আলোচনায় বসছে পাকিস্তান-ভারত

এক মাসের চরম উত্তেজনার পর আলোচনায় বসতে যাচ্ছে পাকিস্তান ও ভারত। কাশ্মিরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলা, তার জেরে দুই দেশে বিমান হামলা, পাইলট আটক-মুক্তি ইত্যাদি ঘটনার পর প্রথমবারের মতো বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন দুই দেশের কর্মকর্তারা। তবে সাম্প্রতিক এই ইস্যুতে নয়, বরং কর্তারপুর সাহিব গুরদুয়ারা ইস্যুতে কথা বলবেন তারা।

আজ বৃহস্পতিবারই অমৃতসরের কাছে আটারিতে বৈঠকে মিলিত হবেন দুই দেশের কর্মকর্তারা। তারা ওই গুরদুয়ারায় ভারতীয়দের যাতায়াতের বিষয়গুলো চূড়ান্ত করবেন। এক্ষেত্রে ভারত ভিসা ফ্রি যাতায়াতের সুযোগ দেয়ার জন্য পাকিস্তানের কাছে অনুরোধ জানাবে।

দুই দেশের স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এ বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন। এ বৈঠকের ব্যাপারে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

মাসব্যাপী উত্তেজনার মধ্যেই ওই গুরদুয়ারায় যাতায়াতের ব্যাপারে আগের বৈঠকগুলোতে রয়ে যাওয়া কিছু বিষয় সমন্বয় করতেই এ বৈঠকে বসছে প্রতিবেশী দুই দেশ। মূলত ধর্মগুরু গুরুনানকের ৫৫০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শিখদের ধর্মীয় ও আবেগের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েই এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

ভারত অধিকৃত কাশ্মিরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলার ঠিক এ মাস পর বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি চালানো ওই হামলায় ভারতের আধাসামরিক বাহিনী সিআরপিএফের ৪৪ সদস্য নিহত হয়েছিল।

গত ৭০ বছর ধরে শিখরা পাকিস্তানের এ অঞ্চলের সহজ প্রবেশাধিকার চেয়ে আসছিল। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে ভারত ও পাকিস্তানের সরকার তাদের এ তীর্থযাত্রা সহজ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। ভারত অংশে ইতোমধ্যেই টার্মিনাল তৈরি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সাধারণ দিনে পাঁচ হাজার এবং কোনো উৎসবের সময় আরো দশ হাজার তীর্থযাত্রীকে সেবা প্রদান করতে পারবে।

ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং এক্ষেত্রে তীর্থযাত্রীদের জন্য পাসপোর্ট ও ভিসামুক্ত ‘খুলে দর্শন’-এর অধিকার দাবি করেন।

কর্তারপুর সাহিব গুরদুয়ারাটি পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের ন্যারোয়াল জেলায় অবস্থিত। এটি সীমান্ত থেকে সাড়ে চার মাইল ভিতরে অবস্থিত। নিজের জীবনের শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে এ জায়গাটিকেই বেছে নিয়েছিলেন গুরুনানক। সেখানে তিনি ১৮ বছর অতিবাহিত করেন। ফলে শিখ ধর্মাবলম্বীদের কাছে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও মহিমান্বিত একটি স্থান। প্রতি বছর ভারত-পাকিস্তান দু’দেশেরই হাজারো শিখ পুণ্যার্থী দরবার সাহিব কর্তারপুরে প্রার্থনা করতে যান।

সেই গুরুনানকের ৫৫০তম জন্মবার্ষিকীকে সামনে রেখে শিখদের যাতায়াত সহজ করতে দু’দেশ সীমান্তে করিডর গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সিদ্ধান্তে বলা হয়েছিল, ভারতে পাঞ্জাবের গুরদাসপুর জেলার ডেরা বাবা নানক থেকে আন্তর্জাতিক সীমান্ত পর্যন্ত রাস্তা তৈরি করা হবে। অন্যদিকে পাকিস্তানের অংশে করিডোর হবে গুরুদুয়ারা দরবার সাহিব কর্তারপুর থেকে।

১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান ভাগ হয়ে যাওয়ার পর থেকে ভারতীয়দের ওই উপাসনাস্থলে যাওয়া সীমিত হয়ে যায়। ভিসা পেতেও তাদেরকে অনেক কষ্ট করতে হত। এখন নতুন রাস্তা নির্মাণ হয়ে গেলে সারা বছরই পুণ্যার্থীরা খুব সহজে কর্তারপুর যেতে পারবেন। পুণ্যার্থীদের সুবিধার জন্য সব ধরনের আধুনিক ব্যবস্থাই করিডরে থাকবে বলে জানিয়েছে ভারত। তারা বলছে, কর্তারপুর গমনেচ্ছু পূণ্যার্থীদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মতই সুযোগ সুবিধা দেয়া হবে। অন্যদিকে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এ করিডর নির্মাণের সিদ্ধান্তকে দু’দেশের জন্যই শান্তি প্রচেষ্টায় একটি জয় বলে বর্ণনা করা হয়েছে। সূত্র : সিয়াসাত ডেইলি

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top