করোনাভাইরাস এখনো বিশ্ব মহামারী নয় : ডব্লিউএইচও

চীন থেকে নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণ বিশ্বের ২০টির বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়লেও পরিস্থিতি এখনো বিশ্ব মহামারীতে রূপ নেয়নি বলেই জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংন্থা (ডব্লিউএইচও)। বরং বিশ্বে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাটি। ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক বলেছেন, চীনের নেয়া নাটকীয় পদক্ষেপের ফলে এর বিস্তার রোধের এই সুযোগ তৈরি হয়েছে।

একই সময়ে যখন বিশ্বজুড়ে অসংখ্য মানুষ কোনো সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হন, ডব্লিউএইচওর মতে, তখনই তাকে বিশ্ব মহামারী বলা যায়। এর সাম্প্রতিক একটি উদাহরণ হচ্ছে ২০০৯ সালের সোয়াইন ফ্লু। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সেই মহামারীতে বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ মারা গেছে। নতুন কোনো ভাইরাস, যেটিতে মানুষ সহজেই সংক্রমিত হয় এবং যা মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়, সেটি বিশ্ব মহামারীতে রূপ নেয়ার আশঙ্কা থাকে। করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে এসব বৈশিষ্ট্যই আছে। এর কোনো প্রতিষেধক না থাকায় ভাইরাসটির বিস্তার ঠেকানো জরুরি।

করোনাভাইরাস দ্রুত ছড়াচ্ছে, এ কথা ডব্লিউএইচওর বিশেষজ্ঞরাও স্বীকার করেছেন। তবে তারা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতি এখনো বিশ্ব মহামারীতে রূপ নেয়নি। বর্তমান পরিস্থিতি এখনো আয়ত্তের মধ্যে আছে এবং এ প্রাণঘাতী ভাইরাস থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব বলেই মত প্রকাশ করেছেন ডব্লিউএইচওর ‘গ্লোবাল ইনফেকশাস হ্যাজার্ড প্রিপেয়ার্ডনেস ডিভিশন’-এর প্রধান সিলভি ব্রায়ান্ড।

এই ভাইরাসে চীনে এখন পর্যন্ত ৪৯০ জন নিহত ও আরো ২৪ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। চীনের বাইরে হংকং এবং ফিলিপাইনে একজন করে মারা গেছেন। প্রাদুর্ভাবের শুরুর দিকে দেশটির ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট সরকার পরিস্থিতি মোকাবেলায় যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার নিজেদের দুর্বলতার কথাও স্বীকার করে চীনের ক্ষমতাসীন সরকার।
বিশ্বের ২০টিরও বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় জাতিসঙ্ঘের স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্থা ডব্লিউএইচও বৈশ্বিক স্বাস্থ্যের জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ চীন সফরে ব্যাপক কড়াকড়ি আরোপ ও দেশটিতে বিমান চলাচল স্থগিত করেছে।

কিন্তু মঙ্গলবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, চীনের নেয়া নাটকীয় পদক্ষেপের ফলে করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধের সুযোগ তৈরি হয়েছে। সংস্থাটির প্রধান টেড্রোস অ্যাডহ্যানম ঘেব্রেইয়েসুস বলেছেন, ভাইরাসে আক্রান্তদের ৯৯ শতাংশ চীনে। বাকি বিশ্বে মাত্র ১৭৬ জন। এর মানে এই নয় যে, পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে না।

কিন্তু এটা নিয়ে কাজ করার জন্য আমাদের একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই আক্রান্তদের মাত্র ৩৮ শতাংশের পূর্ণাঙ্গ তথ্য পেয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এ প্রাদুর্ভাবটি এখনো বৈশ্বিক মহামারীতে রূপ নেয়নি। তবে বিশ্বের উন্নত দেশগুলো করোনাভাইরাস মোকাবেলায় চীনের সাথে তথ্য-উপাত্ত আদান-প্রদানে ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সংস্থাটির প্রধান অ্যাডহ্যানম ঘেব্রেইয়েসুস।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধানের এই বক্তব্য এমন এক সময় এলো যখন সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে নতুন করে যারা সংক্রমিত হয়েছেন; তারা চীন সফর করেননি। বুধবার জাপান সরকার বলছে, প্রমোদতরীতে কোয়ারেন্টাইনে থাকা তিন হাজার ৭১১ জনের মধ্যে অন্তত ১০ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া গেছে। চীনের অন্যান্য ব্যাপক জনবহুল মেট্রোপলিটন শহরগুলোতে এই ভাইরাসের বিস্তারের ব্যাপারে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের মাঝে দেশটির সাংহাই-সহ অন্তত তিনটি শহরে মানুষের চলাচলে ব্যাপক বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

চীনের প্রযুক্তি জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান আলিবাবার প্রধান কার্যালয় দেশটির হ্যাংঝু প্রদেশে অবস্থিত। এই শহরের কিছু অংশ অবরুদ্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রত্যেক পরিবার থেকে প্রতি দুই দিনে একজন করে ব্যক্তি বাড়ির বাইরে বের হয়ে প্রয়োজনীয় নিত্যসামগ্রী কিনতে পারবেন। নতুন এই নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছেন শহরটির প্রায় ৩০ লাখ মানুষ। সাংহাই থেকে প্রায় ১৭৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হ্যাংঝুতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২০০ জনের বেশি। তাদের মধ্যে একজন মারা গেছেন। গত ডিসেম্বরে উহানের একটি সামুদ্রিক খাবারের বাজার থেকে প্রাণীর মাধ্যমে মানুষের দেহে ছড়িয়ে পড়ে নতুন এই করোনাভাইরাস। নজিরবিহীন ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে চীন এই ভাইরাসের বিস্তার রোধের কঠিন লড়াই করলেও উৎসস্থল উহানের গণ্ডি পেরিয়ে এটি এখন বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) কোনো সংক্রমণকে বিশ্ব মহামারী ঘোষণার আগে কিছু ধাপ আছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ যেভাবে ছড়িয়েছে, তাতে এটি এখনো বিশ্ব মহামারী ঘোষণার এক ধাপ নিচে আছে। করোনাভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে ছড়াচ্ছে এবং চীনের প্রতিবেশী দেশগুলোসহ দূরের দেশেও এর বিস্তার ঘটছে। যদি বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে বহু মানুষের মধ্যে এর বিস্তার ঘটতেই থাকে, তাহলে তখন সেটিকে ‘বিশ্ব মহামারী’ ঘোষণা করা যাবে। সূত্র : এএফপি।

Share this post

scroll to top