অসুস্থ খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি রিজভীর আহ্বান

দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া প্রচণ্ড অসুস্থ জানিয়ে অবিলম্বে তাকে মুক্তি দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দাবি জানিয়েছে বিএনপি। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ দাবি জানিয়ে বলেন, বেগম জিয়া প্রচণ্ড অসুস্থ। চোখেও প্রচণ্ড ব্যথা, তার পা ফুলে গেছে। অথচ তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না।

রিজভী বলেন, কিছুদিন ধরে নাজিমউদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কারাগারের নিচ তলায় ছোট একটি কক্ষে অস্থায়ী আদালত সাজিয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে সেখানে টেনে এনে জোর করে বিভিন্ন ভুয়া মামলায় শুনানি করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী উদ্দেশে আমার আহবান- এবার ক্ষান্ত দেন। একজন গুরুতর অসুস্থ বয়স্ক নেত্রীর ওপর আর জুলুম করবেন না। এবার মুক্তি দিন।

আজ বুধবার সকালে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন।

দেশকে অন্ধকার যুগের দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে মন্তব্য করে এ সময় রিজভী আরো বলেন, একতরফা নির্বাচন করার জন্য বিরোধী কন্ঠকে স্তব্ধ করতে বিগত সময় ধরে সরকার একের পর এক তৈরী করেছে দাসত্ব আইন। এই দাসত্বের আইনগুলো প্রণয়ন করা হয়েছে শুধু স্বাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে নির্মূল করার জন্য।

বেগম খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে যেন ‘লুকোচুরি’ খেলা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা সাজানো মামলায় সাজা দেয়া, প্রশাসন, বিচার, নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নেয়া এবং ৩০ ডিসেম্বর ভুয়া ভোটের নির্বাচন অনুষ্ঠান একই সূত্রে গাঁথা।

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, দেশনেত্রী এক মামলায় জামিন নিলে অন্য আরেকটি মামলায় জামিন বাতিল করা হয়েছে, হাইকোর্ট জামিন দিলে আপিল বিভাগ আবার জামিন স্থগিত করেছে, পরে আপিল বিভাগ জামিন দিলে নি¤œ আদালত আরেকটি মামলায় জামিন আটকে দিয়েছে, এমনি করে পার হয়ে গেছে একটি বছর। যেসব মামলায় অন্যরা জামিনে রয়েছেন সেখানে বেগম খালেদা জিয়াকে জামিন দেয়া হচ্ছে না। এমনকি প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে বেগম জিয়াকে চিকিৎসা সেবা পর্যন্ত দিতে সুযোগ দিচ্ছে না সরকার। উচ্চ আদালতের নির্দেশে বেগম জিয়াকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও সম্পূর্ণ চিকিৎসা না দিয়ে তাকে আবার কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে সরকারের নির্দেশে।

তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় ধরে রাখতে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের বহিঃপ্রকাশ বলেই প্রতিয়মান হয়েছে। এই প্রক্রিয়াটি মঞ্চস্থ করতে সম্পূর্ণ দলীয়করণের মাধ্যমে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে সরকার। দেশের সাবেক প্রধান বিচারপতিকে কিভাবে কারা দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছে তা কি দেশের মানুষকে ভোলানো সম্ভব হয়েছে?

রিজভী বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে একজন সম্মানিত বয়স্কা জনপ্রিয় নেত্রীকে শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় জ্বলে-পুড়ে এমনভাবে সাজানো মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়ার দেয়ার কোনো দৃষ্টান্ত পৃথিবীতে নেই। বেগম খালেদা জিয়ার অপরাধ মাত্র একটাই-সেটা হলো জনগণের মাধ্য তার অপরিসীম ও অভাবনীয় জনপ্রিয়তা। এই অবৈধ সরকার খালেদা জিয়াকে যে মিথ্যা মামলায় একটি বছর সম্পূর্ণ জবরদস্তি করে জেলে আটকে রেখেছে তাতে তিনি জামিন পেয়েছেন। তারপরও হরেক কিসিমের টালবাহানা করে তাকে কারাগার থেকে বের হতে দিচ্ছে না।

তিনি বলেন, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে দুইটি মিথ্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে বেগম খালেদা জিয়াকে। মামলার দুটির মধ্যে একটি মামলায় হাইকোর্ট গত ২৭ জানুয়ারি দেশনেত্রীকে স্থায়ী জামিন দিয়েছেন। নিম্ন আদালতে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এ জামিন মঞ্জুর করা হয়। অপর মামলায় জামিন মঞ্জুর বা নামঞ্জুরের বিষয়টি ঝুলিয়ে রেখে বিলম্বিত করা হয়েছে। সেই একই ঘটনার অপর মিথ্যা মামলায় গত সোমবার বেগম খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন কুমিল্লার আদালত। মামলার অভিযোগপত্র গঠনের জন্য আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেছেন আদালত। বিস্ময়ের ব্যাপার হলো এই মামলায় ৭৭ আসামির মধ্যে ইতোমধ্যে ৩ জন মারা গেছেন। ৫ জনকে চার্জশিট থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। বাকি ৬৯ জনের সবাই জামিনে আছেন শুধুু দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ছাড়া।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘সংসদ নির্বাচনের মতো সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনও সুষ্ঠু হবে’ সিইসির এই বক্তব্য দেশ থেকে নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার গভীর নীলনকশা। একাদশ জাতীয় সংসদের ভোট ডাকাতির নির্বাচন দেশে-বিদেশে কোথাও গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। নির্বাচনের আগের রাতেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যালট বাক্স ভর্তি করে রেখেছেন, ভোটের দিন ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে দেয়া হয়নি, বিরোধী দলের প্রার্থী ও সমর্থকদের ওপর হামলা করা হয়েছে, এজেন্টদের ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হয়নি, বিএনপিসহ বিরোধী দলের লাখ লাখ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবী মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে, হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সারাদেশের কারাগারগুলোতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। তারপরও ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগের রাতেই নির্বাচন সম্পন্ন করে এখন একই ধরণের নির্বাচন আগামীতেও হবে বলে সিইসি যে বক্তব্য রেখেছেন তা জাতির সঙ্গে আবারো একটি প্রতারণা করারই ইঙ্গিত দিলেন। মহাভোট ডাকাতির আয়োজক প্রধান নির্বাচন কমিশনার পুনরায় একইভাবে উপজেলা ও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে একজন নিষ্ঠুর ভাঁড়ে পরিণত হয়েছেন।

দলের কারাবন্দি নেতাদের অবিলম্বে মুক্তি দাবি করেন রিজভী। এসময় কেন্দ্রীয় নেতা গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী, খায়রুল কবির খোকন, অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ^াস, হাবিব উন নবী খান সোহেল, লায়ন আসলাম চৌধুরী, ফজলুল হক মিলন, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, মীর সরফত আলী সপু, সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, শহিদুল ইসলাম বাবুল, একরামুল হক বিপ্লব, মামুনুর রশিদ মামুন, শেখ মোহাম্মাদ শামীম, শেরপুর জেলার সেক্রেটারি হযরত আলী, চট্টগ্রাম মহনগরীর সেক্রেটারি মো: আবুল হাশেম বকর, ধানের শীষের প্রার্থী মিয়া নুর উদ্দিন অপু, মনোয়ার হোসেন সহ দেশব্যাপী হাজার হাজার বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নি:শর্ত মুক্তি দাবি করেন রিজভী।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top