এনটিআরসিএ সুপারিশকৃত শিক্ষকদের কাছে অর্থ দাবি

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) কর্তৃক সুপারিশকৃত শিক্ষকদের কাছ থেকে অর্থ দাবি করা হচ্ছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। শুধু অর্থ দাবি নয়, তাদের নিয়োগেও বাধা দেয়া হচ্ছে। এনটিআরসিএ কর্তৃক নিবন্ধনধারী ও নিয়োগের জন্য সুপারিশকৃত প্রার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগ দিতে গেলে বিভিন্ন স্কুল ও কলেজ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে তাদের বলা হচ্ছে : পদ খালি নেই, পদটি এমপিওভুক্ত নয়, যোগদান করতে পারেন কিন্তু বেতন পাবেন না প্রভৃতি। এ বিষয়ে এনটিআরসিএর কাছে অনেক অভিযোগ এসেছে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এনটিআরসিএ গত ১০ ফেব্রুয়ারি একটি জরুরি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় : এনটিআরসিএ কর্তৃক সুপারিশকৃত শিক্ষকদের জন্য যোগদানের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান উন্নয়নের নামে অর্থ দাবিসহ নানা ধরনের হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে যা সম্পূর্ণ বিধিবহির্ভূত। এনটিআরসিএ কর্তৃক সুপারিশকৃত শিক্ষকদের নিয়োগের জন্য অর্থ দাবির কোনো সুযোগ নেই।

এতে আরো বলা হয়, ২০১৮ জনবল কাঠামো অনুযায়ী যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ শিক্ষক কর্মচারীর চাহিদা দিলে ওই পদে এনটিআরসিএ কর্তৃক মনোনীতদের নিয়োগ দিতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে প্রতিষ্ঠানপ্রধানের বেতনভাতা স্থগিত ও বাতিল করা হবে এবং পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সারা দেশে বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শূন্যপদ ও সৃষ্টপদের চাহিদার ভিত্তিতে এনটিআরসিএ জাতীয় মেধাতালিকার ভিত্তিতে গত ২৯ জানুয়ারি ৩৯ হাজার ৩১৭ জন শিক্ষকের নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে বিভিন্ন মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। তাদেরকে নির্বাচিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এক মাসের মধ্যে নিয়োগের জন্য নির্দেশ দেয়া হয় প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের।

কিন্তু অনেক সুপারিশকৃত শিক্ষক নিয়োগের জন্য গেলে তারা যে হয়রানির মুখোমুখি হন তাতে তারা হতাশায় ভেঙে পড়েছেন। কারো কাছ থেকে অর্থ দাবি করা হচ্ছে ডোনেশনের নামে। কাউকে বলা হচ্ছে নিয়োগ দেয়া যাবে না ২০১৮ নীতিমালার শর্ত পূরণ না করার কারণে। কাউকে বলা হচ্ছে নিয়োগ পাবেন, বেতন পাবেন না, কাউকে বলা হচ্ছে সামান্য কিছু টাকা পাবেন প্রতিষ্ঠান থেকে। আবার কাউকে বলা হচ্ছে পদ খালি নেই।

ভুক্তভোগীরা জানান, এনটিআরসিএর কাছে আবেদন করতে একবার হাজার হাজার টাকা খরচ করলাম। এখন আবার প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেও অর্থ দাবি করা হচ্ছে। তাহলে আমাদের লাভ কী হলো। হয়রানি তো আগের চেয়ে আরো বেশি বাড়ল। আর প্রতিষ্ঠানকেই যদি আবার টাকা দিতে হবে তাহলে এনটিআরসিএ থেকে আমাদের তো কোনো উপকার হলো না।

যশোর থেকে আশুতোষ মজুমদার হতাশা প্রকাশ করে বলেন, কী আর বলব ভাই। আমাদের জীবনে মনে হয় আর কিছু হবে না। এত কিছুর পর নিয়োগের জন্য সুপারিশ পেলাম কিন্তু নিয়োগের জন্য গেলে প্রতিষ্ঠান থেকে বলা হলো আমি নাকি ২০১৮ নীতিমালার শর্তে পড়ি না।

আশুতোষ জানান, আমি ৩৪টি কলেজে প্রভাষক কম্পিউটার অপারেশন পদে আবেদন করেছিলাম। এতে আমার ৬ হাজার ২৯০ টাকা খরচ হয়। ২০১৮ নীতিমালা জারির আগের শর্তানুযায়ী আমি ৬ মাসের কম্পিউটার কোর্সধারী। এখন বলা হচ্ছে ২০১৮ নীতিমালা অনুযায়ী ৬ মাস কোর্সধারীদের নিয়োগের নিয়ম নেই। কিন্তু সবচেয়ে দুর্ভাগ্য হলো আমি পরীক্ষা দিলাম এক নীতিমালা অনুযায়ী আর আমাদের নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হলো আরেক নীতিমালা।

নিয়োগের ক্ষেত্রে বাধাপ্রাপ্ত অনেকের সাথে কথা বললে তারা গভীর হতাশা প্রকাশ করেছেন। হয়রানির শিকার অনেক প্রার্থী বলেছেন, ভাই আমাদের আকুল আবেদনের কথা একটু নতুন শিক্ষামন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দেন আপনারা। তা নাহলে আমাদের জীবন মূল্যহীন হয়ে যাবে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top