1. kaium.hrd@gmail.com : ময়মনসিংহ লাইভ ডেস্ক : ময়মনসিংহ লাইভ ডেস্ক
ইসির বাহাস ও অরওয়েলের বচন
বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭:৫৫ পূর্বাহ্ন

ইসির বাহাস ও অরওয়েলের বচন

ময়মনসিংহ লাইভ কর্তৃক প্রকাশিত
  • আপডেট সময় : শনিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৮

অনেকেই ডিসেম্বর মাসে কক্সবাজার-বান্দরবান-রাঙ্গামাটি কিংবা সিলেটে বেড়াতে যান। খাগড়াছড়ি-কুয়াকাটা-শ্রীমঙ্গলেও কম লোক যান না। একে তো শীতকালের শুকনো মওসুম, তার ওপর ছেলেমেয়েদের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ কিংবা উইন্টার ভ্যাকেশন। বেড়ানোর উপযুক্ত টাইম বটে। এবার ঢাকা থেকে মানুষ দূরে যেতে চাচ্ছেন না। কারণ, দেশের পরিস্থিতি ভালো নয়। পার্লামেন্টের প্রত্যাশিত নির্বাচন নিয়ে যা চলছে, তা আবার না জানি কোন অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির জন্ম দেয়, সে কারণে বেড়ানোর এই ‘সুসময়’ও মনে হচ্ছে ‘অসময়’।

বড়জোর, যে যেখানে ভোটার- পছন্দের কোনো প্রার্থী থাকলে সেখানে ভোট দিতে যেতে পারেন। তা-ও নিজ এলাকা, অর্থাৎ নিজের মফস্বল শহর বা পৈতৃক গ্রামেই সাধারণত ভোটার হতে দেখা যায়। নানান শাকসবজি আর নতুন ফসলের এ সময়ে অনেকে গ্রামের বাড়িতে যান সপরিবারে। আত্মীয়-স্বজনের খোঁজখবর আর শীতের পিঠার স্বাদ নেয়া- দুটোই হয়ে যায় তখন। এ বছর ইলেকশন ফিভারের তাপে শীতের বাতাস গরম হলেও মানুষজন নিজ নিজ কর্মস্থল কিংবা শহুরে আবাস ছেড়ে দূর গ্রামে যেতে ভয় পাচ্ছেন। কারণ, কখন কী ঘটে, ঠিক নেই- এমন উদ্বেগ ও শঙ্কা। নির্বাচন যতই ঘনাচ্ছে, ততই বাড়ছে অনিশ্চয়তা, উৎকণ্ঠা ও ভীতি। নতুন বছর যাতে শান্তি ও কল্যাণ বয়ে আনে এ জাতির জন্য, এটাই আল্লাহর কাছে সবার প্রার্থনা।

গত বৃহস্পতিবারের পত্রিকায় একটি খবর, ইনাম আহমেদ চৌধুরী বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে। আরো কয়টি খবর- ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক আসনে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বাড়িতে গভীর রাতে ওসির বৈঠক (সরকার সমর্থক পত্রিকা খবরটা দিয়েছে), শেখ হাসিনার সরকারের সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর গাড়িতে হামলার প্রতিবাদে তার আমরণ অনশনজনিত অসুস্থতায় তাকে ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি, নাটোরে হামলায় বিএনপির মহিলা প্রার্থী আহত, নোয়াখালীতে গুলিবিদ্ধ বিএনপি প্রার্থী ও সুপ্রিম কোর্ট বারের নেতা খোকন কর্তৃক সিইসির কাছে এ ঘটনা বর্ণনা, কূটনীতিকদের কাছে বিরোধী দলের বক্তব্য: ইলেকশন ফিল্ড লেভেল হওয়া দূরের কথা, ফিল্ড নেই; বিএনপির প্রার্থী জেলে, দলের আরেক প্রার্থীর দাবি স্থানীয় ওসিকে প্রত্যাহারের, বিএনপি প্রার্থীসহ ৮৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট, সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা ও অর্থমন্ত্রী মরহুম কিবরিয়ার ছেলে তার বাবার স্বপ্ন পূরণে ধানের শীষে ভোট চান, ইত্যাদি।

সব খবরকে টেক্কা মেরেছে ‘ইলেশন কমিশনের বাহাস’। ইলেকশনের সিজনে দু’টি প্রতিদ্বন্দ্বী দল কিংবা দু’জন শক্তিশালী প্রার্থীর মাঝে বাহাস-বিতর্ক হয়ে থাকে। এটা কেবল স্বাভাবিক নয়, অনেক সময় অনিবার্য-অপরিহার্য হয়ে ওঠে। কিন্তু এই দেশে কমিশনো (তৎপরতা বা ভূমিকা পালন) চেয়ে অমিশন (নিষ্ক্রিয়তা/দায়িত্ব এড়ানো) অনেক বেশি বলে খোদ নির্বাচন কমিশনের ঢিলেমি, ভীরুতা, অযোগ্যতা কিংবা পক্ষপাতের দরুন গণতন্ত্র নির্বাসনে চলে যাচ্ছে কি না, সে প্রশ্ন দিন দিন বড় হচ্ছে।

এই পটভূমিতে ‘এবার একজন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) উল্লেখ করলেন, দেশে নির্বাচনের জন্য সমতল খেলার মাঠ নেই। তিনি ইতোমধ্যেই ভিন্ন মত, সাহস, দৃঢ়তা ও স্পষ্টবাদিতার জন্য বহুলালোচিত হয়ে উঠেছেন। রম্যলেখক, ছড়াকার ও কলামিস্ট এই ইসির অভিযোগ, খোদ সিইসি আঘাত হেনেছেন তার নিজের অস্তিত্বে। চাঞ্চল্যকর ও নজিরবিহীন, ‘আমার বক্তব্য’ শিরোনামের বিবৃতিতে তিনি বলেন, মাননীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাঙ্গামাটিতে বলেছেন, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই বলে আমি (মাহবুব তালুকদার) মিথ্যা কথা বলেছি। তার এ বক্তব্যের কঠোর প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এ কথা বলে তিনি একজন নির্বাচন কমিশনারের অস্তিত্বে আঘাত করেছেন।’ তালুকদার স্মরণ করিয়ে দেন, সিইসিসহ সব নির্বাচন কমিশনার সমান। তার শেষ কথা, ‘নিজেদের বিবেককে জিজ্ঞাসা করুন, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আছে কী নেই।’

বাংলাদেশে বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে মাহবুব তালুকদারের এমন বক্তব্য দেয়া ঝুঁকিপূর্ণ হলেও তিনি পিছপা হননি। সচেতন মহল মনে করেন, সুনীতির দুর্ভিক্ষের দিনে তিনি যে ‘ভালো বেশ বেশ’ বলার দোহার হননি, এই সাহসই তাকে স্মরণীয় করে রাখবে।

ডক্টরেটধারী আইজিপি বলেছেন, নির্বাচনের চমৎকার পরিবেশ বিরাজ করছে।’ এই পরিবেশটা যা-ই হোক, এটাকে তারা ‘চমৎকার’ বলা চমৎকার না হলেও স্বাভাবিক। তবে একই পত্রিকার একই পৃষ্ঠায়, সাংবিধানিক বিপুল ক্ষমতার অধিকারী নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবে সিইসির যে বক্তব্য, তা কেবল অস্বাভাবিক নয়, তাকে আরো বিতর্কিত এবং কমিশনকে আরো প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, ‘সবকিছু ঠিকভাবে চলছে এবং দেশে বইছে নির্বাচনের সুবাতাস। অনুকূল আবহাওয়া সৃষ্টি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব।’

তবে একজন নির্বাচন কমিশনার হিসেবে রফিকুল ইসলাম বলেছেন, শতভাগ লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালনের কথা মানবাধিকার কমিশনের। এর চেয়ারম্যান বর্তমান উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতেও বলেছেন, সংসদ নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার মতো ‘কিছু ঘটেনি’। আর খোদ একজন নির্বাচন কমিশনার হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব তালুকদার যা বলেছেন, তাতে ধরে নেয়া যায় যে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের শর্তগুলো এখনো পূরণ করা হয়নি।

আমরা নানা ধরনের বাহাসের সাথে পরিচিত। অতীতে তদানীন্তন বাংলাসহ উপমহাদেশের মুসলিম সমাজে মজহাবী- লা মজহাবী, শিয়া-সুন্নি, কিয়াম-লা কিয়াম প্রভৃতি বিষয়ে পক্ষ-বিপক্ষে বাহাস বা বিতর্ক হয়েছে। এখন ধর্মের গণ্ডিতে নয়, নির্বাচন কমিশনের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের কমিশনারদের মধ্যে বাহাসের খবর দিয়েছে পত্র-পত্রিকা।

তবে এতে যে, বাগ্মিতার পারদর্শিতা বাড়বে তা নয়। বরং এর কুতর্ক আমাদের দেশে গণতন্ত্রের দুর্দশা এবং নির্বাচনের অধোগতি প্রমাণ করছে। নির্বাচন কমিশন হওয়া উচিত জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। অথচ ক্ষমতাসীনদের কূটকৌশলের জের ধরে এটা জাতির বিভাজনই ফুটিয়ে তুলছে।

উঁচু নিচু ‘সমতল’ ও ভোটারের ভুয়া দরদি
নির্বাচনী প্রচারণা মোটের ওপর এখন তুঙ্গে। অনেক জায়গায় হামলা, হুমকি, ভাঙচুর, মামলা ও গ্রেফতার সত্ত্বেও বিরোধী দলের প্রার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে, সাধ্য মতো ক্যাম্পেইন চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচনে অংশ নেয়া দলগুলোর মধ্যে বড়-মাঝারি-ছোট নানান সাইজের আছে। কিছু প্রার্থী আছেন ‘স্বতন্ত্র’ পরিচয়ে। অবশ্য নানা কারণে নির্দলীয় প্রার্থীর সংখ্যা দিন দিন কমছে এবং দুই যুগ আগের তুলনায় এখন তা অনেক কম। কিছু প্রার্থী আছেন বড় দলের কোনো বিশেষ প্রার্থীর ‘ডামি’ হিসেবে।

তাদের পোলিং এজেন্টরা ভোটকেন্দ্রে সুযোগ পেলেই ‘স্পেশাল সার্ভিস’ দেয়ার আশা থাকে। এটা নাকি আজকালকার ইলেকশন স্ট্র্যাটেজিগুলোর একটি। কোথাও কোথাও দেখা যায়, বিশেষত ক্ষমতাসীন দলের পছন্দ না হলে কোনো দল বা প্রার্থীর পোস্টার রাতারাতি গায়েব হয়ে যায়। এমনকি তারা ময়দানে অবতীর্ণই হতে পারেন না। মিডিয়ার খবরে বলা হচ্ছে, বহু আসনে বিরোধীদলীয় জোটের প্রার্থীরা পর্যন্ত এলাকা ছাড়া তাদের নেতাকর্মীদের মতো।

অপরদিকে, সরকারের সার্বিক সহযোগিতায় ক্ষমতাসীন দল এবং তাদের মহাজোটের লোকজন নির্বিঘ্নে ও অবাধে মিটিং, মিছিল, জনসংযোগ, পোস্টারিং, লিফলেট বিলি, সমাজের বিভিন্ন অংশের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক, প্রভৃতি জোরেশোরে চালিয়ে যাচ্ছেন।

এমন বৈষম্যমূলক পরিস্থিতি দেখে বাংলা প্রবাদ বলতে হয়, ‘কারো পৌষ মাস; কারো সর্বনাশ’ (সত্যিই এখন পৌষ মাস)। হয়তো এই অবস্থা বিখ্যাত ইংরেজ লেখক জর্জ অরওয়েলের একটি বিখ্যাত বচনের সর্বশেষ বাস্তবায়ন। ‘অ্যানিমেল ফার্ম’ এবং ‘১৯৮৪’ শীর্ষক আলোড়ন সৃষ্টিকারী গ্রন্থের এই প্রতিবাদী প্রণেতা প্রায় সাত দশক আগে ব্যঙ্গ করে বলেছিলেন, All are equal. But some are more equal than others (সবাই সমান। তবে কিছু লোক অন্যদের চেয়ে বেশি সমান)। কথা হলো, ‘সমান’ তো সমানই; এর আবার কম-বেশি কী? বাস্তবে অতীতে সাম্যবাদের প্রবক্তা দেশগুলোতে এই বেশি আর কম ‘সমান’ দেখা গেছে। বর্তমান বাংলাদেশে সংসদ নির্বাচনের মাঠও তেমন অদ্ভুত ‘সমতল’ বানানো হয়েছে।

এবারের নির্বাচনে তরুণরা বড় ফ্যাক্টর হবে বলে অনেকের অভিমত। নতুন ভোটার হয়েছে এই নবীন প্রজন্মের বিরাট অংশ। তাদের প্রত্যাশাকে তাই গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে। অবশ্য রাজনীতির বিদ্যমান চেহারা চরিত্রে হতাশ ও অনীহ তরুণ-তরুণীও কম নয়। নমুনাস্বরূপ বলা যায়, সে ভার্সিটির লেখাপড়া অসমাপ্ত রেখেই বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে। সে ভোটার হয়নি বলেও জানিয়েছে।

এদিকে, ভোটের দিনের পরিস্থিতি নিয়েও মানুষের ভীতি কম নয়। তাই এখন একে অন্যকে বলতে শোনা যায়, ‘নিজের ভোটটা নিজে কোনোমতে দিতে পারাই যথেষ্ট।’ কারণ, ‘কষ্ট করে কেন্দ্রে কেন যাবেন? আপনার ভোটটা দেয়ার জন্য তো আমরাই আছি।’ এটা বলার মতো দলীয় কর্মী কম নেই।

বাংলাদেশকে অনেকেই বলে থাকেন, ‘সব সম্ভবের দেশ।’ আবার কোনো কোনো কবি ক্ষোভে-হতাশায় বলেছেন, ‘সব কিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে।’ আমরা তা বলে, আগে থেকেই হাল ছেড়ে, পাল নামিয়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারি না। তবে গ্রিক বীর আলেকজান্ডারের ‘সেলুকাস! কী বিচিত্র এই দেশ’ কথাটা অনেকে এ ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করতে চান বাংলাদেশের ব্যাপারে।

তারা বলছেন, যে দেশে প্রায় সবাই ক্ষমতার পাগল- ঘরের বউ থেকে রাস্তার পাহারাদার ও বাসের ড্রাইভার হয়ে অফিসের বস পর্যন্ত- সেখানে আমাদের নির্বাচন কমিশন (ইসি) নিজের সাংবিধানিক ক্ষমতাও প্রয়োগ করে না। এটা অসামর্থ্য, সাহসহীনতা, নাকি ইচ্ছার অভাব, তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও ব্যাপারটা দেশ ও জাতির জন্য বিরাট ক্ষতির কারণ, এতে সন্দেহ নেই।

আরেকটি বিষয় হলো, এ দেশে দিন দিন স্বার্থপরতা ও সুবিধাবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিনা স্বার্থে সাধারণত একে অন্যের কাজ করে দিতে চায় না। অতীতে দলের নেতারা কিংবা ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালী আত্মীয়রা আপনজনদের কাজ করে দিতেন ফ্রি। তাদের জন্য তদবির বা সুপারিশের বিনিময়ে টাকা-পয়সা নেয়াকে নিজেদের জন্য লজ্জা ও অসম্মানের ব্যাপার মনে করা হতো।

এখন ওসবের বালাই না থাকায়, ক্ষমতাশালী ব্যক্তি ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের কিংবা নিজ দলের নেতাও টাকা না পেলে কর্মীদের কাজ করে দেন না। এমন একটা দেশে অনেক এলাকায় রাজনৈতিক কর্মী ক্যাডাররা কৃত্রিম দরদে বিগলিত হয়ে যদি বলে, ‘চাচা, আপনাকে কষ্ট করে ভোট দিতে যেতে হবে না। আমরা আপনার পক্ষ থেকে ঝামেলাটা সারিয়ে দেবো।’ তখন স্বস্তি নয় সন্দেহ, আনন্দ নয়, আফসোসই হবে একজন সচেতন ও গণতন্ত্রপ্রেমী নাগরিকের অনুভূতি।

ছোট দল, বড় কথা
এখন পথেঘাটে তো বটেই মসজিদের দুয়ারেও প্রচারপত্র বিলি করা হচ্ছে। দেয়ালে দেয়ালে লাগানো পোস্টারে সুশ্রী সুদর্শন প্রার্থীরা স্মিতহাস্যে নিজেদের ‘পরিচ্ছন্ন’ নেতা দাবি করে জনগণকে নয়, দলীয় প্রধানকে তার আসন ‘উপহার দেয়া’র অঙ্গীকার করছেন। লিফলেটে নানান ওয়াদা ও আশ্বাসের ঝুলঝুড়ি।
সম্প্রতি এক জুমাবারে মসজিদের গেটে একটি ছোট দলের লিফলেট হাতে এলো।

এর কথাগুলো দৃশ্যত গুরুত্ববহ বলে হয়তো কেউ কেউ বলবেন, ‘ছোট মুখে বড় কথা।’ তবে মতপ্রকাশের অধিকার মানতে হয় গণতন্ত্র চাইলে। দলটি বলছে, ‘পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির পরিবর্তনই কাম্য। তবে ব্যক্তি নয়, নীতির পরিবর্তন চাই। নীতিই নেতাকে নিয়ন্ত্রণ করবে এবং এ নীতি হবে সব ‘নীতির রাজা।’ অন্য দিকে, বাংলাদেশে এখন দেশের চেয়ে দল আর নীতির চেয়ে নেতা বড়।

আলোচ্য দলটি বলেছে, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন্য এক শতাংশ ভোটারের সম্মতি জ্ঞাপক স্বাক্ষর সংগ্রহ করার দরকার নেই।’ উল্লেখ্য, এ শর্ত থাকায় এবার অনেক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে গেছে। কারণ তাদের ভোটারদের অনেকের স্বাক্ষর ভুয়া বলে প্রমাণিত। আসলে এ কাজটা সবার জন্য সহজ নয়। যা হোক, দলটির একটি কথা হেঁয়ালি মনে হতে পারে।

তা হলো, দাবি করা হয়েছে- এ দলের দফাগুলো কার্যকর করা হলে কাউকে জোর করে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে না এবং দলীয় আদর্শেই সরে যাবেন। এ নীতির কারণেই ওবামা আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হতে পেরেছিলেন।’

আরেকটি দলের লিফলেট হাতে এসেছে গত শুক্রবার। এ দলের প্রার্থীরও জেতার সম্ভাবনা নেই বলা চলে। তারা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ভোটের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেছেন, ভালো প্রার্থীকে ভোট দেয়া সবার দায়িত্ব ও অধিকার। তারা বলেছেন, ‘ভোট হলো একটি আমানত। ভোট মানে, সাক্ষ্যদান করা, সমর্থন জ্ঞাপন অথবা সুপারিশ করে কাউকে প্রতিনিধি বানানো।’

কারো ভোটে নির্বাচিত হয়ে ভালো কাজ করলে এর সওয়াব ভোটারও পাওয়ার সুসংবাদের সাথে হুশিয়ার করা হয়েছে, আপনার ভোটে নির্বাচিত হয়ে কেউ পাপাচার, খেয়ানত, দুর্নীতি, লুণ্ঠন ও জুলুম করলে আপনিও ‘সমান অপরাধী’ হবেন।

পাদটীকা : এবার সংসদ নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন ক্রিকেটার, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী প্রমুখ। তাদের নির্বাচনী প্রচারণার ভাষা রসিকজনের কল্পনায় কেমন, তার নমুনা : (ক) ক্রিকেটদর্শক : ক্রিকেটার বলে আপনার সুবিধাই হয়েছে। ক্রিকেটার : হ্যাঁ, আমাদের হাতে ব্যাট দেখে প্রতিপক্ষ ভয় পেয়ে যাবে। (খ) ফ্যান : আপনার নির্বাচনী ওয়াদা শুনে আমি মুগ্ধ। কে বলবে আপনি নেতা হিসেবে নতুন। অভিনেতা : রাজনীতিতে নতুন হতে পারি। তবে অভিনয়ে তো আমি অনেক পুরনো। (গ) গানের ভক্ত : আপনার কণ্ঠে গান শুনে ভোটাররা আপনার কাছে ছুটে এসেছে। কণ্ঠশিল্পী : এ জন্যই বলা হয়, মেশিনগানের চেয়েও গান বেশি শক্তিশালী।

পুনশ্চ : ছড়াকার ব্রত রায় লিখেছেন ‘ভোট চোর’। ‘এ ঘটনাটা কোথায় ঘটেছে ভুলেই গিয়েছি আজ/কোনো এক ভোটে জালভোট দেয়া আবুলের ছিল কাজ।/সারাদিন ধরে জাল ভোট দিয়ে কামিয়ে প্রচুর টাকা,/আবুল ফিরলো নিজের কেন্দ্রে। দেখলো কেন্দ্র ফাঁকা।/তার ভোটখানা বহু পূর্বেই এসে দিয়ে গেছে কেউ,/আবুলের বুকে দুঃখের নদী পাড় ভাঙে তার ঢেউ;/মনের কষ্টে আবুল লিখলো ফেসবুকে বড় করে,/‘সোনার দেশটা ভরিয়া গিয়াছে বাটপাড়ে আর চোরে’/ যদি, আবুলের কামানো টাকাগুলোর নোট হয় জাল, তা হলে তো সোনায় সোহাগা। ভোট চুরির ডাবল শাস্তি যাকে বলে।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ
Mymensingh-IT-Park-Advert
Advert-370
Advert mymensingh live
©MymensinghLive
প্রযুক্তি সহায়তা: ময়মনসিংহ আইটি পার্ক