আ’লীগ নেতার হাতে মাদরাসা ছাত্রীর শ্লীলতাহানী!

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় আমড়াতলা দারুল উলুম হোসাইনিয়া দাখিল মাদরাসার শিক্ষক ফিরোজের বিরুদ্ধে মাদরাসা ছাত্রীদের শ্লীলতাহানীর অভিযোগ পাওয়া পাওয়া গেছে। এছাড়াও অভিযুক্ত শিক্ষক ফিরোজ ১৯৯৪ সাল থেকে মাদরাসায় ক্লাস না নিয়ে কেবল হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে বেতন ভাতা তুলে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। পাশাপাশি অভিযুক্ত শিক্ষক ফিরোজ একাধিকবার মাদকসহ পুলিশের হাতে আটক হয়েছে বলে জানা যায়।

জানা গেছে, দুর্নীতি, অনিয়ম, মাদক ও যৌন হয়রানির মতো অপরাধে জড়িত থাকলেও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকায় প্রতিবারই আইনের ফাঁক-ফোঁকরে বের হয়ে আসছেন অভিযুক্ত ফিরোজ। মাদরাসায় ছাত্রীদের যৌন হয়রানিসহ বিভিন্ন অনিয়মের প্রতিবাদ করলে ছাত্র-ছাত্রীদের সামনেই মাদরাসা সুপারসহ শিক্ষকদের শারীরিক ভাবে লাঞ্চিত করে ফিরোজ। তাছাড়া তার ভাই মোস্তফা জামান জহিরও একইভাবে মাদরাসায় কোনো ধরনের একাডেমিক কার্যক্রমে অংশ না নিয়েই বেতন তুলছেন বলে জানা গেছে।

অভিযুক্ত মোস্তফা জামান জহির উপজেলার কালমেঘা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এবং আরেক অভিযুক্ত শিক্ষক ফিরোজ কালমেঘা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য। তারা দুজনই আমড়াতলা গ্রামের মৃত চান মিয়া হাওলাদারের ছেলে।

সরেজমিনে মাদরাসায় গিয়ে শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অভিযুক্ত ফিরোজ ইবতেদায়ী বিভাগের শিক্ষক। তিনি ১৯৯৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ৮ তারিখ ওই মাদরাসায় যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি প্রতিমাসে ১০ হাজার ৬শ ৮০টাকা বেতন তোলেন। সেই হিসেবে তিনি এখন পর্যন্ত অবৈধ ভাবে প্রায় ৩০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

মাদরাসার শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা অভিযোগ করেন, ফিরোজ প্রতিদিন সকালে শরীরে তোয়ালে জড়িয়ে মাদরাসায় এসে ক্লাস শুরু হওয়ার আগেই হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে চলে যান। আবার অনেক ছাত্র-ছাত্রী জানান- তাদের মাদরাসায় ফিরোজ নামের কোনো শিক্ষক আছে; তা তারা জানেন না।

নবম শেনীর জহিরুল ইসলাম, শারমিন, মারিয়া, অস্টম শ্রেনীর হাসান, ষষ্ঠ শ্রেনীর আয়শা আক্তার ও কারিমা বলেন, আমরা এই মাদরাসায় ভর্তি হয়েছি ৭ থেকে ৮ বছর আগে। কিন্তু ফিরোজ যে আমাদের স্যার তা আমারা আপনাদের কাছে শুনেছি। মাঝে মাঝে দেখি সে মাদরাসায় আসে এবং হুজুরদের (শিক্ষক) সাথে ঝগড়া করে চলে যায়। তাকে কখনো আমাদের ক্লাস নিতে দেখিনি। সে যদি মাদরাসার শিক্ষক হত তবে আমরা জানতাম।

এদিকে অভিযুক্ত শিক্ষক ফিরোজের হাতে শ্লীলতাহানীর স্বীকার ছাত্রীরা জানান, বিভিন্ন সময় শিক্ষক ফিরোজ তাদেরকে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে আসছে। তার ওই প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় সে তাদের অনেকেরই জোর করে শ্লীলতাহানী ঘটিয়েছে। পরে এই ঘটনা কাউকে না বলতে আমাদের নানা রকমের হুমকি-ধামকি দেন তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষক বলেন, মাদরাসার সকলেই জানে ফিরোজ একটি খারাপ প্রকৃতির লোক। আমরা চাই মাদরাসার ছাত্রীদের লাঞ্ছিত করার ঘটনায় তার বিচার হোক।

তারা আরো বলেন, ফিরোজের বিরুদ্ধে মাদক, ধর্ষণসহ একাধিক অভিযোগ আছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকায় তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। ফিরোজ মাদরাসায় ক্লাস না করে গত ৯ বছর ধরে জোর করে বেতন তুলে নিয়ে যায়। আর তার এই কাজে সহযোগিতা না করলে মাদরাসার সুপারসহ সকল শিক্ষকদের শারীরিক ভাবেও লাঞ্ছিত করে থাকে সে।

এ বিষয়ে আমড়াতলা দাখিল মাদরাসার সুপারিন্টেনডেন্ট মাওলানা ফারুক হোসেন বলেন, ফিরোজ সরকারি দলের লোক হওয়ায় মাদরাসায় বেশী প্রভাব খাটায়। তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে চায় না। ফিরোজের বিরুদ্ধে তার মাদরাসার ছাত্রীদের শ্লীলতাহানীর কথা শুনেছি। এই ঘটনায় ওই ছাত্রীর অবিভাবকও মৌখিক অভিযোগ করেছেন।

তিনি আরো বলেন, তাছাড়া ফিরোজ বছরে একদিনও মাদরাসায় ক্লাস নেন না। প্রতিদিন সকালে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে চলেন যান। আমি এই ঘটনার প্রতিবাদ করলে আমাকে লাঞ্ছিত করে ফিরোজ।

তিনি আরো জানান, ফিরাজ একাধিকবার মাদকসহ পুলিশের কাছে আটক হয়েছে এবং জেলও খেটেছে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ফিরোজ বলেন, আমার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ মিথ্যা। আমি কোনো মেয়েকে শ্লীলতাহানী করিনি। স্কুলে অনুপস্থিত থেকেও স্বাক্ষর দেয়ার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি একটা মামলার কারণে আড়াই মাস ধরে মাদরাসায় আসতে পারিনি, তাই হয়ত এ কথা বলেছে।

পাথরঘাটা উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মোঃ মনিরুল ইসলাম অভিযোগর সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এরকম অভিযোগ আমার কাছেও আছে। তারা দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় ভাই মোস্তফা জামান জহির মাঝে মাঝে মাদরাসায় ক্লাস নেন। কিন্তু ফিরোজ আদৌ কখনও ক্লাস নেন না। আমরা দুই-একদিনের মধ্যেই ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top