‘ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে হামলার নেপথ্যে মোসাদের হাত’

নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে বড় মসজিদের চেয়ারম্যান দাবি করেছেন, ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে হামলার নেপথ্যে ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের হাত রয়েছে। লাভ নিউজিল্যান্ড হেট রেসিজম-এর আয়োজনে বর্ণবাদবিরোধী এক সমাবেশে যোগ দিয়ে অকল্যান্ডের ওমর ফারুক মসজিদের চেয়ারম্যান আহমদ ভামজি এ দাবি করেন।

আহমদ ভামজি তার বক্তব্যে আরো বলেন, ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে অতর্কিত বন্দুক হামলাকারী ব্রেন্টন ট্যারান্ট ‘ইহুদিবাদী ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান’ থেকে অর্থের জোগান পেয়েছিলেন।

টুইটারে পোস্ট করা এক ভিডিওতে ভামজিকে বলতে শোনা যায়, আমার প্রচণ্ড সন্দেহ, এর পেছনে বেশ কয়েকটি গোষ্ঠী রয়েছে। বলতে কোনো দ্বিধা নেই, এই ঘটনায় অবশ্যই মোসাদের হাত রয়েছে।

বর্ণবাদবিরোধী ওই সমাবেশে তার এই বক্তব্যের সময় নিরবতা বিরাজ করছিল। এমন সময় ভেতর থেকে এক ব্যক্তি চিৎকার করে তার বক্তব্যকে সমর্থন দিয়ে বলেন, এটাই সত্য। ইসরাইল এর নেপথ্যে রয়েছে, এটাই সঠিক।

ভামজি এ বিষয়ে তদন্তের আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেখতে হবে এই বন্দুকধারী কোথা থেকে এ কাজের জন্য অর্থ পেয়েছে।

তিনি আরো বলেন, মোসাদই এ সবের পেছনে রয়েছে। আমি যখন মোসাদের ব্যাপারে কথা বলি, তখন কেন ইহুদিদেরকে এর জন্য বিব্রত হতে হবে। আমাকে জবাব দিন।

তবে নিউজিল্যান্ডের ইসরাইলি দূতাবাস ভামজির এই বক্তব্যকে অনর্থক উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছে। ওয়েলিংটনের ইসরাইলি দূতাবাস ভামজির বক্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে। তারা এক বিবৃতিতে জানায়, নিউজিল্যান্ডের জনগণের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে ইসরাইলবাসীও ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে মুসল্লিদের ওপর চালানো বর্বর হামলায় শোক জানিয়েছে।

গত ১৫ মার্চ অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক ব্রেন্টন ট্যারান্ট নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুই মসজিদে নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে ৫০ জন নিহত হয়। এর পরপরই নিউজিল্যান্ড পুলিশ তাকে আটক করে। পরে আদালত হাজির করা হলে আদালত তাকে রিমান্ডে পাঠায়।
ওই হামলায় নিহতদের মধ্যে পাঁচজন বাংলাদেশি রয়েছেন।

আরো পড়ুন : জেসিন্ডাকে অন্যরকম সম্মান দেখালো আরব আমিরাত
নয়া দিগন্ত অনলাইন, ২৩ মার্চ ২০১৯, ০৯:৫০
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে ১৫ মার্চ এক বর্বরোচিত হামলায় ৫০ জন মুসলমান নিহত হওয়ার প্রেক্ষিতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন যেভাবে হতাহতদের প্রতি সহানুভূতি ও সহমর্মিতা দেখিয়েছেন, তার স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে অন্যরকমভাবে সম্মান জানিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত।

গতকাল শুক্রবার রাতে বিশ্বের সর্বোচ্চ ভবন বুর্জ খলিফায় নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্নের ছবি ফুটিয়ে তোলা হয়। ছবিতে দেখা যায়, একজন মুসলিম নারীকে জড়িয়ে ধরে তাকে সান্ত¦না দিচ্ছেন জেসিন্ডা আরডার্ন। তার চেহারাও বিষণ্ন। তার ওই ছবির ওপরে প্রথমে আরবিতে লেখা রয়েছে সালাম বা শান্তি। এরপর ইংরেজিতে লেখা রয়েছে পিস, যার অর্থও শান্তি।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাখতুম এক টুইটে বলেন, মসজিদে নিহতদের সম্মানে আজ পুরো নিউজিল্যান্ড নিরবতা পালন করেছে। ধন্যবাদ জেসিন্ডা আরডার্ন ও নিউজিল্যান্ডকে। আপনারা মুসলমানদের প্রতি যে সহানুভূতি ও সহযোগিতার মনোভাব দেখিয়েছেন তা পুরো বিশ্বের দেড়শ কোটি মুসলমানের সম্মান ও শ্রদ্ধা অর্জন করেছে। অথচ এর আগে এই নিউজিল্যান্ডেই মুসলমানদের ওপর চালানো বর্বরোচিত হামলায় ব্যথিত হয়ে পড়েছিল পুরো মুসলিম বিশ্ব।

গত ১৫ মার্চ অস্ট্রেলিয় নাগরিক ব্রেন্টন ট্যারেন্টের মুসলিমবিদ্বেষের শিকার হয়ে মারা গিয়েছিলেন ৫০ জন মুসল্লি। এরপর পুরো নিউজিল্যান্ডে ছড়িয়ে পড়েছিল আতঙ্ক। মুসলমানরা নিজেদের ঘর থেকে বের হতে সাহস পাচ্ছিলেন না। কিন্তু নিউজিল্যান্ড সরকার বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্নের দ্ব্যর্থহীন ভূমিকার কারণেই খুব শীঘ্রই পাল্টে গেছে পুরো পরিস্থিতি।

হামলার শিকার মসজিদ দুটিসহ পুরো নিউজিল্যান্ডে গতকাল রীতিমত উৎসবের মেজাজে জুমা আদায় হয়েছে। মুসলমানরা ভিতরে নামাজ পড়েছেন, আর বাইরে সংহতি জানাতে অবস্থান নিয়েছিল হাজারো অমুসলিম।

ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ও বেতারে জুমার আযান প্রচারিত হয়েছে। সরাসরি সম্প্রচারিত হয়েছে জুমার নামাজও। নিউজিল্যান্ডের অমুসলিম নারীরাও আজ স্কার্ফ বা হিজাব পরে সংহতি প্রকাশ করেছেন মুসলিমদের সাথে। নিহতদের স্মরণে পালন করা হয়েছে দুই মিনিটের নিরবতা। এক কথায় অভূতপূর্ব এক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল পুরো নিউজিল্যান্ডে।

শুক্রবারে সেখানকার পত্রিকাগুলোও বড় করে ছেপেছে শান্তির বাণী ‘আস-সালাম’। আরবি হরফেই বড় করে উল্লেখ করা হয়েছে সৌহার্দ্য আর সহমর্মিতার সেই বাণী। সাধারণ মানুষও বসে থাকেনি। বিভিন্ন দেয়ালে, ব্যানারে তারাও জানিয়েছে সহমর্মিতার বার্তা। আরবি, ইংরেজি ও স্থানীয় ভাষায় প্রচার করছে মুসলিমদের সেই শ্বাশত বাণী।

গত শুক্রবার জুমার নামাজের সময় আল নুর ও লিনউড মসজিদে হামলা চালায় ২৮ বছর বয়সী অস্ট্রেলিয় নাগরিক ব্রেন্টন ট্যারেন্ট। অভিবাসী ও মুসলিমদের প্রতি ঘৃণা থেকেই তিনি ভয়াবহ ওই হামলা চালিয়েছেন। হামলার পরপরই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে, তাকে সর্বোচ্চ শাস্তিই প্রদান করা হবে। আপাতত ৫ এপ্রিল পর্যন্ত রিমান্ডে থাকছে সে।

ব্রেন্টনের ওই হামলার পর দেশের মানুষ মুসলিমদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। নিউজিল্যান্ডের সরকার কোনোপ্রকার রাখঢাক ছাড়াই মুসলমানদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন যেভাবে বারবার করে হামলার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, মুসলমানদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন, মুসলিম নারীদের সাহস জুগিয়েছেন তা এক কথায় অনন্য।

তিনি নিজে মুসলমানদের মতো করে হিজাব পরেছেন, পার্লামেন্টের অধিবেশন শুরু করেছেন পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে, এমনকি পার্লামেন্টে নামাজেরও ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top