন সম্পর্কিত একটি ফাইল অর্থমন্ত্রীর কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু মন্ত্রীর পক্ষ থেকে এই টাস্কফোর্স গঠন না করে কমিটি গঠন করার কথা বলা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কমিটি গঠন করা হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম গতকাল বুধবার সচিবালয়ে বলেন, এ বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে এবং সব কিছুই ঠিকঠাক মতো চলছে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্র জানায়, ঋণ পর্যালোচনা কমিটির প্রধান করার প্রস্তাব করা হয়েছে আহমেদ জামিলকে। তার আওতায় অর্থ বিভাগ থেকে দু’জন যুগ্মসচিব এবং দুটি সরকারি ব্যাংক থেকে এমডি পদমর্যাদার দু’জনকে কমিটিতে সদস্য হিসেবে রাখা হবে। প্রাথমিকভাবে কমিটির সদস্য সংখ্যা হবে ৫। তবে প্রয়োজন হলে বাড়ানো হবে। একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কমিটি অর্থমন্ত্রীর কাছে প্রতিবেদন পেশ করবে।

প্রসঙ্গত রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ এখন ৪৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি। ব্যাংকগুলোর নিজস্ব সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর ডিসেম্বর শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪৮ হাজার ২২২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এর আগে সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪৮ হাজার ৩৪৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ তিন মাসে ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমেছে ১২৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে ব্যাংকগুলোর দেয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে একমাত্র জনতা ব্যাংক ছাড়া বাকি পাঁচটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমেছে। আলোচ্য সময়ে জনতা ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৩০৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এটি আগের প্রান্তিকের তুলনায় ২ হাজার ৮৬৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা বেশি। গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১৪ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা।

অন্যদিকে বাকি পাঁচটি ব্যাংকের মধ্যে গত ডিসেম্বর শেষে সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমেছে ১ হাজার ৫৭৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা। গত সেপ্টেম্বর শেষে সোনালী ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১৩ হাজার ১৭৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। ডিসেম্বর শেষে এটি কমে দাঁড়ায় ১১ হাজার ৬০০ কোটি ১৯ লাখ টাকা।

একই সময়ে রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমেছে ৮৫৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। গত সেপ্টেম্বর শেষে রূপালী ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৯৭০ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, ডিসেম্বর শেষে এটি কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ১১৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা।

গত ডিসেম্বর শেষে অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমেছে ৩৩৮ কোটি টাকা। গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। ডিসেম্বর শেষে এটি কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা।

আলোচ্য সময়ে বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমেছে ২১১ কোটি ২৬ লাখ টাকা। গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৮২৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ডিসেম্বর শেষে এটি কমে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৬১৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা।

গত ডিসেম্বর শেষে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (বিডিবিএল) খেলাপি ঋণ কমেছে ১৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮৪৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা, ডিসেম্বর শেষে এটি কমে দাঁড়িয়েছে ৮৩২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।

জানা গেছে, ২০০৯ সালে যেখানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা; সেখানে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। একই সময়ে ঋণ অবলোপন করা হয়েছে আরো প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। এই হিসাব ধরলে দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ হবে দেড় লাখ কোটি টাকা; যা আমাদের জাতীয় বাজেটের এক-চতুর্থাংশ।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top